অনুসরণযোগ্য সিদ্ধান্ত কেরল সরকারের। অপরাধ মোকাবিলায় চাবুকটাও যখন কার্যকরী হয় না, তখন লোকলজ্জাকে যে হাতিয়ার করে তোলা যায়, কেরল সে কথা ভাবতে পারল। কোনও পরিস্থিতিতেই অপরাধ বা অপরাধীর সামনে হাল ছেড়ে দেওয়া চলে না, কারণ ইতিবাচক গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য পথের অভাব কোনও দিনই হয় না— ভারতের দক্ষিণতম প্রদেশটি এমনই এক বার্তা দিল।
রাজ্যের সব যৌন অপরাধীর নামের তালিকা প্রকাশ করে দিতে চলেছে কেরলের সরকার। এ যাবৎ যাদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কেরলে, তাদের সবার নাম ওই প্রকাশ্য তালিকায় থাকছে। ভবিষ্যতে যদি কারও বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগ ওঠে এবং তা যদি প্রমাণিতও হয়, তা হলে তাদের নামও ঢুকে পড়বে তালিকাটিতে। স্থায়ী ভাবে নামগুলো থেকে যাবে সেখানে।
যৌন অপরাধ রোখার জন্য কঠোর আইন-কানুন এ দেশে যথেষ্ট রয়েছে। কঠিন শাস্তির সংস্থান রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন আগের চেয়েও সজাগ এ বিষয়ে, বিচার বিভাগ আগের চেয়েও সংবেদনশীল। তবু অপরাধ থামে না। অর্থাৎ আইনের চোখে অপরাধী প্রতিপন্ন হওয়া কারও কারও কাছে তেমন লজ্জার বা অস্বস্তির বিষয় নয় সম্ভবত। যৌন অপরাধীকে এ বার তাই সমাজের চোখে স্থায়ী ভাবে অপরাধী প্রতিপন্ন করার রাস্তায় হাঁটছে কেরল। একটা নিকৃষ্ট তালিকায় নামটা ঢুকে যাবে, আজীবনের জন্য ঢুকে যাবে। আইনি সংস্থান অনুযায়ী সাজার মেয়াদ যদি ফুরিয়েও যায়, যৌন অপরাধীর সামাজিক সাজার মেয়াদ ফুরবে না কোনও দিনই। মুক্ত থেকেও যাবজ্জীবন অদৃশ্য কারাগার থাকবে তাদের ঘিরে। পরিবার, পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত জন, সহ-নাগরিক— প্রত্যেকে জানবেন এই ব্যক্তির নাম ওই ক্লেদাক্ত তালিকাটায় রয়েছে, চিরকালের জন্য রয়েছে।
অপরাধ প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও আজীবন মাথাটা হেঁট করে বাঁচতে চান না যাঁরা, অস্তিত্বের গভীরে ক্লেদ থাকা সত্ত্বেও অনন্ত কালের জন্য নিকৃষ্ট অপরাধের দায়ে দাগী হয়ে যাওয়ার ভয়টা একটু হলেও রয়েছে যাঁদের মধ্যে, তাঁরা সতর্ক হবেন। আর যাঁরা এতেও সাবধান হবেন না, তাঁদের জন্য থাকবে আজীবনের বঙ্কিম সামাজিক দৃষ্টি।
অন্য অনেকে অচিরেই অনুসরণ করতে পারে কেরলের দেখানো এই পথটা। যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের পরিসরটাকে অনেক প্রশস্ত করবে এই অভিনব পন্থা, সংশয় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy