Advertisement
E-Paper

সংবিধান ও ভারতীয়ত্ব যুগপত্ অসম্মানিত হল!

সীমা লঙ্ঘনেরও একটা সীমা থাকে। সুবিন্যস্ত একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রতিটি পক্ষের অংশীদারিত্ব সংবিধান কর্তৃক বিশদে বিবৃত, অধিকার-দায়িত্ব-এক্তিয়ারের পরিধি নিয়ে কোথাও কোনও সংশয় নেই।

কিরেন রিজিজু। —ফাইল চিত্র।

কিরেন রিজিজু। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২৫
Share
Save

সীমা লঙ্ঘনেরও একটা সীমা থাকে। সুবিন্যস্ত একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রতিটি পক্ষের অংশীদারিত্ব সংবিধান কর্তৃক বিশদে বিবৃত, অধিকার-দায়িত্ব-এক্তিয়ারের পরিধি নিয়ে কোথাও কোনও সংশয় নেই। এমন একটি বন্দোবস্তের অংশ হয়েও যদি সর্বোচ্চ স্তরের দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিবর্গ বার বার সীমা লঙ্ঘন করতে থাকেন, তা হলে তাঁদের বুনিয়াদি দায়িত্ববোধ নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। কিরেন রিজিজুকে নিয়ে এ বার তেমন প্রশ্নই তুলতে হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী তিনি। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সরকারি পরিসরে পদাসীন। এ হেন কিরেন রিজিজু ধর্মবিশ্বাসের নিরিখে জনসংখ্যার কমা-বাড়া মাপার চেষ্টা করলেন, জনসংখ্যার সেই হ্রাস-বৃদ্ধির স্ব-আরোপিত ব্যাখ্যা তৈরি করলেন, সেই মহা-বিতর্কিত বিশ্লেষণকে নির্দ্বিধায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসিয়েও দিলেন। রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং রাজধর্মের প্রতি কণামাত্র দায়িত্ববোধ থাকলে এই কাণ্ড কারও পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়।

যে সাংবিধানিক পদে কিরেন রিজিজু অধিষ্ঠান করছেন, সেই পদে আসীন হওয়ার জন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার শপথ নিয়েছেন তিনি। সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার এবং সংবিধান নির্দিষ্ট পথ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে অনুসরণ করার শপথ নিয়েছেন তিনি। সেই সংবিধানের প্রস্তাবনাতেই অত্যন্ত স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এ রাষ্ট্রে সব ধর্মের অনুসারীদের অধিকারই সমান ভাবে স্বীকৃত। তা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট ধর্মবিশ্বাসের হয়ে কিরেন রিজিজু প্রকাশ্যে এমন পক্ষপাতমূলক মন্তব্য করলেন কী ভাবে, গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের দেওয়া মূল্যবোধের বৃত্তে দাঁড়িয়ে সে কথা কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না।

কিরেন রিজিজু, আপনি কোনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর, নির্দিষ্ট ধর্মমতের অনুসারীদের, নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠীর বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসীদের প্রতি দায়বদ্ধ নন। আপনি সমগ্র ভারতের প্রতি তথা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি সমপরিমাণে দায়বদ্ধ। নিজের এই দায়বদ্ধতার কথা আপনি জানেন না বা বোঝেন না, এমনটা ভাবা মূঢ়তার নামান্তর। তাই আপনার মহা-বিতর্কিত টুইটের নেপথ্যে অভিসন্ধির উপস্থিতি স্পষ্ট টের পাচ্ছি। তবু মনে করিয়ে দিচ্ছি, সীমা লঙ্ঘনেরও একটা সীমা থাকা দরকার। রাজনৈতিক তাড়নায় রাজধর্মটাকে নিঃশেষে বিসর্জন দেওয়া শুরু হলে বিপর্যয় খুব বেশি দূরে নয়।

সম্ভবত সংবিধানের চেয়েও নিজের দলের প্রতি বেশি দায়বদ্ধতা দেখাতে চাইছেন কিরেন রিজিজু। সে ক্ষেত্রেও কি নিজের ভারতীয়ত্বকে অস্বীকার করতে পারবেন তিনি? কিছুতেই পারবেন না। কিন্তু ভারতীয়ত্বের মূল ধারণটিই তাঁর মন্তব্যে আজ অসম্মানিত বোধ করছে। এ ভূখণ্ডে বিবিধের মাঝে মহান মিলনের যে পরম্পরা ইতিহাসের গর্ভে লালিত, সেই পরম্পরার মূলে আঘাত হানলেন দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। পারিপার্শ্বিকতায় ধর্মীয় বা জাতিগত অসহিষ্ণুতার ঝড় বয়ে চলা সত্ত্বেও মহামিলনের জয়ধ্বজা উড়িয়ে গোটা বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে যে ভারত, রিজিজু সে ভারতের মাথা হেঁট করে দিলেন।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Kiren Rijiju Comment Hindu Population

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}