Advertisement
E-Paper

এই কান্নার পুনরাবৃত্তি চাই না আমরা

তাপসের মায়ের কান্না আমরা সবাই শুনতে পাচ্ছি কি? এ ভাবে যে কাঁদতে হতে পারে তাঁকে, সে কথা কি আমরা কেউ কখনও আঁচ করেছিলাম? আজও কি আমরা বিসম্বাদহীন ভাবে মানছি যে, এই দুর্ভাগ্যজনক ছবিটা, এই হৃদয়বিদারী আর্তস্বরটা তৈরি হতে দেওয়াই উচিত হয়নি?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৪
পুত্রহারা: ইসলামপুরের দাড়িভিট গ্রামে গুলিতে নিহত ছাত্র তাপস বর্মণের মা। ফাইল চিত্র।

পুত্রহারা: ইসলামপুরের দাড়িভিট গ্রামে গুলিতে নিহত ছাত্র তাপস বর্মণের মা। ফাইল চিত্র।

বিরোধীর বন্‌ধ, শাসকের না-বন্‌ধ, হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কার, অবরোধ-ভাঙচুর-আগুন, পুলিশ-প্রশাসন-শাসক-বলপ্রয়োগ এবং এই সব কিছু ঘিরে দিনভর চাপানউতোর। এই সমগ্র চাপানউতোরের কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি বা যাঁরা, তাঁরা কিন্তু এখনও কাঁদছেন আর সে কান্না চাপা পড়ে যাচ্ছে এই রাজনৈতিক নির্ঘোষের আড়ালে।

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ব্লকের পণ্ডিতপোতা অঞ্চলের দাড়িভিট গ্রাম। রাজেশ সরকার-তাপস বর্মণরা গুলি খাওয়ার আগে পর্যন্ত অখ্যাত, অজ্ঞাত, প্রত্যন্ত এক প্রান্ত ছাড়া আর কিছুই ছিল না দাড়িভিট। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অশান্তি, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই তরুণের মৃত্যু দাড়িভিটের নামটাকে মুখে মুখে ফেরাচ্ছে গোটা বাংলায়। ওই দাড়িভিটের জন্যই বুধবার দিনভর বিরোধীর শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা আর শাসকের ক্ষমতার আস্ফালনের মধ্যে টানাপড়েন চলল রাজ্য জুড়ে। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, দাড়িভিট নয়, গোটা টানাপড়েনটার কেন্দ্রবিন্দু আসলে খুন হয়ে যাওয়া রাজেশ সরকার আর তাপস বর্মণের স্বজনহারা পরিবার দুটো। তাঁদের দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার বার্তা দেওয়া বা তাঁদের পাশে থেকে সুবিচারের জন্য লড়া অবশ্যই মহত্ কাজ। কিন্তু আস্ফালন আর প্রতি আস্ফালনে সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ যাতে চাপা পড়ে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখা প্রত্যেকেরই কর্তব্য।

রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের পরিবার এ রকম বন্‌ধ আগেও অনেক দেখেছে। বন্‌ধের দিনে গাড়ি পোড়ানো বা পথ অবরোধ বা পুলিশি তত্পরতাও প্রায় প্রতি বারই দেখা গিয়েছে। দাড়িভিটে যে কাণ্ড ঘটেছে, তেমন কোনও কাণ্ডের প্রতিবাদেই হয়তো এর আগেও এমন বন্‌ধ পালিত হয়েছে। কিন্তু তেমনই এক বন্‌ধের ভরকেন্দ্র কোনও দিন হয়ে উঠবেন তাঁরা, রাজেশ-তাপসের পরিজনরা সে কথা সম্ভবত দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি। তাই নগর-শহর-পথঘাট-বাজার-গ্রাম-গ্রামান্তর উত্তাল হয়ে উঠছে দেখেও সন্তানহারা মায়ের কান্না থামছে না। তাঁর বুকের ভিতরটা আরও অনেক বেশি উত্তাল হয়ে থাকছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

শোকে নিমজ্জিত সন্তানহারা মা ডুকরে উঠছেন— আমার মরা ছেলেটাকেও ওরা ছাড়ছে না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সন্তুষ্ট নয় দুই পরিবার। তাই দেহ দাহ না করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে। এত কাণ্ডের পরেও তাপসের মাকে অভিযোগ করতে হচ্ছে, রাতের অন্ধকারে দেহ লোপাট করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি আর কী হতে পারে!

আরও পড়ুন: ‘আমার মরা ছেলেটাকেও ওরা ছাড়ছে না’

তাপসের মায়ের কান্না আমরা সবাই শুনতে পাচ্ছি কি? এ ভাবে যে কাঁদতে হতে পারে তাঁকে, সে কথা কি আমরা কেউ কখনও আঁচ করেছিলাম? আজও কি আমরা বিসম্বাদহীন ভাবে মানছি যে, এই দুর্ভাগ্যজনক ছবিটা, এই হৃদয়বিদারী আর্তস্বরটা তৈরি হতে দেওয়াই উচিত হয়নি? সম্ভবত মানছি না সবাই। রাজনীতির ভেদরেখায় আমরা এখনও বোধহয় বিভাজিত হয়ে রয়েছি।

এই ভেদরেখা যদি না থাকত, তা হলে হয়ত এমন দুর্ভাগ্যজনক কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে দাড়িভিটের নাম আমাদের জানতে হত না। এই ভেদরেখা যদি না থাকত, তা হলে তাপসের মাকে আজ এই ভাবে ডুকরে কাঁদতে হত না। কিন্তু ওই কান্নাটা আজও কি শেলের মতো বিঁধছে না হৃদয়ের অন্তঃস্থলে? রাজনৈতিক নির্ঘোষ আর আস্ফালনে কি ওই কান্নার শব্দটা চাপা পড়ে যাবে? যদি চাপা পড়ে যায়, তা হলে এই বন্‌ধ-অবরোধ-অশান্তিতে কিছুই যায়-আসে না, পুলিশ-প্রশাসন-আস্ফালনেও কোনওই লাভ নেই।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Darivit Islampur violence অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় দাড়িভিট ইসলামপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy