Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবিম্ব

কাহার ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাস কী রূপ হইবে, তাহা একান্তই তাঁহার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু তুলসী গ্যাবার্ড আলোচ্য হইয়া উঠিয়াছেন তাঁহার দলীয় পরিচয়ের কারণেও।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

তিনি ভারতকে ভালবাসেন। আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, হিন্দু ভারতকে ভালবাসেন। হিন্দুধর্ম তাঁহার মতে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, গীতা শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে গীতা উপহার দিয়াছিলেন। মার্কিন কংগ্রেসের একমাত্র হিন্দু প্রতিনিধি তুলসী গ্যাবার্ডের এই কৃতি খবরের শিরোনাম হইয়াছিল। রাজনীতির অঙ্গনে আনুষ্ঠানিক প্রবেশকালে যে গীতা হস্তে লইয়া তিনি শপথবাক্য পাঠ করিয়াছিলেন, ইরাকে ‘ওয়ার ডিউটি’র সময়েও যাহা ছিল তাঁহার নিত্যসঙ্গী, ব্যক্তিগত স্মৃতিবিজড়িত সেই গ্রন্থটিই নরেন্দ্র মোদীকে দেওয়ায় তুলসীর নামে ধন্য-ধন্য রব তুলিয়াছিল আমেরিকার হিন্দু ভারতীয়রা। হিন্দু জীবনবোধের প্রতি তাঁহার গোঁড়া ভক্তি তাঁহাকে অনাবাসী হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয়দের পরম বন্ধু করিয়া তুলিয়াছে। তুলসীর নির্বাচনী প্রচারে হিন্দুত্ববাদীদের বড় অবদান দেখা গিয়াছে। আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল নাগরিক সভা-অনুষ্ঠানে বারংবার দেখা গিয়াছে তুলসীকেও। আগামী বৎসর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে মনোনয়নের দৌড়ে থাকা তুলসীকে বলা হইতেছে আমেরিকার ‘সঙ্ঘ ম্যাসকট’।

কাহার ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাস কী রূপ হইবে, তাহা একান্তই তাঁহার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু তুলসী গ্যাবার্ড আলোচ্য হইয়া উঠিয়াছেন তাঁহার দলীয় পরিচয়ের কারণেও। তিনি ডেমোক্র্যাট দলের প্রতিনিধি— যে দল সচরাচর উদারপন্থী ও গণতান্ত্রিক পথের পথিক। যে বহুত্ববাদ ও মানববৈচিত্রের উদ্‌যাপন আমেরিকার ভিত্তি, ডেমোক্র্যাটরা তাহার প্রচার-প্রসারে বদ্ধপরিকর। তুলসীর রক্তেও বহুত্ববাদ: পিতা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ আমেরিকান সামোয়ার শ্বেতাঙ্গ অধিবাসী, আবার মাতা শ্বেতাঙ্গ হইয়াও গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মে বিশ্বাসী। সুতরাং পারিবারিক এবং দলীয় মতাদর্শের দিক দিয়া দেখিলে সর্বমতসহিষ্ণুতা তাঁহার কাছে প্রত্যাশিত। তুলসীর প্রকাশ্য ভাবমূর্তিটি অবশ্য তাহা বলে না। তাঁহার প্রতীতি হিন্দুধর্মে, ভক্ত-বন্ধুগণের নিকট তিনি এই ধর্মে ফিরিবারই আহ্বান জানান। ইহা শিকড়ে ফিরিবার আহ্বান বটে, তবে নিতান্ত সঙ্কীর্ণ অর্থে। এক দিকে উদার পারিবারিক ও দলীয় মতাদর্শ, অন্য দিকে একধর্মদর্শিতা, তুলসীর জীবন এই বৈপরীত্যের উদাহরণ। যে মুক্ত আবহের ফসল তিনি, তাঁহার ধ্যানধারণায় সেই মুক্তির চিহ্ন নাই।

এই বৈপরীত্য কি তুলসীর রাষ্ট্রের বর্তমান চিত্রও নহে? আমেরিকায় এখন একটি ধর্ম বা বর্ণের মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবিতে গুলি চলে, ব্যাপক প্রাণহানি হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবৃতি দেন, তাঁহার রাষ্ট্রে ঘৃণা ও হিংসার স্থান নাই। অথচ প্রেসিডেন্টের জাতিবিদ্বেষ যে প্রকাশ্য ও গভীর, সমগ্র আমেরিকাই তাহা জানে। তিনি মুসলমান দেশগুলির নাগরিকদের জন্য আমেরিকার দরজা বন্ধ রাখিতে বলেন। দক্ষিণপন্থী ও উগ্র রাষ্ট্রবাদীরা তাঁহার উদ্ধত মন্তব্য হইতে হিংসার ইন্ধনটুকু কুড়াইয়া লয়। তাঁহার মুখেই আবার শান্তির ললিত বাণী? মনে হয়, সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করিতে চাওয়ার মার্কিন ঐতিহ্য এবং শ্বেতাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার আস্ফালন, এই দুইয়ের মধ্যে পড়িয়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-এর মতো তাঁহার দেশও বিভ্রান্ত, দীর্ণ। সেই সার্বিক বৃহতের ছায়া পড়িতেছে ব্যক্তি-রাজনীতিকের দর্পণেও। তুলসীর ভাবমূর্তি সেই অর্থে তাঁহার দেশের বর্তমান বিভ্রান্তির প্রতিফলন বলা চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tulsi Gabbard Narendra Modi BJP USA India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE