Advertisement
E-Paper

প্রস্থানপর্ব

কোন পরিসংখ্যান এ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর হস্তগত জানা নাই, তবে বাস্তব পরিস্থিতি যে তাঁহার হাতের বাহিরে, তাহা বুঝিতে খবর করিতে হয় না।

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০০:০১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অতীতের ভারত ছিল বিশ্ববিদ্যাতীর্থপ্রাঙ্গণ। অতীতের বাংলাও ছিল ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ঠিকানা, অভিভাবকেরা মুখে সগর্ব হাসি ফুটাইয়া আপন-আপন সন্তানদের বঙ্গের গৌরবময় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পৌঁছাইয়া দিতেন। তাহার পর অনেক জল গড়াইলেও গঙ্গা শীর্ণতর ও শিক্ষার চিত্রটি জীর্ণতর হইয়াছে। এই বৎসর রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মেধাতালিকার শীর্ষে থাকা ছাত্রছাত্রীরা বলিলেন, তাঁহাদের প্রথম পছন্দ বাংলার নহে, অন্য রাজ্যের ভিন্ন শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সংবাদমাধ্যমে তাহা খবর হইল, শোরগোলও হইল। বিরক্ত শিক্ষামন্ত্রী শুনিয়া বলিলেন, কৃতী ছাত্রছাত্রীদের ভিন্ রাজ্যে পড়িতে যাওয়া নূতন নহে, আগেও ঘটিয়াছে। জ্যোতি বসু, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ও তো ব্যারিস্টারি পড়িতে বাংলার বাহিরে গিয়াছিলেন। মন্ত্রীর বক্তব্য, বরং রাজ্যের শিক্ষার হাল এখন বিলক্ষণ ভাল, শিক্ষার্থীরা অন্য রাজ্যে যাইতেছেন কম।

কোন পরিসংখ্যান এ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর হস্তগত জানা নাই, তবে বাস্তব পরিস্থিতি যে তাঁহার হাতের বাহিরে, তাহা বুঝিতে খবর করিতে হয় না। ঘরে ঘরে কান পাতিলে শুনা যায়, দ্বাদশ শ্রেণির পরে বঙ্গবিদায়ই শিক্ষার্থী-জীবনের প্রধান লক্ষ্য হইয়া উঠিয়াছে। এক কালে ইহা ঘটিত স্বেচ্ছায়। এখন ঘটিতেছে অনন্যোপায় হইয়া। এইমাত্রই তফাত। উচ্চশিক্ষা-প্রার্থী ছেলে বা মেয়ে চাপে পড়িয়া নিজ পরিবার বন্ধু ও রাজ্য ছাড়িয়া যাইতেছে, ইহাই কি যথেষ্ট বিপদসঙ্কেত নহে? শিক্ষামন্ত্রী হয়তো তিন দশক পূর্বের ‘ব্রেন ড্রেন’ বা প্রতিভার নির্গমন তত্ত্বের প্রসঙ্গে পুরাতন উদাহরণসকল টানিতেছেন। তিনি জানেন না বা জানিয়াও বুঝিতেছেন না, তখন কথা উঠিত সর্বোত্তম ফলাফল বা শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের অধিকারী শিক্ষার্থীদের রাজ্য বা দেশ ছাড়িয়া যাওয়া লইয়া, আজিকার ন্যায় মেধা-নির্বিশেষে যে কোনও ছাত্রছাত্রীর প্রস্থান লইয়া নহে। সামান্য সমীক্ষা করিলেই বাহির হইয়া পড়িবে, ইদানীং উচ্চশিক্ষালাভার্থে বাহিরে চলিয়া যাওয়াটাই দস্তুর। বাংলায় থাকিয়া যান তাঁহারাই, যাঁহারা সুযোগ পান নাই, অথবা আর্থিক বা পারিবারিক কারণে নিতান্ত অপারগ। হৃদয়ের কথা নির্ভয়ে বলিবার সুযোগ পাইলে তাঁহারা স্বীকার করিতেন, এই রাজ্যে রহিয়া গেলেন নিছক দায়ে পড়িয়া। অবস্থা এত মন্দ হইয়াছে শিক্ষায় আপাদমস্তক রাজনীতির কুপ্রভাবে। নিয়োগে স্বজনপোষণ হইতে আরম্ভ করিয়া পঠনপাঠন ও পরিকাঠামোর প্রতিটি স্তরে পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ ও দুর্নীতির ফলভোগ করিতে হয় যে শিক্ষার্থীদের, তাঁহারা পড়িয়া থাকিবেন কোন দুরাশায়!

শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁহার দফতর যদি ইহাকে সঙ্কট বলিয়া মানিয়া লন, তাহা হইলেও সমাধানসূত্র বাহির করিতে দীর্ঘ কাল লাগিতে পারে, কারণ সমস্যা ঘনাইয়াছে বিগত কয়েক দশক ধরিয়া। আজ তাহাকে পাকড়াইয়া ধরিলে, সদিচ্ছা-সহ সক্রিয় হইলে সমস্যার নিরসনে আগামী তিন দশক কাটিয়া যাওয়াও বিচিত্র নহে। কিন্তু সর্বপ্রথম কাজ হইল সঙ্কটকে স্বীকার করিয়া ময়দানে নামা। বঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী তাহা করিবেন, শিক্ষাক্ষেত্রে সুস্থ সংস্কৃত আবহাওয়া ফিরাইয়া ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরাইবেন, প্রবল আশাবাদীও এমত আশা করেন না। শুধু কাণ্ডজ্ঞানরহিত মন্তব্য করিবার আচরণটি সামলাইলে ভাল। নিরুপায় ম্রিয়মাণ শিক্ষার্থীদের মনের ক্ষতগুলি তাহাতে নুনের ছিটা হইতে বাঁচিয়া যায়।

Education Students West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy