Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নেশাচ্ছন্ন

কাশ্মীরকে শুধুমাত্র এক যুদ্ধক্ষেত্র এবং সন্ত্রাসবাদীদের চারণভূমি হিসাবেই গণ্য করিয়া আসিবার ফলে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের পরিবর্তে বলপ্রয়োগই দিল্লির নির্ভরযোগ্য অস্ত্র হইয়া উঠিয়াছে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৪
Share: Save:

কয়েক দশক ধরিয়া ভারতীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে কাশ্মীর উপত্যকার ‘লড়াই’ চলিতেছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃবৃন্দ আবিষ্কার করিলেন, আরও একটি লড়াই তাঁহাদের অপেক্ষায়, মাদকের নেশা হইতে তরুণ প্রজন্মকে মুক্ত করিবার লড়াই। গত কয়েক মাসে জম্মু-কাশ্মীরে মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনজনিত বেশ কিছু মৃত্যু ঘটিয়াছে। আশঙ্কা গভীরতর কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত দফতরের একটি সমীক্ষায়। সমীক্ষা বলিতেছে, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪.৯ শতাংশ, সংখ্যার হিসাবে প্রায় ছয় লক্ষ নাগরিক মাদক-নেশায় আচ্ছন্ন। মাদক সেবনের নিরিখে পঞ্জাব সবার উপরে, জম্মু-কাশ্মীরও পিছাইয়া নাই। তালিকার পঞ্চম স্থানটি তাহার।

মাদকের নেশা নিঃসন্দেহে যুবসমাজকে আঘাত করে সর্বাধিক। সেই যুবসমাজ, যাহাদের ব্যবহার করিয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃবৃন্দ ‘আজাদ কাশ্মীর’-এর স্বপ্নটি সফল করিতে চাহেন। সুতরাং, পরবর্তী প্রজন্ম মাদকে বেহুঁশ হইলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যে পায়ের তলার মাটি সরিবে, তাহাতে আর আশ্চর্য কী! সেই কারণেই হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ় উমর ফারুক উলেমা এবং ইমামদের উপর মানুষকে সচেতন করিবার গুরুদায়িত্বটি অর্পণ করিয়াছেন। কিন্তু কেবল সচেতন করিলেই কি এই মারণনেশা হইতে মুক্তি মিলিবে? এ কথা সত্য যে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মাদকের অবাধ চোরাচালান পঞ্জাবের মতোই এই রাজ্যের পরিস্থিতিও জটিল করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু ইহাও সত্য, জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণেই যুবসম্প্রদায়ের সঙ্কট ক্রমশ গভীর হইয়াছে। এই অস্থিরতার দায় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃবৃন্দেরই প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করিতে হইবে। রাজ্যের স্থিতাবস্থাকে কয়েক দশক ধরিয়া এই ভাবে ধ্বস্ত করিয়া জঙ্গি আন্দোলন চালাইবার মূল্য দিতেছে বর্তমান যুবসমাজ। দীর্ঘ কাল এই রাজ্যে স্বাভাবিক প্রশাসনিক কাজকর্ম বন্ধ। সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষের পরিণামে পর্যটন ব্যবসা লাটে উঠিয়াছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি গ্রামাঞ্চলে কৃষিকার্যও প্রায় বন্ধ। এক অনন্ত অব্যবস্থায় ডুবিয়াছে উপত্যকা। অবসাদগ্রস্ত পরবর্তী প্রজন্ম নেশার শরণ লইতেছে। নেশা ছাড়াইতে হইলে অবিলম্বে সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের প্রয়োজন।

পরিস্থিতি জটিল করিয়াছে ভারত সরকারও। কাশ্মীরকে শুধুমাত্র এক যুদ্ধক্ষেত্র এবং সন্ত্রাসবাদীদের চারণভূমি হিসাবেই গণ্য করিয়া আসিবার ফলে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের পরিবর্তে বলপ্রয়োগই দিল্লির নির্ভরযোগ্য অস্ত্র হইয়া উঠিয়াছে। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের পর নূতন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দায়িত্ব লইয়া প্রথমেই সেই অস্ত্রে আরও শান দিবার কার্যক্রম ঘোষণা করিয়াছেন। বস্তুত, উপত্যকার নিজস্ব সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব দিয়া তাহার প্রতিকারের ব্যবস্থা না করিয়া বিজেপি সরকার আগাগোড়া সন্ত্রাসকে কাশ্মীরের সমার্থক গণ্য করিয়াছে। কাশ্মীরের সঙ্কট আকারে প্রকারে দ্রুত বাড়িতেছে। মাদকাসক্তির সমস্যাও এই কারণেই ব্যাপকতর হইতেছে। সন্ত্রাসের নেশা ও যুদ্ধং দেহি ভাব ছাড়িয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সরকার স্বাভাবিকতায় না ফিরিলে, সমস্যার মোকাবিলা কঠিন, নেশাগ্রস্ত যুবসমাজকে মূল স্রোতে ফিরাইয়া আনা অসম্ভব। আত্মানুসন্ধান ও দিকপরিবর্তন ছাড়া গত্যন্তর নাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Addiction Kashmir Jammu and Kashmir Drugs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE