E-Paper

পট-পরিবর্তন?

ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি, রাশিয়ায় অখণ্ডতা এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইছে ইউক্রেন। দ্রুত এর ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধাঙ্গনে হাওয়া কোন দিকে বইছে? সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার মাটিতে ঢুকে আক্রমণ চালিয়েছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। এ মাসের গোড়ায় হামলা চালিয়ে রাশিয়ার পশ্চিমে কুর্স্ক অঞ্চলের প্রায় ১০০০ বর্গকিলোমিটারের এলাকা দখল করার দাবি করেছে ইউক্রেন সেনা। অন্য দিকে, প্রাথমিক স্তরে ক্রেমলিন যে ভাবে হামলার প্রত্যুত্তর দিয়েছে তাতে স্পষ্ট ছিল যে, ইউক্রেনের এই আক্রমণ তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এই হামলাকে বড় মাপের সাফল্য বলে প্রচারে নেমেছে ইউক্রেন এবং আমেরিকা-সহ পশ্চিমের একাধিক দেশ। কুর্স্ক-এর সামরিক বিপর্যয় কার্যত মেনে নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি, রাশিয়ায় অখণ্ডতা এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাইছে ইউক্রেন। দ্রুত এর ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

লক্ষণীয়, ইজ়রায়েল কর্তৃক ইরানের মাটিতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে-র হত্যার সঙ্গে রাশিয়ার সাম্প্রতিক বিপত্তির সাযুজ্য রয়েছে এই সূত্রে যে, ইরানের মতো এ ক্ষেত্রেও উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগের দুর্বলতা। সীমান্তে সামরিক বাহিনীর অধিকাংশই ছিল বাধ্যতামূলক ভাবে সেনায় নিযুক্ত ব্যক্তি, যাঁদের কাছে ছিল না উপযুক্ত অস্ত্রশস্ত্র। ফলে ইউক্রেনের অতর্কিত হামলায় হয় তারা পালিয়েছে, নয়তো শত্রুপক্ষের হাতে আটক হয়েছে। পাশাপাশি যুদ্ধের শুরু থেকে ‘লাল’ ফৌজের অসীম ক্ষমতা এবং ‘স্ট্রংম্যান’ সুলভ যে ভাবমূর্তি বজায় রেখে এসেছিলেন পুতিন, তা কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছে। অন্য দিকে, জ়েলেনস্কি-র সেনার ক্ষেত্রেও এই সাফল্য প্রয়োজন ছিল, যে-হেতু গত আড়াই বছরে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে তেমন কোনও লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে পারেনি তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ়েলেনস্কি সম্ভবত এই প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা করেছিলেন আমেরিকার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে। তিনি বিলক্ষণ জানেন নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প জিতলে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে তাঁদের পক্ষে। পুতিনের প্রশংসার পাশাপাশি ইউক্রেনকে সব প্রকারের সহায়তা বন্ধ করার বিষয়ে তাঁর মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। তবে আপাতত সেই চিন্তা থেকে কিছুটা মুক্ত জ়েলেনস্কি, যে-হেতু বাইডেন প্রশাসন ইতিমধ্যেই ১২৫ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার কথা ঘোষণা করেছে।

প্রশ্ন হল, এ-হেন ঝুঁকি নিল কেন ইউক্রেন? যুক্তি বলে, সীমান্ত অঞ্চলে সেনার উপরে রুশ চাপ হ্রাসের পাশাপাশি আগামী যুদ্ধবিরতি তথা শান্তিচুক্তির আলোচনায় কুর্স্ক-এর ‘ট্রাম্প কার্ড’-টি হাতে রাখতে। কিন্তু রাশিয়ার ন্যায় দীর্ঘমেয়াদে শত্রুপক্ষের অঞ্চল দখলে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব কি? তা ছাড়া শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রেও নিজের অনুকূলে রাশিয়াকে বাধ্য করাতে হলে সেই মাত্রার সামরিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে ক্রেমলিনের উপরে, যা তাদের সীমিত শক্তিতে সম্ভব নয়। ফলে এর মাঝে যদি নিজভূমে আরও অঞ্চল হাতছাড়া হয় ইউক্রেনের, তবে নিজের জালে নিজেই পড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইউক্রেনের এ-হেন ‘প্ররোচনা’-র কী জবাব রাশিয়া দেয়, দেখা যাক। কিন্তু আশঙ্কার মেঘ জমে উঠছে যে, যুদ্ধের সমীকরণে কিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে, এবং সেই পরিবর্তন শান্তিমূলক না-ও হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vladimir Putin Volodymyr Zelenskyy

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy