Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

এই পশ্চাদপসরণ বিপজ্জনক হল

জরুরি ছিল আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু তা হল না, উল্টো পথে হেঁটে আচমকা নরম হয়ে গেল তৃণমূল।

কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র

কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

আঘাতটা তো ঠিক জায়গাতেই করেছিলেন। তা হলে পরবর্তী পদক্ষেপটা নিচ্ছেন না কেন? কাটমানি প্রসঙ্গে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা রাজ্যে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার যে আশঙ্কা মাথা তুলছে, তা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। অন্যায় যদি হয়ে থাকে, তার বিহিত হওয়াও জরুরি। কিন্তু বিহিতটা হতে হবে আইনি পথে অথবা কোনও সুশৃঙ্খল উপায়ে। না হলে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এই কাটমানি বিতর্ক।

মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী কাটমানি খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতেই যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গিয়েছে। রাজ্যের প্রতিটা প্রান্তে বিভিন্ন স্তরের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। অভিযোগ উঠলেই কেউ অপরাধী হয়ে যান না, অপরাধ প্রমাণিত হতে হয়— এ কথা ঠিক। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক তদন্ত বা আদালতের মাধ্যমে এই অপরাধ প্রমাণ করার প্রয়োজনই পড়ছে না অনেকগুলো ক্ষেত্রে। অভিযুক্ত নেতাদের অনেকেই এক ধরনের গণআদালতের সামনে নিজেদের অপরাধ কবুল করছেন, মুচলেকা দিচ্ছেন, টাকাও ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন যা বলেছিলেন, তা যে ভিত্তিহীন নয়, সে কথা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে এই ঘটনাপ্রবাহেই। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহের এই পথ ধরে এগনো উচিত নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যখন জেনেই গিয়েছিলেন যে, দলের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের থেকে কাটমানি খেয়েছেন, তখন দলের তরফ থেকেই সর্বাগ্রে ব্যবস্থাটা নেওয়া উচিত ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কঠোর বার্তাটা দিলেন ঠিকই, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই বিবৃতি প্রকাশ করে সে বার্তাকে লঘুও করে দেওয়া হল। তৃণমূলের ৯৯.৯৯ শতাংশই সৎ— এমনটা দাবি করা হল। রাজ্যে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি কিন্তু তৃণমূলের এই সংখ্যাতত্ত্বকে সমর্থন করছে না। পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে বরং। আবার বলছি, আঘাতটা তো ঠিক জায়গাতেই করা হয়েছিল। জরুরি ছিল আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু তা হল না, উল্টো পথে হেঁটে আচমকা নরম হয়ে গেল তৃণমূল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: তোলাবাজির অভিযোগ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে, হাইকোর্টে মামলা ব্যবসায়ীর

ধরে নিলাম, দলের তরফ থেকে এই বিষয়ে খুব বেশি কঠোর পদক্ষেপ করা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনকে কাজে লাগানো যেতে পারত। কোনও নির্দিষ্ট উপায় খুঁজে বার করে সংগঠিত পথে দুর্নীতির মোকাবিলা করা যেতে পারত। রাজ্যের জনসাধারণকে বার্তা দেওয়া যেতে পারত যে, কাটমানি নামক ভ্রষ্টাচারের সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না। কিন্তু তা হল না। প্রথমে অভিযোগটাকে স্বীকৃতি দেওয়া হল, তার পরে যেন ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হল। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল ও বিপজ্জনক হচ্ছে অতএব। গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ হচ্ছে, কোথাও কোথাও তা হিংসাত্মক চেহারা নিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কাটমানি-বিক্ষোভে কোনও বিপর্যয়ের খবর আসেনি, এ আমাদের সৌভাগ্য। কিন্তু ক্ষোভ যে রকম দাবালনের মতো ছড়াচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছেই। কোনও সুসংহত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এই রকম ভাবে অন্যায়ের বিহিত হয় না। কোনও অনিয়ন্ত্রিত গণআদালতের হাতে বিচারের ভার ন্যস্ত হতে পারে না। এ কথা রাজ্যের শাসক দল এবং প্রসাশন যত দ্রুত বোঝে এবং যত দ্রুত সক্রিয় হয়, ততই মঙ্গল। তবে সক্রিয়তাটা কিন্তু ইতিবাচক হওয়া চাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE