Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Jadavpur University

সংঘর্ষ-পুর

কোনও গণতান্ত্রিকতা বা বিপ্লবের দোহাই দিয়া অতিমারি-কালে একের পর এক ঘেরাও এবং সংঘর্ষের ঘটনাকে সমর্থন করা চলে না।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:১০
Share: Save:

কোনও ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যদি বারংবার মন্দ কারণে সংবাদের শিরোনাম হয়, হাতে থাকে কী? অঙ্কটি দুরূহ নহে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তরে সাধারণত একটি গৌরবস্রোত প্রবাহিত হইতে দেখা যায় যে, তাহারা রাজ্যের, এমনকি দেশেরও অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দাবিটিতে হয়তো ভুল নাই, কিন্তু অসম্পূর্ণতা আছে, যে অসম্পূর্ণতা ক্রমশ উৎকট আকার ধারণ করিতেছে। বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া যদি বিক্ষোভ, বচসা, হাতাহাতি, নৈরাজ্য, এবং সর্বোপরি, অপশাসনের নজির কোনও প্রতিষ্ঠান গড়িতে থাকে, তাহা হইলে শত সম্পদের উপস্থিতিও তাহার মুখোজ্জ্বল করিতে পারে না— যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাহার সাক্ষাৎ প্রমাণ। কোনও গণতান্ত্রিকতা বা বিপ্লবের দোহাই দিয়া অতিমারি-কালে একের পর এক ঘেরাও এবং সংঘর্ষের ঘটনাকে সমর্থন করা চলে না। আবার, কোনও অতিমারির দোহাই দিয়া এই অবিশ্বাস্য প্রাতিষ্ঠানিক অপশাসনেরও ব্যাখ্যা চলে না। গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করিতেছে না, সমগ্র রাজ্যের মাথা হেঁট করিতেছে— বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রী এবং বিক্ষোভে ইন্ধনদাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উভয়েই তাহা ভাল করিয়া জানেন। বিবাদ বিতর্ক ইত্যাদির সূচনা যে সব ঘটনা হইতে, তাহা আদৌ ঘটিল কেন, তাহাই গোড়ার প্রশ্ন। যদি এক দীর্ঘ সময় ধরিয়া প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বেঠিক ভাবে চলে, ছাত্রছাত্রীদের চরম অসুবিধার সামনে ফেলে, তাহা হইলে ধৈর্যচ্যুতি ঘটা অস্বাভাবিক কি? আবার, যে ছাত্রছাত্রীরা সমানে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ঘেরাও করিয়া, হাতাহাতি বাধাইয়া সমস্যার সমাধান চাহিতেছেন, তাঁহাদের বিবেচনাবোধ ও প্রেক্ষিত-চেতনার আত্যন্তিক অভাব সম্বন্ধে নিন্দার ভাষা খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। অতিমারির জ্বালা যাদবপুরের একার নহে। কিন্তু সেখানে যাহা ঘটিতেছে, তাহা দেশের কোথাও ঘটিতেছে না। মাত্র এই সত্যটুকু অনুধাবন করিয়া বিক্ষোভকারীরা সংযত হউন, কর্তৃপক্ষ সমস্ত দায় গ্রহণ করুন।

‘কর্তৃপক্ষ’ বিষয়টিও একশৈলিক বা সমতাবিশিষ্ট নহে। তাহার বিভিন্ন অংশের দায় বর্তায় বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির অসাধুতা ও অদক্ষতার উপর, এবং বিবিধ রঙের রাজনীতির কুপ্রভাব পরিস্থিতি জটিলতর করে। বিশেষত আসন্ন নির্বাচনের আগে যে হেতু রাজ্যের দল-প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভয়ানক মাত্রায় বাড়িতেছে এবং ভয়ানক রূপ লইতেছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজনীতি-প্রবণ পরিবেশে তাহার প্রত্যক্ষ চাপ সহজেই অনুমেয়। কিন্তু কোনও যুক্তিই কোনও খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্যটিকে ব্যাহত হইতে দিতে পারে না— যাহার নাম, শিক্ষাদান। প্রথম বর্ষের প্রবেশ-পদ্ধতি, অন্যান্য বর্ষের পরীক্ষাসূচি, সমস্ত বর্ষের পাঠ্যক্রম ও পাঠপদ্ধতি: এইগুলি নির্ধারণে ও ব্যবস্থাপনায় অমত ও দ্বিমত ঘটা অস্বাভাবিক নহে, অন্যত্রও ঘটিতেছে। কিন্তু মতবৈষম্য মিটানোই প্রশাসনের কাজ। শক্ত হাতে হাল ধরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করিবেন, এই দাবি রহিল।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমাজও ভাবিয়া দেখুক, ভোটের রাজনীতির ইঁদুর-দৌড়ে শিক্ষাঙ্গনের উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব খাটাইবার যে পরিণতি আজ হইয়াছে, তাহাতে রাজ্যের ছাত্রছাত্রী রাজ্যের উপর আর তিলমাত্র ভরসা রাখিবে কি না। প্রাত্যহিক বিশৃঙ্খলা যে উৎকর্ষ-খ্যাত প্রতিষ্ঠানকেও কোথায় লইতে পারে, এই বৎসরের যাদবপুরের প্রথম বর্ষের বহুসংখ্যক শূন্য আসনই তাহার জলজ্যান্ত প্রমাণ। এবং এই দুর্বার অধঃপাতে বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেসের সহিত উদীয়মান বিরোধী দল বিজেপিও তাল মিলাইতে ব্যস্ত। অতি-রাজনীতির লঙ্কাপুরীতে সকলেই রাবণ হইলে মনে রাখা ভাল, ভস্মীভূত হওয়াই লঙ্কার পরিণতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Gherao Protest Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE