আগে বাজেটে একটা বড় জায়গা থাকত পরিকল্পনা খাতে খরচ। কিন্তু যোজনা পরিষদ তুলে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও আজ ইতিহাস। তাই আগামী বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্যের প্রশ্নের উত্তর কী মেলে তার জন্য একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অবশ্য টিঁকে আছে অর্থ কমিশন।
সবাই সাগ্রহে তাকিয়ে আছে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের রিপোর্টের দিকে। রাজস্ব বন্টনের দিশা তৈরি করে অর্থকমিশন। আগামী ১ এপ্রিল, কমিশন রিপোর্ট দাখিল করবে। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে এই কমিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ বারের কমিশন গঠনের সময় যে শর্ত কমিশনকে দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে কমিশন ঠিক কতটা তা করে উঠতে পারবে সেটা দেখার জন্য আগ্রহ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
এক দিকে যেমন যোজনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তেমনই পাশাপাশি উঠে এসেছে জিএসটি কাউন্সিল। দু’বছর হতে চলল, এই নতুন কর ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা কিন্তু রয়েই গিয়েছে। এই বাজেটে সবাই কিন্তু চাইছে জিসটি ব্যবস্থায় কর আদায়ের একটা স্থিতিশীলতার দিশা। কেন্দ্রই বা কী ভাবছে তাও জানতে চায় সংশ্লিষ্ট মহল। আইনি দিক ও কর ব্যবস্থার মধ্যে যে বৈপরীত্য আছে বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, তা ভাঙতে সবাই কিন্তু একটা সরকারের দিক থেকে একটা স্বচ্ছ অবস্থান খুঁজে চলেছে।
আরও পড়ুন: দেশের সমৃদ্ধি কি নিয়মের ফাঁসে আটকে গেল?
আগে বাজেটের দিন ছিল সরকারের আর্থিক ভাবনা উন্মোচনের দিন। সেই দিনই সরকার তার আর্থিক নীতি ঘোষণা করত। কিন্তু এখন গোটা বছর ধরেই নতুন নীতি আসে, বদলায়। বাজেট বক্তৃতার সেই ওজন এখন আর নেই। এর একটা সমস্যা আছে। এর ফলে তৈরি হয় নীতি-অনিশ্চয়তা। আর এই খানেই ঠোক্কর খান লগ্নিকারীরা। তাঁরা একটি নির্দিষ্ট নীতির আবহে টাকা ঢালতে চান। কিন্তু নীতি যদি ঘন ঘন বদলাতে থাকে, তা হলে তাঁরা তাঁদের বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়ান। আর এই জায়গাটা কোনও লগ্নিকারীই পছন্দ করেন না। চলতি বাজেটেও আমরা দেখলাম, করের অঙ্কের থেকে কিন্তু সরকারের রাজনৈতিক স্বপ্নই জোর পেয়েছিল বেশি।
আরও পড়ুন-আর্থিক বৃদ্ধির রাস্তায় ফিরতে গেলে বাজেটে অনেকগুলো স্বচ্ছতা জরুরি
চলতি আর্থিক বছরেও আমরা দেখলাম, বাজেটের আগে বা পরেই গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক নীতিগুলো ঘোষিত হতে। ব্যবসার ক্ষেত্রে কর ছাড়ের ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রায় সবই। বাজেটের বাইরে গিয়ে এই সব ঘোষণা কিন্তু বাজেটের গুরুত্বই কমিয়ে দিচ্ছে। বাজেটের প্রতিশ্রুতি আর তা মেনে বরাদ্দের সাযুজ্য এখনও সেই ভাবে কিন্তু খুঁটিয়ে দেখা হয়নি। তবে মাথায় রাখতে হবে, বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিই হল প্রতিশ্রুতি, বরাদ্দ এবং খরচের মধ্যে সাযুজ্য।
(লেখক অর্থনীতিবিদ এবং এনআইপিএফপি-র শিক্ষক)
(এই লেখাটি তিন কিস্তির। এটি দ্বিতীয় কিস্তি।)