Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Anis Khan

রক্ষাকবচ?

সংশ্লিষ্ট সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁর অপরাধ অনুসারে নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন। কিন্তু অনুমান করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, অপরাধ তাঁর একার নয়।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২২ ০৫:৪০
Share: Save:

সুদীর্ঘ ‘তদন্ত’ শেষে বোঝা গেল, আনিস খানের মৃত্যুর জন্য দায়ী কেবলমাত্র এক হোমগার্ড, আর এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তদন্তে কোনও প্রভাবশালীর নাম উঠে আসেনি। থানার অফিসার, বা পুলিশের উচ্চতর মহলের কারও দিকেও অঙ্গুলিনির্দেশ করেনি রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। তবে জানিয়েছে, আনিসকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য কি তবে শুধুমাত্র ভয় দেখানোর ছিল? রিপোর্টে স্বভাবতই তার উত্তর নেই। এক জন হোমগার্ড, পুলিশের ক্ষমতাকাঠামোয় যাঁরা সবার শেষে, এবং এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার, যাঁরা পুলিশকর্মীই নন, চুক্তিতে নিযুক্ত নাগরিক সহায়কমাত্র— তাঁদের এত ক্ষমতা কোথা থেকে আসে যে, রাতবিরেতে তাঁরা কারও বাড়িতে গিয়ে এমনই ভয় দেখাতে পারেন, যাতে কেউ প্রাণভয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন? এই প্রশ্নের উত্তরও সিট-এর রিপোর্টে নেই। অনুমান করা চলে, বড় মাথাকে বাঁচাতে উলুখাগড়াদের হাঁড়িকাঠে চড়ানো হচ্ছে। উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ব্যতিরেকেই সংশ্লিষ্ট কর্মীরা গোটা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, এমন কথা বিশ্বাস করতে হলে রাজ্যের পুলিশবাহিনীর সামগ্রিক শৃঙ্খলা বিষয়েই গভীর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তার চেয়ে এই কথাটি বিশ্বাস করা অনেক সহজ যে, কোনও রাজনৈতিক প্রভাবশালীর নির্দেশে, থানার অফিসারদের জ্ঞাতসারে সম্পূর্ণ ঘটনাটি ঘটেছিল, এবং তদন্তের রিপোর্টে সেই কথাটি চেপে যাওয়া হয়েছে। তা-ই যদি হয়, তবে রিপোর্টের এই সত্যগোপন গভীর উদ্বেগের বিষয়।

সংশ্লিষ্ট সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁর অপরাধ অনুসারে নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন। কিন্তু অনুমান করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, অপরাধ তাঁর একার নয়। কিন্তু, তাঁকে সামনে ঠেলে অন্যদের আড়াল করা সহজ। তার প্রধানতম কারণ, যে ভাবে সাম্প্রতিক কালে সিভিক ভলান্টিয়ারদের আচরণ, তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ইত্যাদি প্রসঙ্গ বারে বারে জনসমক্ষে এসেছে, আলোচিত হয়েছে, তাতে জনমানসে তাঁদের প্রতি ধারণা খুব সদয় নয়। সদয় হওয়ার কারণও নেই— বহু ক্ষেত্রেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের মাত্রাছাড়া দৌরাত্ম্যের শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। কিন্তু, এই মামলার শুনানিতেই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় যে ভঙ্গিতে আপাতত সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশ করার কথা বললেন, তাতে সংশয় হয় যে, সিভিক ভলান্টিয়রদের এক্তিয়ার-বহির্ভূত আচরণের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, এবং সেই সূত্রেই অন্য দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে তিনি, বা সরকার, অত্যুৎসাহী।

তবে, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে যে প্রশ্ন তিনি তুলেছেন, এবং বৃহত্তর সমাজ ক্রমাগত তুলেই চলেছে, সেগুলি ভিত্তিহীন বা গুরুত্বহীন নয়। সত্যিই যে পদ্ধতিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়ে থাকে, তার একমাত্র চালিকাশক্তি ক্লায়েন্টেলিজ়ম— এলাকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা আনুগত্যের পুরস্কার হিসাবে কিছু ছেলেমেয়েকে এই অস্থায়ী চাকরিতে ঢুকিয়ে দেন। তাঁদের প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা হয় না, এক্তিয়ারের সীমা ব্যাখ্যা করা হয় না। ফলে, অধিকাংশ সিভিক ভলান্টিয়ারের আচরণই এলাকার দুর্বৃত্তদের মতো। অন্য দিকে, ‘চাকরির বর্ণাশ্রম’-এ যে হেতু তাঁরা সর্বনিম্ন শ্রেণিতে পড়েন, ফলে অভিযোগ, তাঁদের দিয়েই করিয়ে নেওয়া হয় বহুবিধ অন্যায়, অবৈধ কাজ। অনুমান করা যেতে পারে, ঘটনার দিন আনিস খানের বাড়িতেও সেই সিভিক ভলান্টিয়ার প্রেরিত হয়েছিলেন এই ভাবেই। রাজ্যের পুলিশবাহিনীতে এমন বিসদৃশ একটি ব্যবস্থা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলেও তার যথাযথ প্রক্রিয়া চাই। কিন্তু, আনিস-হত্যার সিট রিপোর্টে যদি গাফিলতি থাকে, তবে এই সংস্কারের বাণী যেন তার রক্ষাকবচ হয়ে না দাঁড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anis Khan Death Civic volunteer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE