Advertisement
E-Paper

আর কবে একটু সচেতন হব

শীত মানেই উৎসব। উৎসব মানেই আনন্দ। আনন্দে তো মাতছি, তার পরে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করছি তো? মনে হয় না। অন্তত চারপাশে তাকালে সে কথাই স্পষ্ট হয়ে যায়। তাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন, এই শীতেই।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৪
আবর্জনা এখনও ছড়িয়ে রয়েছে চারদিকে। কোচবিহার রাসমেলার মাঠে।

আবর্জনা এখনও ছড়িয়ে রয়েছে চারদিকে। কোচবিহার রাসমেলার মাঠে।

শীত পড়তে শুরু করেছে। বদলাতে শুরু করেছে প্রকৃতিও। গ্রামের রাস্তা ধরে ধান বোঝাই ভটভটি গাড়ি চলছে কৃষকের বাড়ি। একসময় যা গরুর গাড়ির দখলে ছিল, সে জায়গায় আজ ভটভটি। সকালে শিশির পড়ার শব্দ। বেলা গড়ালেও কচু পাতার উপরে শিশিরের দুলুনি আমাদের কি যে আনন্দ দেয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা অনেকটাই কঠিন। মিঠে রোদে খানিকক্ষণ বসে থাকার মজা তো সবারই জানা। আর সেই ভোরের কুয়াশা। শীত মানেই আমাদের কাছে উৎসবের ঢালি নিয়ে হাজির হওয়া এক ঋতু। কোথাও মেলা বসেছে, তো কোথাও যাত্রার আসর। আবার কোথাও সঙ্গীতসন্ধ্যা তো কোথাও নাটকের উৎসব। পারিবারিক অনুষ্ঠান তো রয়েইছে। আমরা প্রত্যেকেই সেই আনন্দে মেতে উঠি। আনন্দ শেষও হয়ে যায়, পড়ে থাকে অসচেতনতা। যদিও এই অসচেতন আমরা থাকি বছরভরই। এবং তার পরিণামও আমরা পেতে শুরু করেছি। তবুও আমরা সচেতন হতে পারি না।আনন্দের পরে দুর্গন্ধ

অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি চলছে। আর কয়েক দিন পরেই পৌষ মাস। সদ্য শেষ হল কোচবিহারের রাসমেলা। সেই মেলা আমাদের অসচেতনতার একটি নজির হয়ে রয়েছে। রাসমেলায় প্রচুর আনন্দ হয়েছে। সার্কাস থেকে নাগরদোলা মন কেড়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষের। সেই সঙ্গেই মদনমোহন মন্দিরের রাস ঘোরানো, পুতনা রাক্ষসীকে দেখা এনে দিয়েছে অনাবিল আনন্দ। শিশুরা তো আনন্দে বিহ্বল। নানা খাবারের দোকান মন কেড়েছে অনেকের। সেই সর্বজনগ্রাহী মেলা শেষ হয়েছে, তাও কয়েক দিন হয়ে গেল। কিন্তু আবর্জনা? এখনও তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে চারদিকে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিবেশ দূষণ। তা নিয়ে কেউই তেমন একটা বিচলিত নন। সবারই কেমন একটা গা ছাড়া মনোভাব। এটাই আমাদের অসচেতনতা। পুরসভা ইচ্ছে করলে অল্প সময়েই মাঠ পরিষ্কার হতে পারে। এলাকা দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাই বর্তমান অবস্থার বা চিন্তার পরিবর্তন প্রয়োজন।

প্লাস্টিক হাতে হাতে

বারে বারে প্রচার হয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা থার্মোকল কতটা ক্ষতিকর, তা আজ আর কারও অজানা নয়। তার পরেও কারও যেন হুঁশ নেই। সদ্য সমাপ্ত রাসমেলাতেই উঠে এসেছে সে চিত্র। এখনও রাসমেলার মাঠে বা আশেপাশের গলিতে হাঁটলে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যাবে সেই প্লাস্টিকের জঞ্জাল।

এ তো গেল শহরের কথা, গ্রামের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। শুধু রাসমেলা নয়, এই সময় গ্রামে গ্রামে বসছে যাত্রাপালার আসর। তা ঘিরে ছোট মেলা বসে যায়। এ ছাড়াও পৌষের মেলা বসবে নানা গ্রামে। তাতে সব হাতে হাতে ঘুরে বেড়ায় প্লাস্টিক ব্যাগ, কাপ, থার্মোকলের থালা। সেখানে তা নিয়ে যেন সতর্ক করার কেউ নেই, সাধারণ মানুষও সব জেনে সচেতন না থাকার ভান করে থাকেন। পরিবেশপ্রেমীরাও তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমনটা চলতে থাকলে যে আরও বড় বিপদের দিকে আমরা এগিতে যাচ্ছি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অতিথি পাখি

একসময় শীত পড়তে শুরু করতেই, মানে অগ্রহায়ণ মাস থেকেই শীতের দেশ থেকে পাখিদের ঢল নামত উত্তরবঙ্গ তথা কোচবিহারে। ডুয়ার্সের নদী-নালা থেকে কোচবিহারের রাজবাড়ি-সাগরদিঘি, আরও ছোট-বড় জলাশয়ে সেই সব পাখি এসে এক অন্য পরিবেশ তৈরি করত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পাখিদের আসাও অনেক কমে গিয়েছে। এখন তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তার পরেও হাতে-গোনা পাখির দেখা মেলে। আসলে পাল্টে যাচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে দূষণ। শীতের প্রকোপ যেন এখন আর তেমন নেই। পৌষের সময় কাছে চলে এলেও এখনও জাঁকিয়ে শীত পড়েনি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এখনও খানিকটা যেন গরমই অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশ কেন বদলে যাচ্ছে? সে সব নিয়ে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। তার মধ্যে বড় কারণ, দূষণ। খানিকটা সচেতন হলেই আমরা বেড়ি পড়াতে পারি দূষণের গলায়। কিন্তু তা হচ্ছে না। তাই বদলে যাচ্ছে চারপাশের অনেক কিছু।

একটু সচেতন হই

ডালিয়া-গাঁদা-চন্দ্রমল্লিকা। শীতের সেই সব ফুল এক অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। কমলা, কুল থেকে জলপাই এই শীতেরই ফল। আর এই উৎসব সবই তো প্রকৃতির দান। একটু সচেতন হলে এই শীত এমনই সৌন্দর্য নিয়ে বারে বারে হাজির হবে আমাদের কাছে। নতুবা একসময় তৈরি হবে দূরত্ব। যার খানিকটা আঁচ আমরা করতে পাচ্ছি, এখনই। তাই আসুন, সবাই মিলে হাত হাত রেখে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Coochbihar Rashmela Rashmela Fair Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy