Advertisement
E-Paper

বিজ্ঞানের নীতি

রাজনীতির সহিত বিজ্ঞানের সম্পর্কটি কোনও কালে মধুর নহে। জিয়োর্দানো ব্রুনো কিংবা গালিলেয়ো গালিলেই-এর মৃত্যুদণ্ড কিংবা হেনস্তা ওই কটু সম্পর্কের নিদর্শন।

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০০:০০

রাজনীতির সহিত বিজ্ঞানের সম্পর্কটি কোনও কালে মধুর নহে। জিয়োর্দানো ব্রুনো কিংবা গালিলেয়ো গালিলেই-এর মৃত্যুদণ্ড কিংবা হেনস্তা ওই কটু সম্পর্কের নিদর্শন। মতাদর্শ বিজ্ঞান গবেষণায় রথের রজ্জু হস্তে ধারণ করিলে সে রথ কোন দিকে অগ্রসর হয়, তাহার আর এক জোরালো প্রমাণ মিলিয়াছিল সমাজতন্ত্রী সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রে। প্রাণীর সাফল্যের মূলে কেবলই ‘নারচার’ (পরিবেশ), উহাতে ‘নেচার’ (জিন) কিছুমাত্র ভূমিকা পালন করে না, ইত্যাকার বিশ্বাসে ট্রোফিম লাইসেনকো রুশ উদ্ভিদবিদ্যা গবেষণাকে পশ্চাতে নিঃক্ষেপ করেন। ইহাতে বিশেষ সায় দিয়াছিলেন স্তালিন, কমিউনিস্ট মতাদর্শের সেরা সমর্থক। সাম্যবাদ যেহেতু উত্তরাধিকারে আস্থা রাখে না, বিশ্বাস স্থাপন করে এই প্রত্যয়ে যে পরিবেশ বদলাইলে সব কিছু সম্ভব, তাই লাইসেনকো আপন তত্ত্বের দ্বারা স্টালিনের আশীর্বাদ লাভ করেন। মতাদর্শের বোঝা স্তালিনের ন্যায় হিটলারেরও কিছু কম ছিল না। আর এই ব্যাপারে তিনি স্তালিনের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করিতেন। হিটলার বিশ্বাস করিতেন জীবের চরিত্রের মূলে পরিবেশের কোনও ভূমিকা নাই, সবটাই উত্তরাধিকার বা নেচার-এর খেলা।

ওই বিশ্বাস কতিপয় জার্মান বিজ্ঞানীর মনেও ঠাঁই পাইয়াছিল। এই বিশ্বাসের কারণে বিশ্ববাসীকে আর্য এবং অনার্য গোষ্ঠীতে বিভক্ত করিয়া গবেষকগণ এই মর্মে নিদান দেন যে, অনার্যেরা বাঁচিয়া থাকিলে পৃথিবীর অমঙ্গল, উহাদের মৃত্যুই সুবিচার। শুধু অনার্যেরা নহে, বিকলাঙ্গ এবং মানসিক ব্যধিগ্রস্ত মানুষেরাও বাঁচিবার অযোগ্য। ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা’র নামে প্রায় দুই লক্ষ জড়বুদ্ধি বা পঙ্গু মানুষকে হত্যা করা হয় তাহাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পরীক্ষার নিমিত্তে। যুদ্ধোত্তর কালে ওই সব পরীক্ষার খবর প্রকাশিত হইলে জার্মান বিজ্ঞান গবেষণা ধিক্কৃত হয়। কিন্তু এক্ষণে তাই জার্মান বিজ্ঞানীদের বড় সংগঠন ম্যাক্স প্লাংক সোসাইটি চার সদস্যের এক কমিটি গড়িয়াছে। যে দুই লক্ষ জড়বুদ্ধি বা বিকলাঙ্গ মানুষকে গবেষণার নামে হত্যা করা হইয়াছিল কমিটি প্রথমে তাহাদের শনাক্ত করিবে। হত্যার পর মৃত ব্যক্তিবর্গের মস্তিষ্ক লইয়া কী কী পরীক্ষা করা হয়, তাহাতে কী কী ফল লক্ষ করা যায়, এবং পরীক্ষাদির ফলাফল জার্নালে কোন কোন পেপারে প্রকাশ পায়, ইত্যাদি বিষয়ে কমিটি তদন্ত করিবে।

ম্যাক্স প্লাংক সোসাইটির উদ্যোগে যে প্রসঙ্গটি আসিয়ে পড়ে, তাহা এথিক্স বা নীতিবোধ। বিজ্ঞান রাজনীতির দাসানুদাস হইলে নীতিবোধ সর্বাগ্রে হারায়, কিন্তু স্বাভাবিক বা চাপমুক্ত পরিস্থিতিতেও গবেষণা নীতিনিষ্ঠ পথে চলে কি না, তাহা তর্কসাপেক্ষ। পশুক্লেশ নিবারকেরা বহুকাল হইতেই গবেষণার নামে পশুহত্যার প্রতিবাদ করিতেছেন। এমনকী পশুগণকে খাঁচায় বন্দি রাখাও যে অনৈতিক, তাহাও গবেষকদিগকে স্মরণ করানো হইতেছে। রোগ নিরাময়ে নূতন ঔষধ কতখানি পটু, তাহা নির্ণয়ে ধাপে ধাপে যে সব পরীক্ষা করা হয়, তন্মধ্যে অন্যতম হইল পশুদেহে ঔষধের ক্রিয়া লক্ষ করা। বিজ্ঞান বহুকাল এই পথে অগ্রসর হইয়াছে। এতদ্ভিন্ন অন্য কোনও পন্থা গবেষকেরা জানেন না। নাৎসি জমানায় গবেষণাকে বর্বরোচিত আখ্যা দেওয়া যায়, কিন্তু তাহাতে বিজ্ঞানের সহিত নৈতিকতার গূঢ় প্রশ্নটিকে এড়ানো যায় না।

Relationship politics science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy