E-Paper

ছদ্মবেশী

সমাজমাধ্যমে যে কোনও খবর মুহূর্তে লক্ষ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়, নীল টিকচিহ্নধারী জনপ্রিয় প্রোফাইল থেকে হলে তো কথাই নেই।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ০৫:৪৮

সমাজমাধ্যমে প্রবেশের গোড়ার কাজটি হল একটি অ্যাকাউন্ট বা প্রোফাইল তৈরি করা। আর যাঁরা সমাজমাধ্যমে প্রভাবশালী বা জনপ্রিয়, যাঁদের ‘ফলোয়ার’-সংখ্যা বিপুল, সমাজমাধ্যম-সংস্থাগুলিই তাঁদের প্রোফাইলকে প্রামাণ্য মর্যাদা দিতে তৈরি করেছে ‘ব্লু টিক’-এর ব্যবস্থা, প্রোফাইল-নামের পাশে ছোট্ট নীল টিকচিহ্ন— যা থাকলে ধরে নেওয়া যেতে পারে প্রোফাইলধারীর অস্তিত্ব প্রকৃত, প্রামাণ্য। কিন্তু ইদানীং এক্স বা ফেসবুক-এর মতো সমাজমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে নীল টিকচিহ্নধারী বহু প্রোফাইলই আসলে ভুয়ো, তারা যে খবর ছড়াচ্ছে তা মিথ্যা, প্ররোচনামূলক, রীতিমতো হিংসাত্মক। সমাজমাধ্যমে যে কোনও খবর মুহূর্তে লক্ষ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায়, নীল টিকচিহ্নধারী জনপ্রিয় প্রোফাইল থেকে হলে তো কথাই নেই। এতেই লুকিয়ে বিপদ: ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে ভুয়ো খবর বা উস্কানি ছড়ালে তা সমাজমাধ্যম পেরিয়ে ছাপ ফেলতে পারে সমাজেও। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম ব্যবহার করে এক নীল টিকচিহ্নধারী অথচ ভুয়ো প্রোফাইল সম্প্রতি চিহ্নিত হয়েছে ভারতীয় বলে, সেখান থেকে পাকিস্তানে ‘নিউক্লিয়ার ইমার্জেন্সি’র ভুয়ো খবর ছড়ানো হয়। আবার নীল দাগওয়ালা বহু ভারতীয় প্রোফাইল থেকেই ছড়ানো হচ্ছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ— ব্যক্তি তো বটেই; দল, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও। সাধারণ মানুষ তা শুধু বিশ্বাসই করছেন না, সেই খবরগুলি নিজেরাও ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্তি ও বিপদ বাড়াচ্ছেন বহু গুণ।

ভুয়ো খবরের বিপদ নতুন বা অজানা নয়। তবে এত কাল যে প্রোফাইলগুলি থেকে এমন খবর ছড়ানো হত তার কিছু বৈশিষ্ট্য থেকে আন্দাজ করা যেত যে প্রোফাইলগুলি ভুয়ো। নীল টিকচিহ্নযুক্ত ভুয়ো প্রোফাইল এসে সেই কাজ জটিল করে দিয়েছে। এই অপব্যবহার শনাক্ত করা ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের গোড়ার কাজটি সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলিরই। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের বিশেষ গা নেই, দায়সারা অভিযোগ গ্রহণই সার। ভারতে সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলির পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে উপযুক্ত সরকারি আইনেরও অভাব, সমাজমাধ্যমে ভুয়ো খবরের জেরে আক্রান্ত নাগরিককে অধিকাংশ সময়ই ব্যক্তিগত ভাবে হিংসার মোকাবিলা করতে হয়। আশার কথা, কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠান ভুয়ো খবর শনাক্ত করার কাজটি করছেন মন দিয়ে, নীল টিকচিহ্নধারী ভুয়ো খবর প্রচারকদের মুখোশও খুলে দিচ্ছেন। কিছুটা এগোনো গিয়েছে, এখনও দীর্ঘ পথ পেরোনো বাকি।

সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষাকেই গুরুত্ব দেয় সবচেয়ে বেশি, ভুয়ো খবর রোখার লড়াইয়ে তাদের বাধ্য করার কাজে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হবে সবার আগে। ভারতে অবশ্য এই কাজটিও কঠিন, কারণ দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন শাসক দলের বহু নেতা-মন্ত্রী সেই সব প্রোফাইল ‘ফলো’ করেন যা থেকে ভুয়ো খবর তো বটেই, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক হিংসা ছড়ানো হয় কোনও রাখঢাক না করেই। রাজনৈতিক কল্যাণহস্ত না থাকলে যে ‘আইটি সেল’-এর এত বাড়বাড়ন্ত হত না তা সহজেই অনুমেয়। সমাজমাধ্যম-ব্যবহারকারী নাগরিকদের দায়িত্ব তাই কম নয়। ভুয়ো খবর শনাক্ত করতে নিজস্ব শুভবোধ ও বিচার-বিবেচনা কাজে লাগাতে হবে, পাশাপাশি রাষ্ট্র নিজেই যেন ভুয়ো খবরের সহচর বা অনুচর না হয়ে ওঠে সে লক্ষ্যেও তাঁদের সরব হতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Blue Tick Social Media

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy