Advertisement
E-Paper

বায়বীয়

সিবিআই যে পরিমাণ ভর্ৎসনার সম্মুখীন হইয়াছে, তাহা সাধারণ নহে। আদালত তিরস্কার করিয়া বলিয়াছে, দেশের প্রথম সারির তদন্তকারী সংস্থাটি একটিও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পেশ করিয়া উঠিতে পারে নাই।

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৪৭

গত সাত বৎসরের প্রতিটি দিন, এমনকী গ্রীষ্মাবকাশের দিনগুলিতেও আমি আদালতের কুর্সিতে বসিয়া ছিলাম। অপেক্ষা ছিল অন্তত এক জনের, যিনি টু জি কেলেঙ্কারি মামলায় কোনও প্রকৃত প্রমাণ পেশ করিতে আসিবেন। কিন্তু, অপেক্ষা বিফল হইয়াছে, একটিও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ আদালতে জমা পড়ে নাই।’ সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক ও পি সাইনি-র এই উক্তিই টু-জি মামলার সারাৎসার বলিয়া দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ— যেখানে কোনও দুর্নীতিই ছিল না, সেখানে একটি বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ আনা হইয়াছিল। আদালতের রায়ের প্রসঙ্গে যাইবার পূর্বে, অতএব, মামলাটির মূলে যাওয়া প্রয়োজন। ‘টু-জি কেলেঙ্কারি’ দাঁড়াইয়া ছিল সিএজি-র একটি হিসাবের উপর— স্পেকট্রাম নিলামের পদ্ধতি না বদলাইলে সরকার যাহা আয় করিতে পারিত, নূতন পদ্ধতিতে লব্ধ আয়ের পরিমাণ তাহার তুলনায় এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার কোটি টাকা কম। প্রথম প্রশ্ন, ‘কী হইলে কী হইতে পারিত’ গোত্রের হিসাব কষিবার এক্তিয়ার কি সিএজি-র আছে? একটি নূতন যুগের প্রযুক্তিনির্ভর ক্ষেত্রে এমন হিসাবের দক্ষতাও কি আছে? আদালতের রায়ে সিএজি-র অপারদর্শিতা ও বে-এক্তিয়ার খবরদারির প্রতি তিরস্কার খুঁজিয়া পাওয়া সম্ভব।

তবে, সিবিআই যে পরিমাণ ভর্ৎসনার সম্মুখীন হইয়াছে, তাহা সাধারণ নহে। আদালত তিরস্কার করিয়া বলিয়াছে, দেশের প্রথম সারির তদন্তকারী সংস্থাটি একটিও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পেশ করিয়া উঠিতে পারে নাই। গোটা তদন্তে কোথাও অভিযুক্তদের অপরাধমনস্কতা প্রমাণ করা যায় নাই। কোনও নথি নাই, কোনও অভিযোগকে দাঁড় করাইবার মতো সাক্ষী নাই। বিচারক সাইনি স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন, মুখের কথা আদালতে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নহে। আদালতের পর্যবেক্ষণ— গোটা মামলাটি চালিত হইয়াছে কিছু গুজবকে সত্য মানিয়া লইবার প্রবণতায়। সিবিআই সব তথ্য জোগাড় করিতে পারে নাই, তথ্যের অপব্যাখ্যা করিয়াছে, নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী মামলা সাজাইবার জন্য বাছিয়া তথ্য ব্যবহার করিয়াছে। তবে, সিবিআই-এর ব্যর্থতা শুধু এই মামলাতেই সীমাবদ্ধ নহে। গোবিন্দ পানেসর বা নরেন্দ্র দাভোলকর হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার তদন্তে সিবিআই সম্পূর্ণ অন্ধকারে। আরুশি তলওয়ার মামলাতেও সংস্থার ব্যর্থতা প্রকট হইয়াছিল। অক্ষরধাম সন্ত্রাসবাদী হানা মামলাতেও নিরপরাধ লোকের ঘাড়ে দোষ চাপাইবার চেষ্টায় সিবিআই ভর্ৎসিত হইয়াছে। ‘খাঁচার তোতা’ সাজিয়া শাসকদলের চক্ষুশূলদের হয়রান করাই কি সংস্থাটির একমাত্র দক্ষতা?

আদালতের রায়ের পর বিজেপি নেতারা সুপ্রিমকোর্টের ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করিবার রায়ের শরণ লইয়াছেন। উচ্চৈঃস্বরে প্রচারের যে বিকল্প নাই, তাঁহারা বিলক্ষণ জানেন। শুধু প্রচারের জোরেই তাঁহারা জনমানসে ‘টু জি কেলেঙ্কারি’-র কথাটি প্রতিষ্ঠা করিতে পারিয়াছিলেন। এখনও তাঁহারা সত্যকে ঝাপসা করিয়া দেওয়ার চেষ্টায় ব্যাকুল। কারণ, তাঁহারা জানেন, সুপ্রিমকোর্টের রায়টি এ রাজাসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের অপরাধমনস্কতা বিষয়ে ছিল না— বস্তুত, সুপ্রিমকোর্ট স্পষ্ট জানাইয়াছিল, সিবিআই তদন্তের ক্ষেত্রে সেই রায়ের কোনও তাৎপর্য থাকিবে না— সেই মামলা ছিল টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনের প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত ন্যায্যতা বিষয়ে। নরেন্দ্র মোদীরা এত দিন সেই ন্যায্যতা লইয়া মাথা ঘামান নাই, তাঁহারা কেলেঙ্কারি লইয়া ব্যস্ত ছিলেন। এই মুহূর্তটি বিজেপি নেতাদের পক্ষে শিক্ষণীয় হইতে পারিত— হাওয়ায় ভাসানো কথা লইয়া বেশি লম্ফঝম্প করিলে তাহার পরিণতি ভাল হয় না। কিন্তু, তাঁহারা শিখিবেন, সেই ভরসা কম। নিজেদের ভুল স্বীকার করিবার সু-অভ্যাসটির কোনও প্রমাণ তাঁহারা এখনও দিতে পারেন নাই।

CBI Supreme Court 2G Scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy