Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Facebook

পণ্য

মানুষের কাণ্ডজ্ঞান কবে জন্মাইবে, সরকার সেই অপেক্ষায় বসিয়া থাকিতে পারে না।

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৪২
Share: Save:

তথ্যের গোপনীয়তা লইয়া অধুনা অনেকেই ভয়ানক উদ্বিগ্ন— যথার্থ কারণেই উদ্বিগ্ন, কারণ হোয়াটসঅ্যাপ-এর সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের ফলে গ্রাহকদের তথ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি নিতান্ত হাস্যকৌতুকে পরিণত হইয়াছে। কিন্তু, উদ্বিগ্ন হইবার পূর্বে, বা উদ্বিগ্ন অবস্থায়, তাঁহারা কি ভাবিয়া দেখিয়াছেন যে, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের ন্যায় সংস্থা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এমন মূল্যবান একটি পরিষেবা কেন দিয়া চলিয়াছে? কেন সম্পূর্ণ নিখরচায় বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বার্তা প্রেরণ করা সম্ভব, ভিডিয়ো কলে যত ক্ষণ খুশি কথা বলিয়া যাওয়া যায়? কেন ফেসবুক বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ সার্ভার ও সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো বজায় রাখিয়া চলিয়াছে, যাহাতে আমাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বিশ্বজন দেখিতে, এবং ‘লাইক’ করিতে পারে? সংস্থাগুলি নিছক পরহিতার্থে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করিয়া চলিয়াছে, এমনটা ভাবিলে ধনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মিতে পারে, কিন্তু ধারণাটি বাস্তবসম্মত হইবে না। এই পরিষেবাগুলি বিনামূল্যে মিলিতেছে, কারণ ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের দৃষ্টিতে ওইগুলি পণ্য নহে। পণ্য হইল সেই বিনা পয়সার ভোজের লোভে ছুটিয়া আসা মানুষেরা। পণ্য হইল তাহাদের ব্যক্তিগত, অতি গোপনীয় তথ্য।

এই কথাটি পাঁচ বৎসর পূর্বে হয়তো বা ‘নূতন’ ছিল; এখন নিতান্ত সাধারণ জ্ঞান। হোয়াটসঅ্যাপ জানাইয়াছে যে, তাহারা সাধারণ গ্রাহকের তথ্য জমা করে না— কিন্তু, সেই কথায় কেহ বিশ্বাস করিবেন কি না, তাহা ব্যক্তির বিবেচনার প্রশ্ন। তাহাতে মূল ছবিটি পাল্টায় না। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল সংযোগের মোহে মানুষ যত বেশি তথ্য আন্তর্জালে জমা করিতেছে, তত বেশি নিজেকে পণ্যে পরিণত করিতেছে, নিজের নিরাপত্তা বিপন্ন করিতেছে। কথাটি জানিয়াও মানুষ এই পরিষেবাগুলি ব্যবহার করিয়া চলে কেন? এমন কোনও পরিষেবা চাহে না কেন, যেখানে ন্যায্য মূল্য গনিয়া দিতে হইবে, কিন্তু তথ্য হাতছাড়া হইবার ফাঁকফোকরগুলি থাকিবে না? তাহার কারণটি মানুষের অবচেতনে রহিয়াছে। বিনামূল্যে যাহা মিলে, তাহার প্রতি আকর্ষণ দুর্নিবার। তাহাতে কাণ্ডজ্ঞান লোপ পায়, সামান্য লোভের ফলে কত বড় ক্ষতি হইয়া যাইতেছে, সেই হুঁশ থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটিতেছে। ফেসবুক-আদি সংস্থাগুলি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তাহাদের নিকট লাভের বাড়া মন্ত্র নাই। তাহাদের নৈতিকতার পাঠ পড়ানো অবশ্যই জরুরি, কিন্তু বিনা পয়সায় পরিষেবার লোভে নিজেদের পণ্য করিবার কু-অভ্যাসটি মানুষ ত্যাগ না করিতে পারিলে সেই লাগাম পরানোর কাজটি কঠিন, অতি কঠিন।

তবে, মানুষের কাণ্ডজ্ঞান কবে জন্মাইবে, সরকার সেই অপেক্ষায় বসিয়া থাকিতে পারে না। সংবাদে প্রকাশ, ভারতেও কেন্দ্রীয় সরকার নাকি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষকে ডাকিয়া জবাবদিহি দাবি করিবে। সরকারের নিকট একটি ভিন্নতর প্রশ্ন উত্থাপন করা প্রয়োজন। দেশে এত আইন পাশ হয়— কখনও অধ্যাদেশ জারি করিয়া, কখনও সংসদের অধিবেশনকে পাশ কাটাইয়া— কিন্তু, তথ্যের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনটি পাশ হয় না কেন? এই বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করিবার প্রধানতম আয়ুধ হইতে পারিত কঠোর তথ্য-নিরাপত্তা আইন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রাহকদের যে তথ্য দাবি করিতেছে, ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে সেই ক্ষেত্রে ভারতের ফারাক রহিয়াছে। ভারতে তাহারা অনেক বেশি তথ্যের মালিকানার দাবি করিতেছে। একটি কঠোর তথ্য নিরাপত্তা আইন দেশবাসীকে এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে পারিত। কেহ সন্দেহ করিতে পারেন, সাধারণ মানুষের তথ্য হাতাইয়া লইতে কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রহই এই গড়িমসির কারণ। তাহাতে মানুষের ক্ষতি হইলে তাহা নেহাতই ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Facebook Whats APP Social Media Privacy Policy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE