Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Swami Vivekananda

স্বামীজির আদর্শকে পাথেয় করুক যুবসমাজ

সম্প্রতি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অনুষ্ঠান পালন করা হয়। কিন্তু যুবসমাজের ক’জন স্বামীজির আদর্শ মেনে চলেন তা নিয়ে সন্দেহ জাগে। সুকমল দালাল।১২ জানুয়ারি ছিল স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। বাংলা ভাষার প্রতি বিবেকানন্দের অপার ভালবাসা ছিল। তাঁর উচ্চারিত বাণী বর্তমান যুবসমাজের কাছেও সমান প্রসঙ্গিক।

স্বামী বিবেকানন্দ।

স্বামী বিবেকানন্দ।

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৪
Share: Save:

বর্তমানে অভিভাবকদের মধ্যে তাঁদের সন্তানদের ইংরেজি ভাষায় স্কুলে পড়ানোর প্রবণতা ক্রমে বেড়েই চলেছে। মানছি কাজকর্মের ক্ষেত্রে এই ভাষার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু আগে তো মাতৃভাষাকে ভাল ভাবে জানা দরকার।

ছোটবেলায় পড়েছিলাম ‘মাতৃ দুগ্ধের ন্যায় মাতৃভাষা’। কিন্তু আজকের সমাজ বোধহয় তা মানে না। বা মানলেও তাঁদের কাজেকর্মে নিজের ভাষার প্রতি সম্মান বা ভালবাসা প্রকাশ পায় না। অনেকক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, সন্তান বাংলায় কাঁচা বলে বাবা-মা রীতিমতো গর্বিত। এই মানসিকতা ভয়াবহ। ইংরেজি ভাষা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, নিজের ভাষাকে অবহেলা করার যৌক্তিকতা তাতে খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ কিন্তু সযত্নে লালন করে চলেছে মাতৃভাষা বাংলাকে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে বাংলা ভাষা দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। এর আগেও ২০০২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট দেশ সিয়েরা লিওন বাংলা ভাষাকে সম্মানসূচক সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। মার্কিন মুলুকে বাংলা ভাষার জয় জয়কার। সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। তাই এই ভাষা গর্ব করার মতো।

১২ জানুয়ারি ছিল স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। বাংলা ভাষার প্রতি বিবেকানন্দের অপার ভালবাসা ছিল। তাঁর উচ্চারিত বাণী বর্তমান যুবসমাজের কাছেও সমান প্রসঙ্গিক। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কতজন ছাত্রছাত্রী বিবেকানন্দকে মন দিয়ে পড়েছে বা ভাল করে চেনার চেষ্টা করেছে? তাঁকে মন দিয়ে পড়া দরকার। বিবেকানন্দের বাংলা রচনা আয়তনে স্বল্প হলেও, তাঁর শব্দচয়ন কৌশল ও প্রকাশভঙ্গির বৈশিষ্ট্য অনন্য। তিনি মনে করতেন পড়ার প্রকৃত আনন্দ মাতৃভাষাতেই সম্ভব। আনন্দসুলভ শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী যথার্থই জীবনে উন্নতি সাধন করে। তাই বর্তমান সময়ে ইংরেজি শিক্ষার মোহে আচ্ছন্ন শিক্ষিতদের ভাবা দরকার আমাদের মাতৃভাষা তথা বাংলা ভাষার গুরুত্ব। বিবেকানন্দের বাংলা ভাষা চর্চা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখায় সাধু ও চলিত গদ্যের মিশ্রণ বাঙালির মুখের ভাষা, বাংলা সাহিত্যের ভাষা হয়ে উঠবে— এই বিশ্বাস ছিল স্বামীজির।

স্বামীজির মৃত্যুর পর বহু বছর কেটে গিয়েছে। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে মনে প্রশ্ন জাগে, তিনি যে সংকল্প নিয়েছিলেন স্বপ্নের ভারতবর্ষ গড়ার, তা কি আদৌও অগ্রসর হয়েছে? শুধু ভাষার ক্ষেত্রেই নয়, আরও বহু ক্ষেত্রে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। অন্ত্যজ শ্রেণিকে এখনও তো অনেক জায়গায় ছোটো হয়ে বসবাস করতে হয়। ধর্মীয় সন্ত্রাস, হানাহানি কমেনি। যুদ্ধ, রক্তপাত ঘটেই চলেছে। বহু মানুষ আশ্রয়হারা। রাজনীতি, সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি —সব স্তরে দেখা দিয়েছে এক ধরনের অবক্ষয়ের বাতাবরণ।

স্পষ্টত যুবদিবস আনুষ্ঠানিক ভাবে পালন করা হলেও, যুবসমাজের ক’জন স্বামীজিকে চেনে তা নিয়ে সন্দেহ জাগে। তাই শিক্ষার্থীদের ছোটো থেকেই স্বামীজির রচনা সম্পর্কে অবহিত করা দরকার। এমন সঙ্কটের সময়ে স্বামীজির দেখানো পথ ও পরামর্শ আমাদের অন্যতম পাথেয় হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swami Vivekananda Idol Youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE