Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রাণঘাতী পথ

জাতীয় স়ড়ক কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন পুরসভা, রাজ্য সরকারের পূর্ত বিভাগ প্রভৃতি রাস্তার ভারপ্রাপ্ত দফতরগুলির অবহেলা এবং দুর্নীতির জন্য গত বৎসর সাড়ে তিন হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ হারাইয়াছেন, পঁচিশ হাজারেরও অধিক গুরুতর আহত হইয়াছেন। ইহা সরকারি তথ্য।

বেহাল রাস্তা। ফাইল চিত্র।

বেহাল রাস্তা। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

বর্ষা আসিয়াছে, শহরের রাস্তায় দেখা দিয়াছে মৃত্যুগহ্বর। সংবাদমাধ্যমে প্রতি দিন রাজপথে বিপজ্জনক গর্তের ছবি প্রকাশিত হইতেছে। জাতীয় সড়কও অক্ষত নাই। সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণে যত মানুষের প্রাণ গিয়াছে, তাহার অধিক নাগরিক মরিতেছে পথের গর্তে, এই সরকারি পরিসংখ্যান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদেরও বিস্মিত করিয়াছে। কিন্তু তিক্ত বাস্তব ইহাই। জাতীয় স়ড়ক কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন পুরসভা, রাজ্য সরকারের পূর্ত বিভাগ প্রভৃতি রাস্তার ভারপ্রাপ্ত দফতরগুলির অবহেলা এবং দুর্নীতির জন্য গত বৎসর সাড়ে তিন হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ হারাইয়াছেন, পঁচিশ হাজারেরও অধিক গুরুতর আহত হইয়াছেন। ইহা সরকারি তথ্য। গত দশ বৎসরের পরিসংখ্যান একত্র করিলে স্পষ্ট হয়, তেরো লক্ষেরও অধিক মানুষ পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ দিয়াছেন, যাহার অন্যতম কারণ রাস্তার ভগ্নদশা। যে দেশ মহাকাশে যান পাঠাইতে পারে, নিরাপদ রাস্তা গড়িবার কৌশলটুকু আয়ত্ত করা কি তাহার পক্ষে এতই দুঃসাধ্য? প্রতি বৎসর বর্ষায় জল জমিলেই রাস্তার উপরের পিচের আস্তরণ উঠিয়া গিয়া ইট উন্মুক্ত হইতেছে। তাহার দ্রুত ক্ষয় গভীর হইয়া মারাত্মক আকার লইতেছে। তাহাদের বাঁচাইতে গিয়া যানবাহনের গতি মন্থর, দুর্ঘটনাও প্রায় অবধারিত।

ভারতীয় রাস্তা কংগ্রেস রাস্তাগঠনের নানা সমস্যা চিহ্নিত করিয়াছে, এবং তাহা দূর করিবার প্রযুক্তিগত কৌশলেরও সুপারিশ করিয়াছে। কিন্তু কাজটি করিবে কে? ভগ্ন রাস্তার জন্য দুর্ঘটনা ঘটিলে তাহার দায় নিশ্চিত করিবার একটি উপায় প্রস্তাবিত হইয়াছে মোটরযান সুরক্ষা আইনের (মোটর ভেহিকলস অ্যাক্ট, ১৯৮৮) সংশোধনে। লোকসভায় পাশ হইবার পর আইনটি এখন রাজ্যসভায় বিবেচনাধীন। প্রস্তাবিত সংশোধনে বলা হইয়াছে, রাস্তার পরিকল্পনায় ত্রুটির কারণে, অথবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তবে ওই রাস্তা নির্মাণের ভারপ্রাপ্ত ঠিকাদার তাহার জন্য দায়বদ্ধ বিবেচিত হইবেন, এবং মৃত বা আহতদের জন্য এক লক্ষ টাকা অবধি জরিমানা দিতে বাধ্য থাকিবেন। ইহা ফৌজদারি আইন নহে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের ভয়ে ঠিকাদার সংস্থাগুলি অধিক যত্নশীল হইবে, এমনই প্রত্যাশা। আক্ষেপ, সংশোধনটি সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে উঠিলেও মীমাংসা হয় নাই, সড়ক মন্ত্রক পুনরায় তাহার বিচার করিবে।

কিন্তু সংসদই কি রাজ্যবাসীর একমাত্র গতি? বিধানসভা কি নাই? নাগরিকের সুরক্ষার জন্য বিধায়করা কি এ রাজ্যের ঠিকাদারদের দায়বদ্ধ করিবার জন্য আইন করিতে পারেন না? পুরসভা এবং পূর্ত দফতর মিলিয়া কি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করিতে পারে না, যাহাতে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের অভাব কঠোর শাস্তিযোগ্য হইতে পারে? একটিমাত্র বর্ষায় যদি কোনও রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হইয়া পড়ে, তবে তাহার ঠিকাদারকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ না করাই তো অন্যায়। কেন ঠিকাদার প্রাণঘাতী রাস্তা বানাইয়াও দায়বদ্ধ নহে, তাহার উত্তর কিছু দুরূহ নহে। ঠিকাদার প্রজাতি প্রায়ই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। নেতাদের ‘খুশি’ করিতে গিয়া তাহারা নাকি খরচ কমাইয়া থাকে রাস্তার নির্মাণের ব্যয়ে। এবং রাস্তা ভাঙিলে ফের রাস্তা বানাইবার দরপত্র আহ্বান করিবে সরকার। এই দুষ্টচক্রে নেতা ও ঠিকাদার পুষ্ট হইতেছে, প্রাণ হারাইতেছে নাগরিক। এ বার ইহার নিরসন প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE