Advertisement
E-Paper

পদ্ধতির গুরুত্ব

ইহার ফলে কি বিজেপির মোদীনির্ভরতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সমালোচনাটি অনেকাংশে হীনবল হইয়া পড়িবে না? প্রশ্নাতুর সমর্থকদের সৌভাগ্য, শেষ পর্যন্ত এই অতিকেন্দ্রিকতার ফাঁদ হইতে কংগ্রেস অন্তত এই পর্যায়ে বাহির হইতে পারিল।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
করুণানিধির মূর্তি উন্মোচনে রাহুল গান্ধী।—ছবি পিটিআই

করুণানিধির মূর্তি উন্মোচনে রাহুল গান্ধী।—ছবি পিটিআই

মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের নির্বাচনের ফল বাহির হইবার পর পরই শোনা গিয়াছিল, দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করিতে চলিয়াছেন রাহুল গাঁধী নিজেই। অনেক দিন পর দলের জয়লাভের মহামুহূর্ত সত্ত্বেও এই সংবাদে বহু কংগ্রেস সমর্থক অস্বস্তি বোধ করিতেছিলেন। প্রাদেশিক বাস্তবকে অস্বীকার করিয়া রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বের উপর এমন সম্পূর্ণ নির্ভরতা দেখানো কি কংগ্রেসের পক্ষে ভাল হইতে চলিয়াছে? ইহার ফলে কি বিজেপির মোদীনির্ভরতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সমালোচনাটি অনেকাংশে হীনবল হইয়া পড়িবে না? প্রশ্নাতুর সমর্থকদের সৌভাগ্য, শেষ পর্যন্ত এই অতিকেন্দ্রিকতার ফাঁদ হইতে কংগ্রেস অন্তত এই পর্যায়ে বাহির হইতে পারিল। রাহুল গাঁধীর নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের পদ্ধতিটি বদলাইল। মোবাইল বার্তা দ্বারা দুই রাজ্যের কংগ্রেস বিধায়ক ও কর্মীরা মু্খ্যমন্ত্রী পদে তাঁহাদের পছন্দের নামটি সরাসরি উচ্চনেতৃত্বকে জানাইলেন। বস্তুত, ভারতীয় গণতন্ত্রে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের এমন অভিনব পদ্ধতি আগে দেখা যায় নাই। অবশ্য এক ধরনের প্রযুক্তিনির্ভরতা ছাড়া তাহা দেখিবার আশাও করা যায় না। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে সাত লক্ষ পার্টি কর্মী যে নিজেদের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রীর নাম এই ভাবে হাইকম্যান্ডকে জানাইতে পারিলেন, ভারতীয় রাজনীতির তৃণমূল স্তর পর্যন্ত প্রসারটি মনে রাখিয়াও বলা যায় যে, মোবাইল ফোনের সর্বব্যাপিতা ছাড়া ইহা কিছুতেই সম্ভব হইত না।

দুই রাজ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর উপস্থিতির ফলে পদ্ধতিটি বিশেষ ভাবে উপযোগী হইয়া উঠিল। রাজস্থানে অশোক গহলৌত এবং মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ যদিও জনসমর্থনের দিক দিয়া অনেকটা আগাইয়া ছিলেন, তবু যথাক্রমে সচিন পাইলট এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসাবে তাঁহাদের যথেষ্ট বেগ দিতেছিলেন। সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গাঁধী প্রথমেই মধ্যপ্রদেশের পর্যবেক্ষক নেতা এ কে অ্যান্টনি ও রাজস্থানে কে সি বেণুগোপালের সহিত আগে বৈঠক সারিয়া লইয়া সিদ্ধান্তে পৌঁছাইলেন, এবং তাঁহাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী বিষয়ে জনমত গ্রহণের ব্যবস্থা হইল। গোটা পদ্ধতিটির মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া টের পাওয়া সম্ভব, কংগ্রেসের এই যাবৎ কালের পরিচিত কর্মপদ্ধতির তুলনায় যাহা নিতান্ত অপরিচিত! সত্য বলিতে, কংগ্রেস বিষয়ে বিজেপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের প্রধান সমালোচনা হইল, পরিবারতন্ত্রের অসুখ বাদ দিয়াও কংগ্রেস দলটির কাজকর্মের মধ্যে গণতন্ত্রের লক্ষণ নাই। নূতন পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া এই সমালোচনাটি প্রথমেই রাহুল মারিয়া রাখিলেন। শেষ পর্যন্ত পদ্ধতিটির কার্যকারিতা যেমনই হউক, তিনি যে প্রচলিত কর্মবিধি হইতে সরিয়া গিয়া নূতন কিছু ভাবিতে আগ্রহী, তাহার প্রমাণ মিলিল।

প্রশ্ন উঠিতে পারে, মানুষের ভোটে মুখ্যমন্ত্রী পদাধিকারী স্থির করা কি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দৃষ্টান্ত? উত্তর: সম্ভবত না। উপরমহলের নির্দেশের মতো নিচুতলার আবেগঘন মনোনয়নও পদ্ধতি হিসাবে ত্রুটিহীন না-ই হইতে পারে। ইহার ফলে কমল নাথের মতো বিতর্কিত নেতা আবারও প্রধান পদে আরূঢ় হইয়া দলের দুর্নামের কারণ হইতে পারেন। কিন্তু ত্রুটিবিচ্যুতি যতই থাকুক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তাহার নিজ গুরুত্বেই মহীয়ান। নেতৃকুল সাধারণ মানুষের মত জানিতে চাহিয়াছেন, এবং তাহাকে মর্যাদা দিতে মনস্থ করিয়াছেন, এমন জনবহুল দেশের প্রেক্ষিতে তাহা কম কথা নয়। ভাঙিয়া যাওয়া দলকে আবার নিচুতলা হইতে নূতন ভাবে তৈরি করিতে হইলে, দলীয় কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যয় ও মর্যাদাবোধ দরকার হয়। এই নূতন পদ্ধতি নির্মাণের মধ্যে সেই প্রত্যয় ও মর্যাদা তৈরির প্রয়াস আছে। দলের সার্বিক স্বাস্থ্যের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে প্রয়াসটি গুরুত্বপূর্ণ।

Assembly Election 2018 Rajasthan Assembly Election 2018 Madhya Pradesh Assembly Election 2018 Rahul Gandhi Congress BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy