E-Paper

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে

অবশ্য, প্রেসিডেন্ট এর্ডোয়ানের শাসনকালে রাজনৈতিক বিরোধী দলের উপরে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন তুরস্কে নতুন কথা নয়।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৪

Sourced by the ABP

কেবল অগ্নিগর্ভ নয়, অগ্নিদগ্ধ— তুরস্ক দেশটি। সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু-র গ্রেফতারির প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্ত সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের আগুন ছেয়ে দিয়েছে গোটা দেশটিকে। প্রশাসন ইতিমধ্যেই ১৫০০ মানুষকে আটক করেছে। প্রেসিডেন্ট তাইপ এর্ডোয়ান আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, জঙ্গিপনা কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। এ দিকে, গণআন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ সংস্থারগুলির পণ্য বয়কট করার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা।

অবশ্য, প্রেসিডেন্ট এর্ডোয়ানের শাসনকালে রাজনৈতিক বিরোধী দলের উপরে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন তুরস্কে নতুন কথা নয়। ২০০৩ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসে এবং পরে সংশোধিত সংবিধানের অধীনে প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হওয়ার পরে তিনি এবং তাঁর দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি (একেপি) ভিন্নমতের প্রতি খুব কমই সহনশীলতা দেখিয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট, দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং ব্যাপক দুর্নীতিতে জর্জরিত এই রাষ্ট্রে বিবিধ গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে, সংসদের ক্ষমতা হ্রাস করে, বিচার বিভাগকে করায়ত্ত রেখে ও নির্বাচনী কারচুপির মাধ্যমে এর্ডোয়ান তাঁর শাসনব্যবস্থাকে স্বৈরাচারে পরিণত করেছেন। ফলে, তীব্র মূল্যস্ফীতি এবং পতনশীল লিরা-র মাঝে এর্ডোয়ানের জনপ্রিয়তা এক দিকে যেমন হ্রাস পেয়েছে, তেমনই তুরস্কে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র স্থাপন-সহ দেশের অর্থনীতির হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতির জেরে সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছেন একরেম ইমামোগলু। ২০১৯ সালে ইস্তানবুলের মেয়র পদ জেতার পরে তিনি তাঁর দল রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি (সিএইচপি)-কে জাতীয় স্তরে পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করেছেন। গত বছর স্থানীয় নির্বাচনে তাঁর দল দুর্দান্ত ফল করে, যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় একেপি-র। ২০২৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সিএইচপি ইমামোগলু-কেই প্রার্থী করবে বলে ঠিক করে। তাঁর গ্রেফতারির আগের দিন জালিয়াতির অজুহাতে ইমামোগলু-র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বাতিল করে দেয় ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন লড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্তই হল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকা। এমতাবস্থায় তাঁর গ্রেফতারিকে রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন অনেকে।

যদিও সাংবিধানিক মেয়াদের সীমা এর্ডোয়ানকে বাধা দিচ্ছে ২০২৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন লড়ার ক্ষেত্রে। আশঙ্কা, হয় তিনি সংবিধানে বদল আনবেন, বা আগেভাগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। বিশ্ব রাজনীতি এখন ক্রমশ ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন এবং বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু-র মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের দ্বারা চালিত হওয়ায় এর্ডোয়ানের স্বৈরাচারী উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে তেমন কোনও বাধা নেই বললেই চলে। তবে, ইমামোগলু-র গ্রেফতারের জেরে দেশজোড়া স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন শেষ পর্যন্ত তাঁর সব অঙ্ক উল্টে দিতে পারে। ভুললে চলবে না, জনসাধারণের বৈধ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর প্রতিক্রিয়ার জেরেই সিরিয়ায় পতন ঘটেছিল তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাশার আল-আসাদ’এর। সময় এসেছে, শত্রুর থেকে শিক্ষা নেওয়ার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Turkey

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy