Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্র ও অনাথ শিশু

মুজফ্ফরপুরে যে অনাথ আশ্রমটিতে চৌত্রিশটি কন্যা নিগৃহীত হইয়াছে, তাহার মালিকের সহিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্বামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ উঠিয়াছে। সেই অভিযোগের জেরে মন্ত্রী পদত্যাগ করিতে বাধ্য হন।

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০

বিহারের মুজফ্ফরপুর এবং উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ায় অনাথ আশ্রমে শিশুকন্যাদের ধর্ষণ ও নির্যাতনের যে ভয়ানক ঘটনা সম্মুখে আসিল, তাহা রাষ্ট্রের লজ্জা। রাষ্ট্রের উদাসীনতা এবং মন্ত্রী-আধিকারিকদের দুর্নীতি শিশুদের এই বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ কারণ। রক্ষকই ভক্ষক হইলে এত দিন ধরিয়া এতগুলি শিশুর উপর এমন অবাধ নির্যাতন সম্ভব হয়। মাসের পর মাস শিশুকন্যাদের দিয়া বেশ্যাবৃত্তি করানো হয় ভারতে। ইহার প্রধান কারণ দুর্নীতিগ্রস্ত হোম কর্তৃপক্ষের সহিত রাজনৈতিক নেতাদের ঘনিষ্ঠতা। মুজফ্ফরপুরে যে অনাথ আশ্রমটিতে চৌত্রিশটি কন্যা নিগৃহীত হইয়াছে, তাহার মালিকের সহিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্বামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ উঠিয়াছে। সেই অভিযোগের জেরে মন্ত্রী পদত্যাগ করিতে বাধ্য হন। দেওরিয়ার ক্ষেত্রেও চিত্রটি অনুরূপ। যাঁহার ‘হোম’ হইতে পনেরো জন শিশুকন্যা নিখোঁজ, এবং চব্বিশ জন বালিকা-কিশোরী ধর্ষিত হইবার অভিযোগ উঠিয়াছে, তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে প্রভাবশালী। এই বৎসরই তাঁহার সংস্থার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের কৃষিমন্ত্রী। রাজনৈতিক মদতের কারণেই তাঁহার আশ্রমটি গত বৎসর কালো তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাহা অবাধে চালাইয়াছেন, এমনকি পুলিশ তাঁহার আশ্রমে রাখিয়া আসিয়াছে শিশুদের। পশ্চিমবঙ্গে গত বৎসর শিশুদের ‘হোম’ হইতে পাচারের যে চক্র নজরে আসিয়াছিল, সেখানেও একটি রাজনৈতিক দলের সহিত হোমের পরিচালকের সংযোগের অভিযোগ আসিয়াছিল সম্মুখে। আসিয়াছিল আধিকারিকের নামও। দার্জিলিং জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক গ্রেফতার হইয়াছিলেন।

ইহার অর্থ, আশ্রম মালিক-সরকারি আধিকারিক-রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীর যোগ শিশু নিগ্রহ, শিশু পাচার চক্রের একটি প্রধান শর্ত। এই সংযোগ না থাকিলে এত দীর্ঘ দিন ধরিয়া যৌননিগ্রহ, বেশ্যাবৃত্তি, পাচার, বিক্রয়ের চক্র চলিতে পারে না। যে স্বাধীন সংস্থার ‘অডিট রিপোর্ট’ মুজফ্ফরপুরের আশ্রমে শিশুদের যৌননিগ্রহের কথা ফাঁস করিয়াছে, তাহারই ভিত্তিতে মুঙ্গের, আরারিয়া, মধুবনী, ভাগলপুর, ভোজপুর জেলাতেও শিশু সুরক্ষা আধিকারিকরা সাসপেন্ড হইয়াছেন। উত্তরপ্রদেশে সরকারি অনুদানে শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধদের জন্য আরও অনেক আবাস চলে। রাজনৈতিক ক্ষমতাশ্রিত এই চক্রগুলি কত সুসংবদ্ধ ও কত দূর বিস্তৃত, ভয় ও লোভ দেখাইয়া তাহার কাজ কত নিপুণ ভাবে সুসম্পন্ন করা হইয়া থাকে, তাহার আন্দাজ কি এতই কঠিন? দুই-একটি ঘটনা প্রকাশ পাইয়াছে বলিয়া সামান্য অংশ হইতে আবরণ সরিয়াছে মাত্র। যত বারই কোনও স্বতন্ত্র সংস্থা অনুসন্ধান করিয়াছে তত বারই বেশ কিছু সরকারি, অথবা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেসরকারি হোমের ভয়ানক দশা সম্মুখে আসিয়াছে। মানসিক রোগী, অনাথ শিশু, উদ্ধারকৃত কিশোরী-তরুণীরা ‘আশ্রয়স্থল’ পাইয়া আরও অসহায় হইয়াছেন।

আইনের উপর আইন, নিয়মের উপর নিয়ম চাপাইয়া লাভ কী? যেখানে সমস্যা, সমাধান খুঁজিতে হইবে সেখানে। অপরাধচক্রের সহিত রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ এবং সরকারি আধিকারিকের ঘনিষ্ঠতা শিশুকন্যা ও কিশোরীদের জীবন নরক করিয়া তুলিতেছে। শিশুপাচার, নারীপাচার চক্রগুলি তাহাদের দ্বারাই পুষ্ট। পুলিশও প্রায়ই এই কারবারের ভাগীদার। এ বার সর্ব স্তরের জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধ করিতে হইবে। পুরসভার সদস্য, পঞ্চায়েত সদস্য হইতে সাংসদ, সকলেই নিজ এলাকার ‘হোম’ আবাসিকদের দায়প্রাপ্ত, কারণ তাঁহারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। হোমে কোনও নিপীড়ন হইলে তাঁহারা কেন দায় এড়াইবেন? তাঁহাদের প্রতি কঠোর না হইলে এমন সঙ্কট চলিতেই থাকিবে। সদিচ্ছা প্রমাণের দায় সম্পূর্ণত প্রশাসনেরই।

Girl Child State Molestation Torture
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy