Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দূরশিক্ষার সঙ্কট

দূরশিক্ষার বিপণনে রাশ টানিবার প্রয়োজনও আছে। ভারতে দূরশিক্ষা প্রায় ডিগ্রি বিক্রয়ের বাজার হইয়া উঠিয়াছিল। গত বৎসর কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অপর সকল প্রতিষ্ঠানের দূরশিক্ষার অনুমোদন বাতিল করিয়াছে। এখন তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও সতর্ক করিতে চাহে। কিন্তু ইহাও ঠিক যে, ভারতে উচ্চশিক্ষার্থীদের এগারো শতাংশের ভরসা দূরশিক্ষা, এ রাজ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশ।

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ভারতের কয়েক লক্ষ উচ্চশিক্ষার্থী আজ সঙ্কটে। যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষার পাঠ্যক্রম ছিল, তাহাদের অধিকাংশের অনুমোদন বাতিল করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। সেগুলির মধ্যে পঁয়ত্রিশটি রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়। পশ্চিমবঙ্গে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তালিকায় ওঠে নাই, সেগুলি এই বৎসরে ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে নাই। তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্রে দূরশিক্ষার জন্য পরিচিত বেশ কিছু প্রাচীন, সুপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন হারাইবার জন্য রীতিমতো আলোড়ন পড়িয়াছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের দ্বারস্থও হইয়াছে। উপাচার্যদের সহিত কমিশনের কর্তাদের বিতর্ক শুরু হইয়াছে। কমিশনের বক্তব্য, শিক্ষার মান নিশ্চিত করিতে হইবে। দূরশিক্ষার গুণগত মান ও পরিকাঠামো বিষয়ে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় অতিশয় শিথিল। যথেষ্ট শিক্ষক নাই, ক্লাসের পঠনপাঠনের মান উপযুক্ত নহে। অতএব বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়নের কমিটি ‘নাক’-এর রিপোর্টে একটি নির্দিষ্ট নম্বর না পাইলে দূরশিক্ষার অনুমোদন মিলিবে না। উপাচার্যদের বক্তব্য, নিয়মিত বিভাগে ‘নাক’ পরিদর্শন করিয়া থাকে, দূরশিক্ষা বিভাগের মূল্যায়ন কখনও করে নাই। কোন মানদণ্ডে, কী করিয়া বিচার হইল, কেনই বা কোনও আলোচনায় না বসিয়া সহসা তাহা ঘোষণা করা হইল, সে বিষয়ে তাঁহারা অন্ধকারে।

প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ। দূরশিক্ষার বিপণনে রাশ টানিবার প্রয়োজনও আছে। ভারতে দূরশিক্ষা প্রায় ডিগ্রি বিক্রয়ের বাজার হইয়া উঠিয়াছিল। গত বৎসর কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অপর সকল প্রতিষ্ঠানের দূরশিক্ষার অনুমোদন বাতিল করিয়াছে। এখন তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও সতর্ক করিতে চাহে। কিন্তু ইহাও ঠিক যে, ভারতে উচ্চশিক্ষার্থীদের এগারো শতাংশের ভরসা দূরশিক্ষা, এ রাজ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশ। অধিকাংশই দরিদ্র ও প্রান্তবাসী, পঞ্চান্ন শতাংশ মহিলা। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে দূরশিক্ষায় নাম লিখাইয়াছে সাড়ে পাঁচ লক্ষ পুরুষ, ছয় লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার মহিলা। ভারতে আজও তরুণ-তরুণীদের (১৮-২৩ বৎসর) মাত্র পঁচিশ শতাংশ উচ্চশিক্ষায় নিরত। চিনে এই হার চল্লিশ শতাংশ ছাড়াইয়াছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পঁচাশি শতাংশ। উন্নত দেশ হইবার স্বপ্ন পূরণ করিতে হইলে ভারতকে সত্বর অন্তত তিরিশ শতাংশ তরুণ-তরুণীকে উচ্চশিক্ষায় আনিতে হইবে। অথচ সকলকে শ্রেণিকক্ষে আনা সম্ভব হইবে না। এ রাজ্যে প্রতি লক্ষ ছাত্রছাত্রীর জন্য কলেজের সংখ্যা মাত্র এগারো। দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে তাহা চল্লিশের অধিক। গড়ে ভারতে প্রতি লক্ষ পড়ুয়ার জন্য ত্রিশটিও স্নাতক স্তরের কলেজ নাই। স্নাতকোত্তরের কথা না তুলিলেই ভাল।

অতএব উচ্চশিক্ষার প্রচারে অন্যতম ভরসা দূরশিক্ষা। তাহাতে সমাজে উপেক্ষিত শ্রেণির নিকট শিক্ষা পৌঁছানোর কাজটিও হইবে। সেই শিক্ষা নিরর্থক ডিগ্রি হইলে চলিবে না। কিন্তু শিক্ষার মান উন্নত করিতে গিয়া যদি ছাত্রেরা শিক্ষা হইতেই বঞ্চিত হয়, আক্ষেপের অন্ত থাকিবে না। এ বৎসর যে ছাত্রছাত্রীরা দূরশিক্ষায় ভর্তি হইতে চাহে, তাহাদের কত সময় নষ্ট হইবে, তাহা স্পষ্ট নহে। যাহারা ভর্তি হইয়াছে, তাহাদের পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করা হইবে কি না, তাহাও অনিশ্চিত। এই কি সংস্কার?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE