Advertisement
E-Paper

আয়নার দিকে পিছন ফিরে রয়েছে শাসককুল

এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখনও মনোনয়ন প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে বটে। কিন্তু প্রত্যাহার পর্ব এখনও বাকি। তাতেই ২৭ শতাংশ আসন শাসকের দখলে চলে গিয়েছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৫১

আয়নার সামনে দাঁড়ানোর অভ্যাসটাই নেই। অথবা আয়নার দিকে তাকাতে ভীষণ ভয়। কারণ আয়নায় আসল মুখচ্ছবিটা ধরা পড়ে যায়। তাই সারাক্ষণ আয়নার দিকে পিছন ফিরে থাকা আর নানা মনগড়া তত্ত্বকে সত্য হিসেবে খাড়া করা।

এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন না দেখলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কিছুতেই ভুলতে পারতেন না। বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ছিল ওই বছরের ভোটটাই। কারণ সে বার ১১ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে নিয়েছিল তদানীন্তন শাসক বামেরা।

এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখনও মনোনয়ন প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে বটে। কিন্তু প্রত্যাহার পর্ব এখনও বাকি। তাতেই ২৭ শতাংশ আসন শাসক দলের দখলে চলে গিয়েছে। অর্থাত্ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মোট আসনসংখ্যার ২৭ শতাংশে মাত্র এক জন করে প্রার্থী।

প্রত্যাহার পর্ব আদালতের নির্দেশে থমকে রয়েছে বলে হিসেবটা এখনও ২৭ শতাংশে। বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে বলে গ্রামে-গ্রামান্তরে যে রকম তীব্র রক্তচক্ষু দেখানো শুরু হয়েছে, তাতে আরও কত আসন থেকে যে বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াবেন, তা আঁচ করা খুব শক্ত। কেউ আশঙ্কা করছেন শেষ পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ আসন বিনাযুদ্ধে শাসকের দখলে চলে যাবে। কেউ আবার মনে করছেন, ৩৫ নয় ৪০ শতাংশে পৌঁছে যাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের হিসেবটা।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্ব মেটার পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের হিসেব কোথায় পৌঁছল, সে হিসেব আপাতত ছেড়েই দেওয়া যাক। কারণ মনোনয়ন জমার পর্ব মিটতেই যে ছবিটা তৈরি হয়েছে, কোনও গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ সে ছবি দুঃস্বপ্নেও দেখতে চাইবেন না।

১১ শতাংশ আসন বামেরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার পর ধিক্কার শোনা গিয়েছিল গোটা রাজ্য থেকে। এই তৃণমূলই তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছিল। পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের খতিয়ান তুলে ধরে গোটা দেশকে তৃণমূল দেখিয়েছিল, লাল সন্ত্রাসের চেহারাটা ঠিক কেমন।

আরও পড়ুন: বেনজির পঞ্চায়েত! প্রত্যাহারের আগেই ২৭% আসন শাসকের দখলে

অত্যন্ত স্বাভাবিকই ছিল সেই প্রতিক্রিয়া। ১১ শতাংশ আসনে কোনও বিরোধী দলকে প্রার্থীই দিতে দেবে না শাসক দল, এমনটা চুপচাপ মেনে নেওয়া উচিত নয়। তৃণমূল বা অন্য বিরোধী দলগুলি মেনে নেয়নি। তীব্র ভাবে সোচ্চার হয়েছিল।

প্রশ্ন হল, সে দিনের সেই ১১ শতাংশ যদি তীব্র নিন্দার যোগ্য হয়, তা হলে আজকের ২৭ শতাংশ কেন প্রবল ধিক্কারের সম্মুখীন হবে না? ২৭ শতাংশ আসনে বিরোধী দলের প্রার্থী না থাকাকে কোন যুক্তিতে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখানো হবে?

বিরোধীদের সংগঠন নেই, বিরোধী দল প্রার্থী দেওয়ার মতো লোক পাচ্ছে না, বিরোধীরা জনবিচ্ছিন্ন— বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় প্রসঙ্গে এই কথাগুলোই বলত পূর্বতন শাসক বামফ্রন্ট। পূর্বতন শাসকের বিরুদ্ধে তীব্র স্বরে গর্জে উঠতেন তত্কালীন বিরোধী নেত্রী। বামেদের এই সব মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করতেন। আজ গোটা সরকারটাই তাঁর হাতে। কিন্তু বিরোধীর গলায় সেই পুরনো অভিযোগ।

আদালতে কেন গেলেন বিরোধীরা, মামলা করে কেন আটকে দেওয়া হল নির্বাচন প্রক্রিয়া? তীব্র উষ্মা শোনা গিয়েছে শাসকের গলায়। ভোটে যেতে ভয় পাচ্ছেন বিরোধীরা— এমন মন্তব্যও করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, আসলে ভোটে যেতে ভয় পাচ্ছেন কারা? ভোটাভুটি এড়াতে মরিয়া হয়ে ময়দানে নামলেন কারা? ১৩০ টি জেলা পরিষদ আসন ভোট এড়িয়ে দখল করে নেওয়ার পথে কারা? রাজ্যের মানুষ কিন্তু সবই দেখছেন। এই বেনজির ভোট বাংলার ক্ষতি তো করছেই, বেনজির ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বর্তমান শাসকদেরও।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay TMC Bengal Panchayat Election 2018 অঞ্জন বম্দ্যোপাধ্যায় Nomination Uncontested seats Election Violence Ruling party Autocracy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy