Advertisement
E-Paper

পুলিশের এই লাঠি আসলে প্রশাসনের অপদার্থতার প্রতীক

রানিকুঠির স্কুলে চার বছরের পড়ুয়ার উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সামনে আসার পরে যে তীব্র প্রতিবাদ আছড়ে পড়েছে, তা যেন কোনও এক জ্বালামুখ খুলে দিয়েছে। এত দিন শান্তিপূর্ণ পথে, প্রায় নীরবে বিচার চাইছিলেন যাঁরা, তাঁরাও এ বার বিক্ষোভে অশান্ত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:১৪
এম পি বিড়লা স্কুলের সামনে অভিভাবকদের উপর লাঠি চালায় পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

এম পি বিড়লা স্কুলের সামনে অভিভাবকদের উপর লাঠি চালায় পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

এ কেমন বার্তা গেল! জঘন্য অপরাধের অভিযোগ সত্ত্বেও পদক্ষেপ করেননি কর্তৃপক্ষ। অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই উদগীরণের পথ খুঁজছিল চাপা ক্ষোভ। উৎসমুখ মিলতেই ছিটকে এসেছে লাভাস্রোত, উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি দক্ষিণ কলকাতার আরও এক নামী স্কুলে। কিন্তু পরিস্থিতির মোকাবিলা এই ভাবে? বিচারপ্রার্থীদের উপরে এমন উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে পুলিশ? অসংবেদনশীলতা কোথায় পৌঁছলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, ভাবলে হতবাক হতে হচ্ছে!

রানিকুঠির স্কুলে চার বছরের পড়ুয়ার উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সামনে আসার পরে যে তীব্র প্রতিবাদ আছড়ে পড়েছে, তা যেন কোনও এক জ্বালামুখ খুলে দিয়েছে। এত দিন শান্তিপূর্ণ পথে, প্রায় নীরবে বিচার চাইছিলেন যাঁরা, তাঁরাও এ বার বিক্ষোভে অশান্ত। বেহালার স্কুলটিতে অভিযোগ আরও গুরুতর আসলে। এক বার নয়, কয়েক মাসে দু’বার এক পড়ুয়া যৌন নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলে। অভিযোগ অন্তত তেমনই। মাসের পর মাস অপেক্ষায় থেকেও স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনও কঠোর পদক্ষেপ আদায় করতে পারেননি অভিভাবকরা। প্রতিবাদে যে অশান্ত হয়ে ওঠা যায়, রানিকুঠির স্কুল সে পথ দেখাতেই, বেহালার স্কুলটিও একই পরিণতির মুখে পড়ল। অচল হয়ে গেল প্রতিষ্ঠান, উত্তপ্ত হয়ে উঠল এলাকা। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই পুলিশ যেমন নির্মম লাঠি চালাল প্রতিবাদী এবং উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের উপরে, তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দনীয়।

আরও পড়ুন: দিনভর অবরোধ, পুলিশের লাঠি স্কুলের সামনে

টেলিভিশনের দৌলতে গোটা বাংলাই দেখে নিয়েছে, কতটা নির্মম আচরণ করেছে পুলিশ, কী রকম নির্বিচারে লাঠি চালানো হয়েছে। পুলিশ কি ভুলে গিয়েছিল, আন্দোলনটা চলছিল একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে? পুলিশ কি ভুলে গিয়েছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার দাবিতে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁরা আসলে পড়ুয়াদের নিরস্ত্র এবং উদ্বিগ্ন অভিভাবক? পুলিশ কি ভুলে গিয়েছিল, রাস্তা বন্ধ করে, স্কুল ঘেরাও করে ক্ষোভের এই তীব্র প্রকাশ সাড়ে তিন বছরের একটি শিশুর উপর একাধিক বার যৌন নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে?

এ কথা ঠিক যে, দিনভর আন্দোলন চলেছে, রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়েছে, শিক্ষকরা স্কুলের ভিতরে আটকে থেকেছেন দীর্ঘক্ষণ। এ কথা ঠিক যে, বেহালার স্কুলটিকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু বিক্ষোভরত অভিভাবকদের উপর বেপরোয়া লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে হবে তা বলে? আর কোনও পথ জানা ছিল না? যাঁরা ঘেরাও-অবরোধ-বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন, তাঁরা সব দাগী অপরাধী, এমন তো নয়। আলাপ-আলোচনায় গিয়ে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েই তো পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারত প্রশাসন। নাগরিক সমাজের বিশ্বাস অর্জন করতে পারা তো প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আন্তরিকতার সঙ্গে তেমন কোনও প্রয়াস কি আদৌ হল? হল না। বলপ্রয়োগ করলেই সবচেয়ে সহজে পরিস্থিতি বদলে যাবে— বুঝে নিল পুলিশ। তাই উন্মত্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল লাঠি নিয়ে। এই ভাবে পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা ফেরানোকে যদি সাফল্য বলে মনে করে পুলিশ বা প্রশাসন, তা হলে খুব ভুল করবে। আসলে এ হল চরম প্রশাসনিক অকর্মণ্যতারই নজির।

শুধু প্রশাসনের তরফে অবশ্য নয়, রাজনীতির অসৌজন্যও এ দিন সমান ভাবে সামনে এসেছে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে রয়েছে যে স্কুল চার বছরের শিশুর উপর দুই শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে, জোর করে সেখানে হানা দেওয়ার চেষ্টা করল রাজনীতিও এ দিন। বিস্ময় জাগাল সে দৃশ্যও! বিজেপি নেত্রী তথা সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে শুরুতেই বাধা দিয়েছিলেন আন্দোলনরত অভিভাবকদের একাংশ। রাজনীতির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ স্পর্শকাতর পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে, এই আশঙ্কাতেই সম্ভবত বিজেপি নেত্রীকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সে বাধা অগ্রাহ্য করে অত্যন্ত দ্রুত গোটা পরিস্থিতির রাশ নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করলেন যেন রূপা। যে দৃশ্যের জন্ম দিলেন, তার চেয়ে অসৌজন্যমূলক দৃশ্য রাজনীতিতে কমই হয়।

এ কথা ঠিক যে রাজনীতিতে অনেক সময়ই আগ্রাসন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে পেলব সৌজন্য ছেড়ে কাঠিন্যের পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু তারও তো নির্দিষ্ট স্থান-কাল-পাত্র রয়েছে। যে ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানিকুঠির স্কুলটি উত্তাল হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এমন আগ্রাসী রাজনীতিতে সওয়ার হয়ে ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ঢুকতে চাওয়া মোটেই বিচক্ষণতার কাজ নয়। এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা রূপার বিপক্ষেই গেল।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় M P Birla G D Birla Child Abuse Sexual harassment এম পি বিড়লা জি ডি বিড়লা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy