Advertisement
E-Paper

দেশের সমৃদ্ধি কি নিয়মের ফাঁসে আটকে গেল?

নির্দিষ্ট নিয়মে সরকার যদি ঋণ করে এবং তা খরচ করে, তা হলে তা আর্থিক বৃদ্ধিকে মসৃণ করবে।

লেখা চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৫:৩৭
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যাই করুক না কেন, তা সবটাই হবে মুদ্রাস্ফীতিকে একটা লক্ষ্যমাত্রায় ধরে রাখতে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যাই করুক না কেন, তা সবটাই হবে মুদ্রাস্ফীতিকে একটা লক্ষ্যমাত্রায় ধরে রাখতে।

ফিসক্যাল রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট। নামেই মালুম যে আইনটি চাইছে রাজকোষ পরিচালনায় দায়বদ্ধতা। আর রাজকোষ পরিচালনা মানেই তো বাজেট পরিচালনা। একই সঙ্গে, কয়েক বছর আগেই কেন্দ্রীয় বাজেটে মুদ্রানীতি পরিচালনা করার জন্য নির্দিষ্ট পথ নির্ধারণ করার কথা ভাবা হয়। এই ভাবনার রূপায়ণে এর পরপরই কেন্দ্রীয় সরকার মুদ্রানীতির পরিচালক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করে। এই চুক্তি অনুযায়ী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মুদ্রানীতি পরিচালনার জন্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে মেনে নেয়। অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যাই করুক না কেন, তা সবটাই হবে মুদ্রাস্ফীতিকে একটা লক্ষ্যমাত্রায় ধরে রাখতে।

আমরা জানি বাজেটে সরকার কর বসিয়ে টাকা তোলে এবং তা খরচ করে। যে খরচ করের টাকায় কুলায় না, সেই খরচের জন্য সরকার ধার বা ঋণ করে। এ বার প্রশ্ন হল, সরকার কতটা ধার করবে। ধার করে দেশ চালাতে গেলে আবার নানান সমস্যা। এক দিকে প্রয়োজনের খরচ, অন্য দিকে জিনিসের দাম বাড়ার সম্ভাবনা। তাই দুই দিক সামলাতে এই আইন ও চুক্তি।

এই আইনে ঋণ করার নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে দেওয়া আছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জন্য। নির্দিষ্ট নিয়মে সরকার যদি ঋণ করে এবং তা খরচ করে, তা হলে তা আর্থিক বৃদ্ধিকে মসৃণ করবে। কিন্তু তা কি হয়েছে? এ ব্যাপারে যা তথ্য আছে তা থেকে এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-তে দেওয়া মুশকিল। তবে হ্যাঁ, নির্দিষ্ট নিয়মের নিগড়ে বেঁধে কর নীতি পরিচালনার পক্ষে যাঁরা সওয়াল করেন, তাঁদের দিকে পাল্লা ভারি হচ্ছে। ভারতে সম্পদ সৃষ্টির হার কিন্তু খুব ভাল নয়। কারণ, এত দিন শুধুই কিছু লক্ষ্য মাথায় রেখে কোষাগার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলে এসেছে। করনীতিও চলেছে সেই তালে তাল মিলিয়েই। এই নীতি যে একটা নির্দিষ্ট রাস্তা ধরে এগনো উচিত তা মাথায় রাখা হয়নি।

আরও পড়ুন-বাজেটের গুরুত্ব কিন্তু ক্রমশ কমে যাচ্ছে

এই আইন চালু হওয়ার পরে রাজ্যগুলি কেন্দ্রের তুলনায় সম্পদ তৈরিতে কিন্তু অনেক বেশি মনোযোগী হয়েছে। আগে, রাজ্যগুলি নিজের বাজেট তৈরির জন্য অপেক্ষা করত কেন্দ্র তার বাজেটে রাজস্ব বন্টন কী ভাবে করে দেখে নিতে। তার ভিত্তিতে তৈরি হত রাজ্য বাজেট। এক দিকে বছরের বেশ কিছু দিন এতে নষ্ট হত, অন্য দিকে প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যেত টাকার জোগান নিয়ে। এই আইন চালু হওয়ার পরে সেই অনিশ্চয়তাটা গিয়েছে বলেই, রাজ্যগুলি আগে থেকেই জানে রাজস্ব বন্টনের দিশা কোন দিকে।

আরও পড়ুন-আর্থিক বৃদ্ধির রাস্তায় ফিরতে গেলে বাজেটে অনেকগুলো স্বচ্ছতা জরুরি

পাশাপাশি তৈরি হয়েছে আর এক অনিশ্চয়তা। পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে এখন জোর বেসরকারি উদ্যোগের সঙ্গে যৌথ লগ্নির। সম্পদ তৈরিতে টাকা খরচ খুব একটা বাড়ায়নি কেন্দ্র। বেশ কয়েক বছর ধরেই এই খাতে খরচ প্রায় একই মাত্রায় রয়েছে। বাজেটে এই খাতে খুব একটা ঘোষণা যে করা হয় তাও নয়। আবার যখন করা হয় তখন তার খরচ কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে লেগে থাকে বিতর্ক। এর থেকে যে প্রশ্নটা উঠে এসেছে তা হল, ঋণ কতটা করা যাবে তা না হয় বেঁধে দেওয়া গেল। কিন্তু, করনীতির যে মূল লক্ষ্য দেশের সমৃদ্ধির রাস্তা প্রশস্ত করা, তা কি নিয়মের ফাঁসে হারিয়ে গেল?

(লেখক অর্থনীতিবিদ এবং এনআইপিএফপি-র শিক্ষক)

(এই লেখাটি তিন কিস্তির। এটি প্রথম কিস্তি।)

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

Budget 2020 Union Budget 2020 Nirmala Sitharaman GDP Economic Growth Reserve Bank of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy