Advertisement
E-Paper

আমরা হিসেবি হয়েই বেহিসেবি, আবার বেহিসেবি ভঙ্গিতে হিসেবি

মানবিকতার পরিহাস বা আচরণগত বৈপরীত্য অথবা চারিত্রিক স্ববিরোধ— পর পর এমন অনেকগুলো শব্দবন্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কিন্তু, কোনওটাকেই ঠিক জুৎসই বলে মনে হচ্ছে না।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২১
এখানেই পাওয়া যায় বৃদ্ধা কল্পনা বর্ধনের দগ্ধ দেহ।  নিজস্ব চিত্র

এখানেই পাওয়া যায় বৃদ্ধা কল্পনা বর্ধনের দগ্ধ দেহ। নিজস্ব চিত্র

মানবিকতার পরিহাস বা আচরণগত বৈপরীত্য অথবা চারিত্রিক স্ববিরোধ— পর পর এমন অনেকগুলো শব্দবন্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কিন্তু, কোনওটাকেই ঠিক জুৎসই বলে মনে হচ্ছে না। কারণ চোখের সামনে দুটো ঘটনা যখনই পাশাপাশি ভেসে উঠছে, তখনই ওই ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে নিজেদের প্রতিক্রিয়াগত অসঙ্গতির একটা নিদারুণ লজ্জাজনক ছবি খুব স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। আর মনে হচ্ছে উপরের শব্দবন্ধগুলোর চেয়ে অনেক কঠোর-কর্কশ কোনও বিশেষণ আমাদের জন্য প্রযোজ্য।

সিএমআরআই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিশোরীর মৃত্যু হল। তীব্র রোষ আছড়ে পড়ল, হাসপাতাল তছনছ হল। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতায় সাতসকালে পার্কে গিয়ে এক মহিলা যখন অন্য প্রাতঃভ্রমণকারীদের সামনেই নিজের গায়ে আগুন লাগাচ্ছিলেন, তখন কেউ ছুটে গিয়ে আগুনটা নেভানোর চেষ্টা করলেন না। পুলিশে খবর দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই।

কলকাতার একটা অতুলনীয় মানবিক মুখ রয়েছে বলে খুব গর্ব করতাম সবাই আমরা। এখনও তা নিয়ে অল্প-স্বল্প গর্ব অনুভব করি হয়তো। কিন্তু, এর পর থেকে সে অনুভূতি সঙ্কটে পড়ে যাবে। অকস্মাৎ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সে প্রতিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসে বলেই জানা ছিল। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তির উৎসরণও যখন অত্যন্ত হিসেবি ভঙ্গিতে হয়, তখন এ মহানগরীর তথা নিজেদের মানবিক মুখটার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়, একটা ছলনার আভাস মিলতে থাকে।

একটা সিএমআরআই ভাঙচুর বা একটা প্রকাশ্য অথচ অবারিত আত্মহত্যার ঘটনা দিয়ে কিন্তু সবটা বিচার করছি না। পর পর অনেকগুলো ঘটনা-দুর্ঘটনার অভিঘাত জুড়তে জুড়তে এই অনুভূতি তৈরি হচ্ছে। কোথাও ভাঙচুর বা তাণ্ডবের জন্য হই হই করে লোক জুটে যায়। কিন্তু রাস্তাঘাটে বিপন্ন সহ-নাগরিকের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের মানবিক এবং নাগরিক কর্তব্যটুকু পালনের প্রশ্ন যখন আসে, তখন আমরা হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ দেখতেই পাই না, কেউ পাশ কাটিয়ে যাই, কেউ বার বার ১০০ নম্বর ডায়াল করে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি এবং দায় সেরে ফেলি।

বারংবার উঠে আসছে এই নিদারুণ বৈপরীত্য তথা আচরণগত অসঙ্গতির ছবিটা। যেখানে কর্তব্য পালনের দায়টা আর নেই, সেখানে আবেগ আর স্বতঃস্ফূর্তির অঢেল প্রদর্শনী। আর যে মুহূর্তে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়ার অবকাশ তৈরি হয়, তখনই নির্মোহ এক ঔদাসীন্যের ভাব।

আসলে ক্ষেত্র বিশেষে আমরা হিসেবি হয়েই বেহিসেবি, আর কোথাও কোথাও বেহিসেবি ভঙ্গিতে হিসেবি। নিজেরাও জানি সত্যটা, নিজেরাও জানি কাপট্য আর ছলনাটা ঠিক কোথায়। কিন্তু চোখ ঠেরে থাকি। কাকে ফাঁকি দিচ্ছি? নিজেদেরই নয় কি?

Anjan Bandyopadhyay Humanism News Letter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy