Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

খেলা এখনও বাকি

লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট কমিল কেন, সেই প্রশ্নের একটি উত্তর নিশ্চিত ভাবেই এনআরসি— অমিত শাহদের হুঙ্কার বাঙালির মনে খানিক হইলেও ভয় ধরাইয়াছে বলিয়াই বোধ হয়।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

তিনটি আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস জিতিল। বিজেপি হারিল কি? গত লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ অনুপাতের সহিত তুলনা করিলে বোধ হইবে, বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে প্রবল ভাঙন ধরিয়াছে। কিন্তু, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের সহিত তুলনা করিলেই ছবিটি পাল্টাইয়া যায়। সেই তুলনা বলিবে, বিজেপির ভোট কম-বেশি অক্ষত আছে, ধস নামিয়াছে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের ভোটে। এমনকি, খড়্গপুর-সদর বাদে বাকি দুইটি আসনে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনাতেও কংগ্রেস-বামফ্রন্ট প্রার্থীর ভোট কমিয়াছে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে। তিনটি আসনের মধ্যে একমাত্র খড়্গপুর-সদরে বিজেপির ভোটের ভাগ ২০১৬ সালের তুলনায় কমিয়াছে, বাকি দুইটিতে বাড়িয়াছে তিন গুণের কাছাকাছি। এক্ষণে প্রশ্ন, কোন তুলনাটি বৈধতর? লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন চরিত্রগত ভাবে পৃথক— নরেন্দ্র মোদী-হাওয়ার কারণে আরও পৃথক। ফলে, লোকসভায় কী হইয়াছিল, তাহার নিরিখে এই উপনির্বাচনের ফলাফলকে বিচার করিলে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা আছে। অন্য দিকে, সময়ের বিচারে মাত্র সাড়ে তিন বৎসর হইলেও রাজনীতির হিসাবে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন বহু যুগ পূর্বের ঘটনা। তাহার পর রাজ্য রাজনীতির ছবি বহুলাংশে পাল্টাইয়াছে। কাজেই, সেই নির্বাচনের ফলাফলের সহিত বর্তমান উপনির্বাচনের তুলনা করিলেও প্রকৃত চিত্রটি বোঝা সম্ভব হইবে কি? তবে, বলা চলে, এই উপনির্বাচনের ফলাফল রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবির প্রমাণ নহে।

লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট কমিল কেন, সেই প্রশ্নের একটি উত্তর নিশ্চিত ভাবেই এনআরসি— অমিত শাহদের হুঙ্কার বাঙালির মনে খানিক হইলেও ভয় ধরাইয়াছে বলিয়াই বোধ হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি-র প্রশ্নটিতে নিজের রাজনীতিকে মোক্ষম তারে বাঁধিয়াছেন। তাঁহার সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়াছে, রাজ্যে তো বটেই। কিন্তু, তাহাই বিজেপির ভোট কমিবার একমাত্র কারণ নহে। এই নির্বাচনের দিনকয়েক পূর্বেই অযোধ্যা মামলায় রামলালার জয় হইয়াছে; তাহার কয়েক মাস পূর্বে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হইয়াছে। অর্থাৎ, এত দিন বিজেপির ইস্তাহারে যে দাবিগুলি থাকিত, তাহার সবই বাস্তবায়িত। তবুও হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক বিজেপির ঝুলি ভরিয়া দিল না কেন? কারণ, অর্থনীতি। নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে ভারতীয় অর্থনীতি যে খাদের মুখে দাঁড়াইয়া আছে, তাহাতে সাধারণ মানুষের মনে কাঁপুনি ধরা স্বাভাবিক। এই বিপর্যয়ের পিছনে ব্যক্তি মোদী এবং তাঁহার দলের ভূমিকা বিষয়েও লোকের ধারণা বদলাইতেছে— এবং, সেই বদল বিজেপির অনুকূলে নহে। উপনির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে কিছু বলা বিপজ্জনক— তবে, অর্থনীতির প্রশ্ন ফের গুরুত্বপূর্ণ হইতেছে।

উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়াছেন, বাংলার মানুষ বিজেপির ঔদ্ধত্যকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। কথাটিতে কয় আনা সত্য আছে, সেই হিসাব কষিবার তুলনায় অনেক বেশি জরুরি এই কথাটি বুঝিয়া লওয়া যে মানুষ সত্যই ঔদ্ধত্য সহ্য করে না। এবং কথাটি যে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, তাহাও বোঝা জরুরি। মুখ্যমন্ত্রী স্মরণে রাখিতে পারেন, ঔদ্ধত্যহীনতা বা নম্রতা বাহ্যিক প্রকাশভঙ্গিমাত্র— তাঁহার মূল কর্তব্য নৈতিকতায় অবিচলিত থাকা। প্রশাসক হিসাবেও বটে, রাজনৈতিক শক্তি হিসাবেও বটে। এই উপনির্বাচনে মানুষ একটি বার্তা দিয়াছে— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর এখনও আস্থা আছে। সেই আস্থার মর্যাদারক্ষা তাঁহার কর্তব্য। সাম্প্রতিক কালে তিনি যে ভাবে নিজেকে পরিচালনা করিয়াছেন, তাহাতে আশাবাদী হওয়া চলে। আগামী দেড় বৎসর তাঁহার কঠিন পরীক্ষা। নৈতিকতার পথ হইতে বিচ্যুত হইলে তাঁহার চলিবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

By Election Assembly TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE