Advertisement
E-Paper

ব্যক্তি-সর্বস্ব

যো‌গেন্দ্র যাদব, প্রশান্ত ভূষণরা দল ভাঙিতেছিলেন, অথবা তাঁহাদের দল হইতে বহিষ্কার করা হইল, এই কথাগুলি নেহাত আলঙ্কারিক। কারণ, যাহাকে ‘দল’ বলে, আম আদমি পার্টি বা ‘আপ’ তাহার জন্মলগ্ন হইতে সেই সংজ্ঞায় পৌঁছাইতে পারে নাই। প্রকৃত প্রস্তাবে আপ অরবিন্দ কেজরীবালকে কেন্দ্র করিয়া জমিয়া উঠা বিবিধ নেতার এক অসংজ্ঞায়িত ভিড়।

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০১:৫০

যো‌গেন্দ্র যাদব, প্রশান্ত ভূষণরা দল ভাঙিতেছিলেন, অথবা তাঁহাদের দল হইতে বহিষ্কার করা হইল, এই কথাগুলি নেহাত আলঙ্কারিক। কারণ, যাহাকে ‘দল’ বলে, আম আদমি পার্টি বা ‘আপ’ তাহার জন্মলগ্ন হইতে সেই সংজ্ঞায় পৌঁছাইতে পারে নাই। প্রকৃত প্রস্তাবে আপ অরবিন্দ কেজরীবালকে কেন্দ্র করিয়া জমিয়া উঠা বিবিধ নেতার এক অসংজ্ঞায়িত ভিড়। যাঁহারা সেই দলের মিটিং-এ জমায়েত হইতেন, যাঁহারা দিল্লির দুইটি বিধানসভা নির্বাচনে এবং তাহার মধ্যবর্তী লোকসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টিকে ভোট দিয়াছেন, অথবা দেন নাই, তাঁহারা সেই অন্যান্য নেতাদের দেখিয়া নিজেদের পন্থা স্থির করেন নাই। তাঁহারা অরবিন্দ কেজরীবালকে সমর্থন জানাইয়াছেন, অথবা জানান নাই। অর্থাৎ যোগেন্দ্র যাদবরা একেবারে প্রাথমিক পর্যায় হইতেই অরবিন্দ কেজরীবালের পার্শ্বে থাকিলেও সেই থাকায় দলের একটিও ভোট বাড়িয়াছে, এমন দাবি সম্ভবত তাঁহারাও করিবেন না। বরং সান্ধ্য টেলিভিশন তরজায় তাঁহাদের ভূমিকা অনেক জোরদার ছিল। কাজেই, দল হইতে তাঁহাদের বিদায়ে আম আদমি পার্টি বা অরবিন্দ কেজরীবালের বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কারণ নাই। ইহা দিল্লির জনগণের সহিত বিশ্বাসভঙ্গ, এমনও তাই বলা চলে না।

ভারতীয় রাজনীতির রামধনুতে আম আদমি পার্টির অবস্থান মধ্যবর্তী। এক দিকে কংগ্রেস বা বিজেপি-র মতো দল। এই দলগুলির মধ্যেও নেতৃত্বের প্রশ্নে বিরোধ যথেষ্ট থাকা অথবা না থাকায় বিলক্ষণ প্রভাবিত হয়। এক দিকে নরেন্দ্র মোদী, আর অন্য দিকে রাহুল গাঁধী প্রমাণ করিতেছেন, এই দলগুলিতেও নেতৃত্বের প্রশ্নে বিরোধ ও সংঘাত কতখানি। তবুও, শেষ বিচারে েযহেতু এই দলগুলি আদর্শচালিত, নরেন্দ্র মোদী না থাকিলে বিজেপি দলটিও থাকিবে না, এমন কথা বলিবার উপায় নাই। তাঁহার সর্বময় উপস্থিতি সত্ত্বেও নাই। রামধনুর অন্য দিকে রহিয়াছে তৃণমূল কংগ্রেসের ন্যায় দল, যেখানে আদর্শের বালাই নাই। সেই দল শুধু তাহার সর্বাধিনায়িকা কেন্দ্রিক। আম আদমি পার্টি এই দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী, তবে দ্বিতীয় প্রান্তের সহিত দূরত্ব অপেক্ষাকৃত কম। তাহাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ন্যায় কিছু ঘোষিত আদর্শ আছে, এক শ্রেণির মানুষ সেই আদর্শের প্রতি আকৃষ্টও বটে। কিন্তু, রাজনৈতিক দল হিসাবে আপ সেই আদর্শ পূরণের জায়গায় পৌঁছাইতে পারিবে কি না, তাহা নির্ভর করে এক জন মাত্র মানুষের উপর। তিনি অরবিন্দ কেজরীবাল। সেই অর্থে তিনিই দল। যোগেন্দ্র যাদবের ন্যায় যাঁহারা গেলেন, আর যাঁহারা এখনও থাকিলেন, তাঁহারা বড় জোর পার্শ্বচরিত্র।

অতএব, বলা চলে যে দিল্লিতে আম আদমি পার্টি এখনও অক্ষতই রহিয়াছে। তাহার প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও বদলায় নাই। কেজরীবাল মধ্যবিত্তকে স্বপ্ন দেখাইয়া ভোটে জিতিয়াছেন। সেই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব তাঁহারই স্কন্ধে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি তাঁহার প্রতিশ্রুতির কত শতাংশ পূরণ করিতে পারেন, তাহাই পরীক্ষা। পরীক্ষাটি সামান্য নহে। তাঁহার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সহিত অর্থনীতির যুক্তির প্রাথমিক বিরোধ রহিয়াছে। সেই বিরোধ সামলাইয়া তিনি কোন পথে চলেন, তাহাই তাঁহার রাজনৈতিক জীবনের আয়ু নির্দিষ্ট করিয়া দিবে। অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ছাড়াছািড়, ভাঙাভাঙি, সব দলেই আছে, সব দলই সেই সব চ্যালেঞ্জ সামলাইয়া নিজেকে চালিত করে। েয দল সুসংহত নয়, যে দল গোড়া হইতেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক, তাহার পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ সামলানো কঠিন না হইবারই কথা। কেজরীবালের ব্যর্থতা কিংবা সাফল্য ইহার উপর নির্ভর করিবে না। তাঁহার কর্মযোগ্যতা ও প্রতিশ্রুতি পালনের দক্ষতার উপর নির্ভর করিবে। তাঁহার পরীক্ষা তিনি নিজেই, তাঁহার দলের আকার কিংবা প্রকার নহে।

editorial anandabazar Aam aadmi party Kejriwal dominates ABP editorial person centred party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy