Advertisement
E-Paper

ফের মৃত্যুর মিছিল, ফের চেনা চিত্রনাট্য

মগরাহাটে যে চেহারা নিয়েছিল মৃত্যুর মিছিল, শান্তিপুরে শবের সারি ততটা দীর্ঘ হয়নি ঠিকই। কিন্তু সারিটা দীর্ঘতর হতেই পারত। যতগুলো প্রাণ ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে এবং আরও যত জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, সেই সংখ্যাটাও নেহাত ছোটখাটো নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৫
চোলাই কেড়েছে প্রিয়জনদের। ছবি: পিটিআই।

চোলাই কেড়েছে প্রিয়জনদের। ছবি: পিটিআই।

আবার বিষমদ, আবার মৃত্যুর মিছিল, আবার দু’ লক্ষ টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’, আবার দায় ঝেড়ে ফেলার এবং দায় চাপানোর চিত্রনাট্য। কিন্তু দিনের শেষে আবার ধোঁয়াশা-দায় কার, স্পষ্ট হল না।

দায় কার, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। সর্বাগ্রে বলতে হচ্ছে, দু্র্ভাগ্যজনক এই ছবিটার বার বার ফিরে আসা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে মৃত্যুর মহামিছিল হয়েছিল বিষ মদের সৌজন্যে। অত বড় বিপর্যয়ের পরেও যে আমাদের শিক্ষা হয়নি, যে কোনও দিন যে কোনও এলাকায় একই বিপর্যয় যে আবারও ঘনাতে পারে, বিপর্যয়ের তীব্রতা যে আগের নজিরকেও ছাপিয়ে যেতে পারে, সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মগরাহাটে যে চেহারা নিয়েছিল মৃত্যুর মিছিল, শান্তিপুরে শবের সারি ততটা দীর্ঘ হয়নি ঠিকই। কিন্তু সারিটা দীর্ঘতর হতেই পারত। যতগুলো প্রাণ ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে এবং আরও যত জন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, সেই সংখ্যাটাও নেহাত ছোটখাটো নয়। এতে কী প্রমাণ হয়? এতে প্রমাণ হয়, বিপর্যয় যত বড় আকারেই ঘটুক না কেন, বিপর্যয় পরবর্তী সাময়িক তৎপরতাটাই সব, তার বাইরে কিছু করতে শিখিনি আমরা। বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে না দেওয়ার জন্য যে সব পদক্ষেপ করা দরকার এবং যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, সে সব আমাদের প্রশাসন এখনও শিখে উঠতে পারেনি। আমাদের প্রশাসনের কাছে বিপর্যয় মোকাবিলা এখনও ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ। বিপর্যয় মোকাবিলার অর্থ যে সর্বাগ্রে বিপর্যয় রোধের চেষ্টা করা, আমাদের প্রশাসন সম্ভবত, তা এখনও ভেবে উঠতে পারেনি।

শান্তিপুরে বিষ মদ কাণ্ডে এত বড় সংখ্যায় মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো ঠিক কীরকম? এক পুলিশ কর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হল,আবগারি দফতরের এক জন ওসি ও দুই সার্কেল ইনস্পেক্টর-সহ এগারো জন আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হল, রাজ্যের শীর্ষ পুলিশ কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেলেন আর মগরাহাট কাণ্ডের পর থেকে কটাক্ষের ছলে মুখে মুখে ফিরতে থাকা একটা আর্থিক সহায়তার অঙ্ক মৃতদের পরিবারগুলিকে দেওয়ার বন্দোবস্ত হল। অর্থাৎ গতানুগতিকতার বাইরে কিছুই ঘটল না এবারও। মাঝেমধ্যে বিষ মদ খেয়ে মৃত্যুর এই রকম মিছিল শুরু হয়ে যাওয়াকে তাহলে কি গতানুগতিক ঘটনা হিসেবেই ধরে নিচ্ছে আমাদের প্রশাসন? বিষ মদে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে প্রশাসন ঠিক কী কী করতে পারে, তা নিয়ে চা দোকানের বেঞ্চে বা ক্লাবের বারান্দায় বসে যে ধরনের আলোচনা হয়, তার চেয়ে বিন্দুমাত্র আলাদা কোনও পথে কি হাঁটতে পারল প্রশাসন?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দায় ঝেড়ে ফেলার বা দায় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করার কাজটা অবশ্য আমাদের প্রশাসকরা খুব সুচারুভাবেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করলেন। কোনও পদক্ষেপ দেখে মনে হল দায় পুলিশের। কোনও পদক্ষেপ দেখে মনে হল, দায় আবগারি দফতরের। প্রশাসকের কোনও মন্তব্য শুনে আবার মনে হল দায়টা প্রতিবেশী রাজ্য বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের। কিন্তু আসল দায়ী কে বা কারা, তাঁর বা তাঁদের শেষ পর্যন্ত কোনও শাস্তি হবে কি না, হলেও কতটুকু-এ সব প্রশ্নের কোনও জবাব কারও কাছে নেই। এখন অনেকেই জবাবগুলো খোঁজার চেষ্টা করছেন ঠিকই, কিন্তু দৈনন্দিন যাপনের প্রবাহ কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের অধিকাংশকে ভুলিয়ে দেবে শান্তিপুরের ঘটনার অভিঘাত। ফলে জবাব খোঁজার লোক ক্রমশ কমতে থাকবে। বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে না দেওয়ার জন্য প্রশাসন কোনও নির্ভরযোগ্য ও সুসংহত পদক্ষেপ আদৌ করল কি না, সে খোঁজও আর কেউ করবেন না। প্রশাসনিক তৎপরতাও অবধারিতভাবে কমতে শুরু করবে।

আরও পড়ুন: শান্তিপুরে বিষ মদে মৃত্যু বেড়ে ১২, মুখ্যমন্ত্রীর ধমক পুলিশকে​

পরে আবার কোনও এক সময়ে, কোনও এক প্রান্তে মৃত্যুর মিছিল আহ্বান করবে বিষ মদ, আবার দায়ে ঝাড়া ও দায় চাপানোর চিত্রনাট্য অভিনীত হবে, আবার কুখ্যাত হয়ে ওঠা টাকার অঙ্কটা জনপরিসরের আলোচনায় ভাসতে শুরু করবে। তার পরে আবার যে কে সেই…

আরও পড়ুন: ‘ওদের সঙ্গে বসে চোলাই খেয়েছিলাম, বাঁচলাম কী করে, জানি না!’

চোলাই বিষমদ Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Adulterated Hooch Adulterated Liqour Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy