Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

এই স্ববিরোধ হতাশ করল

নতুন বছরের প্রথম সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর মুখ চেয়ে থাকা নানা প্রশ্নের যে সব জবাব দিয়েছেন, সে সব জবাব সর্বজনমান্য কি না, সে সব জবাব সব রকমের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।

এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

বিতর্ক একরাশ। গোরক্ষকদের তাণ্ডব, গণপ্রহারের সংস্কৃতি, রাফাল কাণ্ড, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে রাজনীতি করা, রামমন্দির টানাপড়েন, নোটবন্দির ধাক্কা, শবরীমালা। কিন্তু কোনও প্রসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্পষ্ট বা পূর্ণাঙ্গ উত্তর মিলছিল না। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির জেরেই হোক বা অন্য কোনও কারণে— প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধহয় অনুভব করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন। এটাই আসলে দস্তুর। যে কোনও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় এমনটাই হওয়া উচিত। শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরও উচিত সব রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া।

নতুন বছরের প্রথম সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর মুখ চেয়ে থাকা নানা প্রশ্নের যে সব জবাব দিয়েছেন, সে সব জবাব সর্বজনমান্য কি না, সে সব জবাব সব রকমের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনীতিক যে অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখাকে অভ্যাসে পরিণত করেননি, সে এক সুলক্ষণ বই কি?

এক দিকে যখন এই সুলক্ষণের আভাস, অন্য দিকে তখন কিন্তু একটা বড়সড় দ্বিচারিতা বা বৈপরীত্যও ধরা দিয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকারে। তিন তালাক বিতর্কে তাঁর অবস্থান যে উচ্চতায় পৌঁছে দিল তাঁর বা তাঁর সরকারের ভাবমূর্তিকে, শবরীমালা বিতর্কে তাঁর মন্তব্য মুহূর্তে ধুলিসাৎ করে দিল সেই উচ্চতাকে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: সব বিতর্কের ‘জবাব’ নিয়ে খোলামেলা সাক্ষাৎকারে হাজির এক অচেনা মোদী

তাত্ক্ষণিক তিন তালাক প্রথার অবলুপ্তির লক্ষ্যে মোদী সরকার এখনও পর্যন্ত যে তত্পরতা দেখিয়েছে, সে তত্পরতা প্রগতির অভিমুখেই। বিতর্ক তীব্র হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু সরকার নিজের অবস্থানে দৃঢ়। কিন্তু নজরটা যেই ভারতের দক্ষিণতম ভূ-ভাগের শবরীমালা পর্বতের দিকে ঘোরাচ্ছি আমরা, তখনই দেখছি সরকারের দৃঢ়তা অদৃশ্য। সামাজিক প্রগতি বা সামাজিক সমতার কথা তখন আর বলছে না শাসক দল তথা সরকার। ধর্মবিশ্বাস তথা আস্থার কথা বলছে। নরেন্দ্র মোদীর মুখেও সেই একই কথা শোনা গেল। তিন তালাক প্রথা মুসলিমদের আস্থার সঙ্গে জড়িত বিষয় নয়, শবরীমালার মন্দিরে প্রবেশাধিকার হিন্দুদের আস্থার সঙ্গে জড়িত— প্রধানমন্ত্রী এই রকম ব্যাখ্যা দিলেন। অর্থাত্ আস্থা বা ধর্মবিশ্বাসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দিল।

সভ্যতার ইতিহাসে আস্থাই যদি শেষ কথা বলত, তা হলে গ্যালিলিও মান্যতা পেতেন না এত দিনেও। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে বলে জানানোয় গ্যালিলিওকে যাঁরা সাজা দিয়েছেন তাঁরাই তো মান্যতা পেতেন, যদি আস্থা শেষ কথা হত। তিন তালাক হোক বা শবরীমালা, বিতর্কের মাঝে পথটা তো আমাদের খুঁজে নিতে হবে বিজ্ঞান, সামাজিক প্রগতি আর সভ্যতার নিয়মের হাত ধরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা করলেন না। তিন তালাকের প্রশ্নে তিনি প্রগতির কথা বললেন। শবরীমালার প্রশ্নে তিনি আস্থার হাত ধরলেন। সেই আস্থা, যার উপরে ভর করে অযোধ্যায় এক দিন ভেঙে ফেলা হয়েছিল বাবরি মসজিদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE