Advertisement
E-Paper

প্রধানমন্ত্রী হওয়া

কংগ্রেস যে প্রসঙ্গটির উল্লেখ করে নাই, তাহার তাৎপর্যও কম নহে— প্রধানমন্ত্রী এখন পণ্য ও পরিষেবা করের দায়টি ঝাড়িয়া ফেলিতে ব্যস্ত।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০

নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকে কংগ্রেস একটি পরামর্শ দিয়াছে: প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় আচরণ করুন। গুজরাতে এখনও বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত হয় নাই বটে, কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি এমনই বেকায়দায় যে, মোদী ইতিমধ্যেই চার বার গুজরাত সফর সারিয়া ফেলিয়াছেন। এবং, বিভিন্ন জনসভায় তিনি যে ভাষায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করিয়াছেন, তাহাতে আকবর রোডের পরামর্শটিকে ফেলনা বলা মুশকিল। বেকায়দায় পড়িলে তিনি গুজরাতি অস্মিতা জাগাইয়া তুলিতে অভ্যস্ত। যে ভঙ্গিতে তিনি দেশ বনাম গুজরাতের দ্বিত্ব খা়ড়া করিতেছেন, এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গুজরাতের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ করিতেছেন, তাহাতে গোধরা-লাঞ্ছিত ২০০২ সালের কথা মনে পড়িতে পারে। দ্বিত্বটি গুজরাতের কোনও স্থানীয় নেতা নির্মাণ করিলে তাহা এক প্রকার বুঝা যাইত। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এমন প্রাদেশিকতা অশোভন। সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ শানানোও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্মানজনক নহে।

তবে, কংগ্রেস যে প্রসঙ্গটির উল্লেখ করে নাই, তাহার তাৎপর্যও কম নহে— প্রধানমন্ত্রী এখন পণ্য ও পরিষেবা করের দায়টি ঝাড়িয়া ফেলিতে ব্যস্ত। তিনি বলিয়াছেন, জিএসটি-র দায়িত্ব তাঁহার একার নহে, দেশের ত্রিশটি রাজনৈতিক দলের সহিত আলোচনা করিয়া তবে ব্যবস্থাটি চালু হইয়াছে। গোটা দেশ জুড়িয়াই বহু নাগরিক, বিশেষত ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ এই নূতন পরোক্ষ করব্যবস্থার উপর চটিয়া আছেন। কিন্তু, সেই ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টায় দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি নিজের দায়টি ঝাড়িয়া ফেলিতে চাহেন, তাহা প্রবল দৃষ্টিকটু হয়। বিশেষত, নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রে, যিনি সচেতন ভাবে নিজেকে সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে আসন দিয়াছেন। কৃতিত্ব সব নিজের, আর দায় সকলকে ভাগ করিয়া লইতে হইবে, নরেন্দ্র মোদীর এ হেন অবস্থানের কথা শুনিলে রত্নাকর লজ্জা পাইত। কিন্তু, মোদী সেখানেই থামেন নাই। দায় কাটাইবার উদগ্র তাগিদে তিনি নিখাদ অসত্যাচার করিয়াছেন। জিএসটি-তে তাঁহার নিয়ন্ত্রণ ত্রিশ ভাগের মধ্যে মাত্র এক ভাগ নহে। কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রহিয়াছে মোট ৩৩ শতাংশ ভোট। বাকি ৬৭ শতাংশ রাজ্যগুলির হাতে, যাহার অধিকাংশই বর্তমানে বিজেপি-শাসিত। দুষ্ট লোকে বলিবে, সেই নিয়ন্ত্রণও বকলমে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই। কাউন্সিলের প্রধান দেশের অর্থমন্ত্রী, যিনি সরকারি ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর অধীন। দুষ্ট লোকে আরও বলে, গোটা কাউন্সিলটি চলে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নির্দেশে। অতএব, জিএসটি সংক্রান্ত যে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মোদীর বিলক্ষণ আছে। একটি রাজ্যের ভোটের স্বার্থে এমন একটি সত্যকে সম্পূর্ণ উল্টাইয়া দেওয়া কি কোনও প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য আচরণ হইতে পারে?

তাঁহার ভাষণে যখন জিএসটি-র প্রসঙ্গটি আসিল, শ্রোতারা সবিস্ময় শুনিলেন, নরেন্দ্র মোদী হিন্দি ছাড়িয়া গুজরাতিতে কথা বলিতে আরম্ভ করিলেন। রাজ্যে গিয়া তিনি রাজ্যের ভাষায় কথা বলিবেন, তাহাতে অবাক হইবার কোনও কারণ থাকিত না, যদি না ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের পরের ভাষণের কথাটি মানুষের স্মৃতিতে থাকিত। সে দিন তিনি ভাষা হিসাবে হিন্দিকে বাছিয়া লইয়াছিলেন। অনুমান করা চলে, দেশের বৃহত্তর জনসমাজের কাছে নিজের কথাগুলি পৌঁছাইয়া দেওয়ার জন্যই। দিল্লির তখ্‌ত দখল করিতে তখনও তাঁহার দেড় বৎসর দেরি। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশের সহিত কথা বলিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর যেমনটি করা উচিত। আর, কুর্সি দখলের সাড়ে তিন বৎসর পর তিনি সংকীর্ণ খণ্ডজাতীয়তার বুলি আওড়াইতেছেন, নিজের দায় ঝাড়িয়া ফেলিতেছেন। প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে হইতে হয়, নরেন্দ্র মোদী কি শিখিতে পারিবেন না?

Narendra Modi GST নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy