Advertisement
E-Paper

রাজকীয়

সেই আবেগে রাজানুগত্যের অনুপাতটি কম নহে। ভারতে রাজারানিরা আর নাই। অন্তত প্রকৃত অর্থে। কিন্তু সাহেবদের দেশে তো আছে।

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০০:৪৮

রাজবাড়িতে আজ বিবাহ। রাজপুত্রের বিবাহ। রাজপুত্রের নাম হ্যারি। তিনি এই দেশের রাজপুত্র নহেন। ইংল্যান্ডের। ভাবী রাজবধূ মেগান মার্ক‌্‌লের সঙ্গেও এই দেশের কোনও যোগ নাই। তিনি মার্কিন অভিনেত্রী। কিন্তু ভারতেও এই বিবাহ লইয়া অনেকেই উৎসাহী। কেহ কেহ বুঝি উচ্ছ্বসিতও। ভারতবাসী রাজপুত্র ও রাজকন্যাদের গল্প শুনিতে ভালবাসে। কিন্তু শুধু তাহা নহে। রাজপরিবারটি খাস বিলেতের, যে দেশের সঙ্গে আজও, সাম্রাজ্যের অবসানের সাত দশক পরেও অনেক ভারতবাসী আত্মিক সংযোগ অনুভব করেন বলিয়া শোনা যায়। দুর্জনে বলে তাঁহাদের কেহ কেহ নাকি ‘হোম’ বলিতে ইংল্যান্ডকেই বুঝিয়া থাকেন। সুতরাং আশ্চর্য নহে যে, ছোট রাজপুত্রের বিবাহ লইয়া বিলাতি উচ্ছ্বাসের তরঙ্গ ভারতবাসীর মানসতটেও আসিয়া পড়িতেছে।

তবে এই উৎসাহ-উদ্দীপনা শুধুমাত্র যে হ্যারি এবং মেগানের বিবাহকে কেন্দ্র করিয়াই দেখা যাইল, তাহা নহে। বস্তুত যুবরাজ-যুবরানিকে একেবারে ঘরের লোক ভাবিয়া লইবার ধারাটির সূত্রপাত হইয়াছিল সেই ১৯৯২ সালে, যুবরাজ চার্লস এবং ডায়ানার ভারত সফরকে কেন্দ্র করিয়া। সেই সফর, যেখানে যাবতীয় সরকারি প্রোটোকল ভাঙিয়া সাধারণ মানুষের মন জয় করিয়া লইয়াছিলেন রাজদম্পতি। সেই সফর, যেখানে প্রেমের স্মারক তাজমহলের সামনে একাকী ডায়ানার ছবি লইয়া সম্ভাব্য বিবাহবিচ্ছেদের জল্পনায় তোলপাড় হইয়াছিল সারা দেশ। মাদার টেরিজ়ার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুবরানির চাক্ষুষ পরিচয়ও এই সফরকে ঘিরিয়া, আমৃত্যু যাহা অটুট থাকিবে। তাহার পর গঙ্গা, টেমস উভয় নদীই কালের নিয়মে আরও একটু বৃদ্ধ হইয়াছে, গঙ্গাকে টেমস বানাইবার উদ্যোগ করা হইয়াছে এবং উভয় দেশের রাজনীতিতে হরেক পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগিয়াছে। ডায়ানা-পরবর্তী রাজপরিবারের সেই কঠোর নিয়মতন্ত্রেও ভাঙন ধরিয়াছে বইকি। কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে এই দেশের আমজনতার সম্পর্ক টাল খায় নাই। বরং কখনও যুবরানি ডায়ানার অকালমৃত্যু, কখনও চার্লস-ক্যামিলার বিবাহ, কখনও উইলিয়াম-কেট, তাঁহাদের সন্তান লইয়া আলোচনা-সমালোচনায় সেই সম্পর্ক মাঝে মাঝেই আবেগে কম্পমান।

সেই আবেগে রাজানুগত্যের অনুপাতটি কম নহে। ভারতে রাজারানিরা আর নাই। অন্তত প্রকৃত অর্থে। কিন্তু সাহেবদের দেশে তো আছে। যে সাহেবরা আবার এক কালে এই দেশেই রাজত্ব করিয়া গিয়াছে। সুতরাং, তাহাদের রাজা, রানি, রাজপুত্র, রাজকন্যাকে নিজের বলিয়া ভাবিতে দোষ কোথায়? হোক না সেই রাজতন্ত্র এখন সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ক্ষমতাশূন্য এক আলঙ্কারিক পদমাত্র। ‘তবু রাজা, রানি তো বটে’— এই মানসিকতা আর কিছুই নহে, ২০০ বৎসরের ঔপনিবেশিকতার ফলমাত্র। ইহার কারণেই ভারতীয়দের এক বৃহৎ অংশ এই ভাবে দেখিতে শিখিয়াছে। ঔপনিবেশিক শোষণের ব্যথা ভুলিয়া তাঁহাদের অনেকেই ইংল্যান্ডের ‘ঈশ্বর’কে আজও আপন ঈশ্বর ভাবিতে ভালবাসেন। সেই দেশের সুখ-দুঃখে রক্তের টান অনুভব করেন। এক দেশের আনন্দে অন্য দেশটি মন জুড়িতে চাইলে দোষ নাই, বরং তাহা প্রশংসনীয়। দোষ, রাজতন্ত্রের প্রতি স্বভাবজাত আকর্ষণটিতে। প্রকৃত গণতন্ত্রে কি ইহার স্থান আছে?

English monarchs Wedding Prince Harry Meghan Markle
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy