Advertisement
E-Paper

থাকে শুধু অন্ধকার

নোট বাতিলের তাণ্ডবটি কেন? নেহাত খামখেয়াল? না কি, একটি নিগূঢ় ষড়যন্ত্র? যে হেতু কোনও সম্ভাব্য কারণই যুক্তির ধোপে টিকিতেছে না, কেহ বলিতেই পারেন যে পড়িয়া থাকে একটিমাত্র কারণ। তাহার নাম উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন।

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৭

সব না হইলেও, ৯৯.৩ শতাংশ পাখি ঘরে আসিয়াছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় ১৫.৪১ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ১,০০০ ও ৫০০ টাকার নোট বাতিল হইয়াছিল। সেই বাতিল নোটে ১৫.৩১ লক্ষ কোটি টাকাই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে ফিরিয়া আসিয়াছে। অর্থাৎ, নোট বাতিলের ফলে ছাঁটা গেল মাত্র ১০,৭২০ কোটি টাকা। নূতন নোট ছাপাইতেই ইহার অধিক টাকা খরচ করিয়াছে সরকার। তাহা হইলে, হাতে থাকিল কী? কিন্তু, এই প্রশ্নের পূর্বেও একটি প্রশ্ন আছে। প্রধানমন্ত্রী হাতে কী রাখিতে চাহিয়াছিলেন? ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের পর ডিমনিটাইজ়েশনের ঘোষিত লক্ষ্য কয় দফা পাল্টাইয়াছে, সেই হিসাব সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীও আর রাখেন নাই। কালো টাকা নষ্ট করা? প্রধানমন্ত্রী ও তাঁহার পারিষদরা বুক ঠুকিয়া জানাইয়াছিলেন, অন্তত তিন লক্ষ কোটি টাকা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে ফিরিবে না। ফেরে নাই তাহার ত্রিশ ভাগের মাত্র এক ভাগ। দাবি ছিল, নকল নোটের প্রকোপ কমিবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাব বলিতেছে, ২০১৬-১৭’র তুলনায় তাহার পরের অর্থবর্ষে ধরা প়়ড়া নকল টাকার পরিমাণ বহু গুণ বেশি। অনুমান করা চলে, ধরা পড়ে নাই, এমন নকল নোটের পরিমাণও আনুপাতিক হারেই বেশি। এই নোটগুলি কিন্তু নূতন— নোট-বাতিল-পরবর্তী— নোটের নকল। সন্ত্রাসবাদী বা ভারতবিরোধী কার্যক্রমেও যে ভাটা পড়ে নাই, তাহা জানিতে অবশ্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টের অপেক্ষা ছিল না। দেশের মানুষকে এই বিপুল অসুবিধার মুখে ফেলিয়া নরেন্দ্র মোদী তবে কী অর্জন করিলেন? মহাশূন্য?

ভারতীয় অর্থনীতির উচ্চ হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনাও সেই শূন্যেই বিলীন হইয়া গিয়াছে। যে পরিসংখ্যানগুলি লুকাইয়া ফেলিতে কেন্দ্রীয় সরকার অতি উদ্গ্রীব, ইউপিএ আমলের সহিত তুলনার সেই তথ্যেই স্পষ্ট, নরেন্দ্র মোদীর শাসন কালে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নগামী হইয়াছে। কেন, তাহার একটি বড় কারণ নোট-বাতিল। তাঁহারা কর্পোরেট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান পেশ করিতে পারেন। কিন্তু, ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড তো সেই বিনিয়োগ নহে। ভারত চলে মূলত অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগের জোরে। নোট বাতিলের ধাক্কায় সেই ক্ষেত্রটি ধরাশায়ী। কর্মসংস্থানের করুণ ছবিটি প্রধানমন্ত্রীও লুকাইতে পারেন নাই। তাঁহার খামখেয়ালে ভারতীয় অর্থনীতির মোট কত লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হইল, সেই হিসাবটি এই বার কষা প্রয়োজন। অর্থ সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ আপাতত এই সব আলোচনা করিতে বারণ করিয়াছেন। স্বাভাবিক। তাহাতে মোদীর গুণকীর্তন হইত না।

কালো টাকা ধরা, নকল নোট নিয়ন্ত্রণ করা, সন্ত্রাসবাদীদের হাতে টাকার জোগান কমানো অথবা ভারতকে ডিজিটাল স্বর্গে জাগরিত করা, কোনওটির জন্যই যে ডিমনিটাইজ়েশন প্রয়োজন ছিল না, অর্থনীতিবিদরা বারে বারেই বলিয়াছেন। ফলাফলও বলিতেছে, মোদী কোনওটিই করিতে পারেন নাই। তাহা হইলে, নোট বাতিলের তাণ্ডবটি কেন? নেহাত খামখেয়াল? না কি, একটি নিগূঢ় ষড়যন্ত্র? যে হেতু কোনও সম্ভাব্য কারণই যুক্তির ধোপে টিকিতেছে না, কেহ বলিতেই পারেন যে পড়িয়া থাকে একটিমাত্র কারণ। তাহার নাম উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। কেহ সন্দেহ করিতেই পারেন, সেই নির্বাচনের পূর্বে বিরোধীদের হাত শূন্য করিয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যেই গোটা দেশের উপর নোট বাতিলের বোমাটি ফেলিয়াছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাহাতে কত লোকের প্রাণ গেল, কত মানুষ কাজ হারাইলেন, কত ঘরে হাঁড়ি চ়ড়িল না আর কত ঘরে উনানই জ্বলিল না, সেই হিসাব রাখিবার দায় প্রধানমন্ত্রীর নাই। তিনি ক্ষুদ্র স্বার্থের ব্যাপারী। সেই স্বার্থের বাহিরে তিনি দেখিতে পান নাই। এই অভিযোগকে উড়াইয়া দেওয়ার মতো যুক্তি তাঁহার হাতে আছে তো?

Black Money Demonetization RBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy