Advertisement
E-Paper

কঠিন পাঠ

ভারতের জনসংখ্যায় তরুণ প্রজন্মের অনুপাত অধিক। শিক্ষিত, দক্ষ কর্মী হিসাবে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলে তাহারা দেশের সম্পদ বাড়াইবে, বৃদ্ধিতে গতি আনিবে।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩০

স্কুল-শিক্ষার সহিত কি জ্ঞান লাভের কোনও সম্পর্ক আছে? চৌদ্দ হইতে আঠারো বৎসরের গ্রামীণ কিশোরকিশোরীদের উপর সমীক্ষার ফল বলিতেছে, সংযোগ সামান্যই। কেবল ইংরাজি বা অঙ্কের জ্ঞানে খামতি নহে, সাধারণ জ্ঞানেও ফাঁক রহিয়াছে। আট হইতে বারো বৎসর স্কুল করিয়াও অনেকে দেশের রাজধানীর নাম জানে না। রাজ্যের নাম বলিতে পারে না, মানচিত্রে নিজের রাজ্যকে চিনাইতে পারে না। শিক্ষার এই ব্যর্থতা বিস্ময়কর, বেদনাদায়কও। অর্থের অপচয়ের হিসাব কষিয়া আর লাভ নাই, কিন্তু মানবসম্পদের এই অপচয় কি কোনও দেশ বহিতে পারে? দশ-বারো বৎসর স্কুল-শিক্ষার জন্য রাষ্ট্র যেমন বিনিয়োগ করিয়াছে, পরিবারও কম বিনিয়োগ করে নাই। গ্রামের কৃষিজীবী, শ্রমজীবী পরিবারেও অভিভাবকরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সন্তানকে উৎসাহিত করিতেছেন, তাঁহাদের অধিক উপার্জনের জন্য কাজে লাগাইয়া দিবার প্রবণতা হইতে সরিয়া আসিতেছেন। অথচ সেই সন্তান সুদের অঙ্ক কষিতে পারা, ঘড়ি দেখিয়া সময় বলিতে পারার মতো নিতান্ত সাধারণ দক্ষতাগুলি অর্জন করিতে পারে নাই। ইহা পরিবারের আর্থিক উন্নতির অন্তরায়, তেমনই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও পরিপন্থী।

ভারতের জনসংখ্যায় তরুণ প্রজন্মের অনুপাত অধিক। শিক্ষিত, দক্ষ কর্মী হিসাবে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলে তাহারা দেশের সম্পদ বাড়াইবে, বৃদ্ধিতে গতি আনিবে। কিন্তু অদক্ষ কর্মীর প্রয়োজন এখন সীমিত। ফলে বেকারত্ব বাড়িয়া সমাজ আরও ভারসাম্য হারাইতে পারে। স্কুল-শিক্ষার দৈন্য দেশকে সেই সংকটের দোরগোড়ায় দাঁড় করাইয়াছে। এএসইআর বা ‘অসর’ নামে পরিচিত এই সমীক্ষাটি এক দশক ধরিয়া প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করিয়াছে। তাহার ফল আশাপ্রদ নহে। বিশেষত শিক্ষার অধিকার আইন আসিবার পর পড়িবার বা অঙ্ক কষিবার দক্ষতায় উন্নতি যে আসে নাই বরং অবনতি হইয়াছে, সে তথ্য বারংবার প্রকাশিত হইয়াছে। তবু একটি ক্ষীণ আশা ছিল, হয়তো বয়স বাড়িবার সহিত বুদ্ধি ও মননশীলতার বিকাশের ফলে, দীর্ঘতর অনুশীলনের সুযোগ পাইবার জন্য প্রাথমিকের খামতি পূরণ হইতে পারে। সমীক্ষা দেখাইল, তাহা দুরাশা। বহু ছাত্রছাত্রী একান্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে নাই। তাহাদের মান বস্তুত প্রাথমিক শ্রেণি ছাড়ায় নাই।

পাশ-ফেল প্রথা ফিরাইবার প্রতিশ্রুতিতেও ভরসা করা কঠিন। যদি অষ্টম শ্রেণির এক-তৃতীয়াংশ পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্থান পায়, দশম শ্রেণির এক-চতুর্থাংশ ফিরিয়া যায় চতুর্থ শ্রেণির অঙ্ক ক্লাসে, তাহা ছাত্রের ব্যর্থতা, না শিক্ষা ব্যবস্থার? অপর প্রশ্ন, শিক্ষার মান নিশ্চিত করিবার উপায় স্থির না করিয়া শিক্ষার খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াইবার দাবি কতটা সংগত। যে অপচয় দৃষ্টি এড়াইয়া যায়, তাহা কয়েক লক্ষ শিশুর শৈশব, কৈশোরের অপচয়। যে তৃতীয় শ্রেণির বই পড়িতে হোঁচট খায়, দ্বিতীয় শ্রেণির অঙ্ক কষিতে পারে না, নবম কিংবা দশম শ্রেণির কক্ষে বসিয়া তাহার কী দুর্বিষহ দিন কাটিতেছে, অনুমান করা সহজ নহে। বই পড়ার আনন্দ, চিন্তার মুক্তি তাহার কিছুই জোটে নাই। পাঠ্যবই, শ্রেণিকক্ষ সেই নাচার ছাত্রের দৃষ্টিতে দেখিতে শিখিলে হয়তো শিক্ষাকে ‘আলো’ বলিতে দ্বিধা হইত।

education system West Bengal School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy