Advertisement
E-Paper

নিষেধাজ্ঞার ফাঁস

দেশ জুড়িয়া ভোটের বাদ্য বাজিতেছে। ভারতের মতো বৃহৎ গণতন্ত্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের এই উৎসব সমগ্র পৃথিবী বিশেষ আগ্রহের সহিত দেখিয়া থাকে। এমন একটি সময়ে কাশ্মীরের ঘটনা দুইটি কথা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দেয়।

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
অচল: যান চলাচল বন্ধে থমকে জম্মু-কাশ্মীর জাতীয় সড়ক। রবিবার। পিটিআই

অচল: যান চলাচল বন্ধে থমকে জম্মু-কাশ্মীর জাতীয় সড়ক। রবিবার। পিটিআই

রাজ্যপাল-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে আরও এক বার নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ হইয়া উঠিল। রবিবার হইতে কার্যকর হইল সে রাজ্যের হাইওয়ে নিষেধাজ্ঞা। উধমপুর হইতে বারামুল্লা, রাজ্যের একটি বড় মাপের হাইওয়ের উপর অসামরিক যান চলাচল ৩১ মে পর্যন্ত বন্ধ, কেবলমাত্র রবিবার এবং বুধবার বারো ঘণ্টার জন্য খোলা। এই বন্দোবস্তের কারণ: কাশ্মীরে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু রাখিবার লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর যাতায়াত অবাধ রাখা দরকার। মনে রাখিতে হইবে, এই নিষেধাজ্ঞার বাহিরেও কিন্তু ভোট-ঋতুতে কাশ্মীরের নাগরিকদের চলাচল অত্যন্ত কঠিন হইয়া উঠিয়াছে, বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি থামাইয়া পরিচিতিপত্র পরীক্ষার ধুম চলিতেছে আগের অপেক্ষা অনেক বেশি মাত্রায়। স্বভাবতই উপত্যকার নাগরিকদের পক্ষে দৈনন্দিন জীবনযাপন অসম্ভব কষ্টকর হইয়া উঠিয়াছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং অরাজনৈতিক নাগরিক, সব পক্ষই তিতিবিরক্ত হইয়া প্রতিবাদে সরব হইয়াছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির বক্তব্য, তিনি সরকারের নির্দেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাইতে প্রস্তুত। কাশ্মীরের নাগরিকদেরকে তাঁহার অনুরোধ, তাঁহারা যেন এই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা ও অমান্য করেন। নেত্রীর ক্রুদ্ধ বার্তা: ভারত সরকার যেন মনে না করে যে, এই উপায়ে কাশ্মীরের জনসাধারণকে দমন করা যাইবে— কাশ্মীর কাশ্মীরিদের জায়গা, সেখানকার রাস্তা তাঁহাদেরই জন্য, রাস্তায় তাঁহাদেরই অধিকার। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাও একই ভাবে প্রতিবাদে মুখর হইয়াছেন। জানিতে চাহিয়াছেন, কাশ্মীর ভারতের ‘উপনিবেশ’ কি না। কাশ্মীরকে প্যালেস্তাইনের সহিত তুলনাও করিতেছেন কেহ কেহ।

দেশ জুড়িয়া ভোটের বাদ্য বাজিতেছে। ভারতের মতো বৃহৎ গণতন্ত্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের এই উৎসব সমগ্র পৃথিবী বিশেষ আগ্রহের সহিত দেখিয়া থাকে। এমন একটি সময়ে কাশ্মীরের ঘটনা দুইটি কথা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দেয়। প্রথম, রাস্তায় চলাচলের অধিকারটিও আজকাল রাজনৈতিক প্রতিবাদের সুরে ও ভাষায় বলিতে হয়, নতুবা তাহা কেহ শুনে না। কাশ্মীরের সঙ্কটের পরিমাপটি সকলেরই জানা, কিন্তু গত সত্তর বৎসর ধরিয়া যে সেই সঙ্কট মিটাইতে না পারার সরকারি ব্যর্থতা সেখানকার আবালবৃদ্ধবনিতাকে কী প্রকার অবরুদ্ধ জীবন বাঁচিতে বাধ্য করিতেছে, তাহা হয়তো বাকি ভারত আজও সম্যক ভাবে অবহিত নহে। দ্বিতীয় কথা, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি অংশমাত্র। ইহা ছাড়াও গণতন্ত্রের অন্য অনেক অংশ থাকিবার কথা। নাগরিক অধিকার তাহার মধ্যে অন্যতম প্রধান। কিন্তু ভোটের অধিকার নিশ্চিত করিবার জন্য গণতন্ত্রের বাকি সমস্ত অধিকার নাকচ করিবার এই পদ্ধতি একেবারেই রীতিমাফিক নহে, নীতিমাফিক তো নহেই।

রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের প্রশাসন বোধ হয় ভাবিতেছে, যত বেশি নিষেধাজ্ঞায় কাশ্মীরকে বাঁধা যাইবে, পুলওয়ামার মতো অতর্কিত হানা নামিয়া আসিবার সম্ভাবনাও তত কমিবে। অথচ সাধারণ বুদ্ধিই বলিয়া দেয়, নিষেধাজ্ঞার ফাঁসে মানুষকে জর্জরিত করিলে শান্তিপূর্ণ ব্যক্তিও প্রতিবাদী হইয়া উঠিবেন। উক্ত হাইওয়ের উপর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল আছে। সেখানে যে ব্যক্তিরা চিকিৎসাধীন, তাঁহাদের আত্মীয়স্বজনরাও দেখা করিতে যাইতে পারিতেছেন না। এইটুকুই বুঝাইয়া দেয়, নাগরিক ধৈর্যের উপর কেমন জবরদস্তি চলিতেছে। পুলিশকর্তারা বলিতেছেন, জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় বা ‘পাশ’ দেওয়া যায় কি না, তাঁহারা তলাইয়া দেখিবেন। মুশকিল হইল, এই সকল সরকারি ফিতার ফাঁস খুলিবার আগেই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠিবার জোগাড়। ফিতার ফাঁস না খুলিয়া ফাঁস কী করিলে পড়িবে না, বরং সরকারি কর্তৃপক্ষের সেই কথাটিই ভাবা উচিত ছিল।

Lok Sabha Election 2019 Kashmir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy