Advertisement
E-Paper

এবং অন্ধকার

৩৭৭ ধারার ঐতিহাসিক পরাজয়ের সামনে দাঁড়াইয়া কী বলিতেছে ভারতের রাজনৈতিক সমাজ? সত্য কথা, রাজনৈতিক সমাজ বৃহত্তর সমাজেরই একটি অংশ, তেমনই এ কথাও তো ফেলিয়া দিবার মতো নয় যে জনপ্রতিনিধিরা জনতার অপেক্ষা অধিক বিবেচনাসম্পন্ন হইবেন, এমনটাই স্বাভাবিক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০

চার দিকে উৎসবের ছটা। তবুও ঢাকা পড়িতেছে না অস্বীকৃতি ও আক্রমণের তীক্ষ্ণ নখদন্ত। একবিংশ শতকের ভারত দেখাইয়া দিতেছে, তাহার আদালত যাহাই বলুক, তাহার সমাজ কড়া প্রহরারত, রক্ষণশীল অন্ধকার পার হইয়া যেন মুক্তির আলোক প্রবেশ না করে। এই দ্বৈত প্রতিক্রিয়ার মধ্যস্থলে দাঁড়াইয়া একটি প্রশ্ন অবধারিত হইয়া উঠে। ৩৭৭ ধারার ঐতিহাসিক পরাজয়ের সামনে দাঁড়াইয়া কী বলিতেছে ভারতের রাজনৈতিক সমাজ? সত্য কথা, রাজনৈতিক সমাজ বৃহত্তর সমাজেরই একটি অংশ, তেমনই এ কথাও তো ফেলিয়া দিবার মতো নয় যে জনপ্রতিনিধিরা জনতার অপেক্ষা অধিক বিবেচনাসম্পন্ন হইবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। সেই বিবেচনায় সংবিধানপ্রদত্ত নাগরিক অধিকারের গুরুত্ব তাঁহারা বুঝিবেন, ইহাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, দেশের রাজনৈতিক সমাজ অতখানি আগাইতে নারাজ। অন্যায় আইনের পরাজয়ের সংবাদ পাইয়া কোন কোন রাজনীতিক সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাইয়াছেন, প্রায় হাতে গনিয়া বলা যায়। এমনকি বাম মহল হইতেও বিশেষ উচ্চবাচ্য নাই। স্পষ্টতই, এ দেশের রাজনীতিকরা তাঁহাদের পিছনের বিরাট সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের অন্ধতাতেই ভর দিয়া দাঁড়াইতে চাহেন। সমকামী যৌনতার অধিকারের প্রসঙ্গ উঠিলে তাঁহারাও ঘৃণায় শিহরিত হন। কোন যৌনতা স্বাভাবিক, কোন যৌনতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ, জ্যেষ্ঠতাতসুলভ নির্দেশ দিতে তাঁহারা প্রস্তুত থাকেন। সে দিক দিয়া দেখিলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বরিষ্ঠ বিচারপতিদের বিচারধারা দেশের রাজনৈতিক সমাজের ভাবনাচিন্তার সহিত মিলে না। নাগরিকের স্বাধীন যৌনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা এখনও বিচারবিভাগের আলোকটুকুর উপরই নির্ভর করে।

ঠিক সেই কারণেই, এ যাবৎ ভারতীয় সংসদের অঙ্গনে ৩৭৭ ধারার ন্যায়-অন্যায়ের বিতর্কটুকুও ঠিকমতো ঘটিতে পারে নাই। ২০১৬ সালে যখন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর প্রাইভেট বিল আনিবার চেষ্টা করেন, সরকার বিরোধী সকলে হাত মিলাইয়া বিলটি পেশ করিতেও দেন নাই। প্রসঙ্গত, বিল পেশ করিলেই তাহার আলোচনা নিশ্চিত হয় না, আর বিল আলোচিত হইলেও তাহা পাশ হওয়া গভীর জলের প্রশ্ন। কিন্তু ভারতীয় সংসদে ‘হোমোফোবিয়া’ কিংবা সমকামী-বিদ্বেষ এত দূর যে বিলটি উপস্থাপন করা পর্যন্ত সে দিন সম্ভব হয় নাই, ভোটাভুটির মাধ্যমে সংসদ কার্যক্রমের চৌহদ্দি হইতে তাহা বাহির হইয়া যায়। বহু সাংসদ বিল উপস্থাপনের পক্ষে ভোট দিবেন না বলিয়া সে দিন অনুপস্থিত থাকেন। এই বিফলতার পরও তারুর হাল ছাড়েন নাই, সংসদে বিষয়টি তুলিবার পুনর্বার প্রয়াস করিয়াছেন। কিন্তু যেন তেন প্রকারেণ সমকামিতার বিরোধিতায় বিজেপি সমানেই বিরোধী সাংসদদের পাশে পাইয়াছে।

দল-বার্তা না আসিলেও কিছু নেতা ব্যক্তিগত ভাবে ব্যতিক্রম হইয়াছিলেন। সনিয়া ও রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেসের শীর্ষনেতাদের কেহ কেহ আইপিসি ৩৭৭-এর সমস্যার কথা নিরন্তর তুলিয়া ধরিয়াছেন। বৎসরের গোড়ায় সংসদে যখন বিষয়টি পুনরুত্থাপিত হয়, কংগ্রেসের নারী শাখার তরফেও সমর্থন শোনা যায়। অরুণ জেটলিও এই প্রশ্নে অতীতে ব্যতিক্রমী অবস্থান লইয়াছেন, যদিও এখন তিনি নির্বাক। বিস্ময়কর ভাবে শিবসেনা সাংসদ অরবিন্দ গণপত নাগরিক স্বাধীনতার যুক্তিটি তোলেন। দুর্জনে বলিবেন, হয়তো তাহা ছিল বিজেপির বিরুদ্ধতাপ্রসূত অবস্থান। তবে সব মিলাইয়া এ সবই ব্যতিক্রমী কণ্ঠ। দেশের রাজনৈতিক সমাজের দুর্মর পশ্চাৎমুখিতা এই ঘটনায় নূতন করিয়া উদ্ভাসিত। ‘প্রগতিশীল’ বামপন্থীরাও তথা এব চ— বাহিরে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার বুলি, অন্তরে মধ্য-ভিক্টোরীয় সংস্কারের দাসত্ব। সেই অন্ধকার সমানে চলিতেছে।

Verdict 377 Supreme Court Homosexuality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy