Advertisement
E-Paper

কিসের অপেক্ষায়

সমস্যা অবশ্য শুধু ভাইরাস-ঘটিত নহে। আদালতগুলিতে বহু দিন যাবৎ মামলার পাহাড় জমিতেছে।

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০১:২১

লকডাউনে পশ্চিমবঙ্গে আদালতগুলি সম্পূর্ণ স্তব্ধ ছিল প্রায় তিন মাস। অতঃপর খুলিয়াছে বটে, কিন্তু কাজ হইতেছে অতি সামান্য। নিম্ন আদালতগুলিতে জামিনের শুনানি ব্যতীত কার্যত কিছুই হইতেছে না, কলিকাতা হাইকোর্টের সাঁইত্রিশটি এজলাসের অল্প কয়েকটি চলিতেছে। নিয়ম হইয়াছে, কেবল জরুরি মামলা গ্রহণ করা হইবে। কিন্তু পাঁচ মাস ধরিয়া বিচারের প্রত্যাশায় যাঁহারা দিন গনিতেছেন, তাঁহাদের সকলের নিকটই কি প্রতিকার জরুরি হইয়া উঠে নাই? অতিমারি এবং লকডাউনের কারণে কর্মজীবনের সকল দিকই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। কিন্তু তাহার ধাক্কা সামলাইয়া সরকারি দফতর, ব্যাঙ্ক, অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ ও পরিষেবা— সকলই ছন্দে ফিরিয়াছে। যে সকল ক্ষেত্রে অনলাইন প্রযুক্তিতে পরিষেবা প্রদান সম্ভব, সে সকল ক্ষেত্রে কাজের পদ্ধতি প্রয়োজন অনুসারে বদলাইয়াছে। বহু প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাতেও এখন অনলাইন প্রযুক্তিতে কাজ চলিতেছে। শিশুরাও অভ্যাস করিয়া ফেলিয়াছে। এই সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিচারব্যবস্থায় অনলাইন প্রযুক্তির প্রতি আড়ষ্টতা এবং অনাগ্রহ বড়ই প্রকট। সুপ্রিম কোর্ট ভার্চুয়াল শুনানি শুরু করিবার পরে ভারতের বার কাউন্সিল প্রধান বিচারপতিকে একটি চিঠিতে আপত্তি জানাইয়া বলিয়াছে, ভারতে বিচারক ও আইনজীবীদের ৯০ শতাংশ অনলাইন প্রযুক্তিতে সড়গড় নহেন। পশ্চিমবঙ্গে জেলা আদালতগুলিতেও আইনজীবীরা অনলাইনে আপত্তি জানাইয়াছেন।

সমস্যা অবশ্য শুধু ভাইরাস-ঘটিত নহে। আদালতগুলিতে বহু দিন যাবৎ মামলার পাহাড় জমিতেছে। সারা ভারতের সকল আদালত মিলাইয়া তিন কোটি মামলা বিচারের প্রতীক্ষা করিতেছে। ইহার অন্তত দশ শতাংশ মামলা জমিয়া আছে দশ বৎসরের অধিক। জাতীয় পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই তিন কোটি মামলার মধ্যে প্রায় তেইশ লক্ষ মামলা পশ্চিমবঙ্গের, যাহার মধ্যে ত্রিশ বৎসরের অধিক পুরাতন মামলা দশ হাজার। বিচারকের শূন্য পদ, পরিকাঠামোর দুর্বলতা অবশ্যই এই বিলম্বের বড় কারণ। কিন্তু আদালতে কাজের পরিবেশও কি কারণ নহে? ছুটির এত বাহুল্য সম্ভবত আর কোনও কর্মক্ষেত্রে নাই। শোকপ্রকাশ করিবার একমাত্র উপায় হইয়া দাঁড়াইয়াছে ছুটি; যে কোনও বিষয়ে প্রতিবাদ করিতে হইলেও কর্মবিরতিই পন্থা। গরমে বা পূজায় দীর্ঘ ছুটিও বাঁধাধরা। হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিরা অনেক বার ছুটি না লইবার আবেদন করিয়াছেন, নিজেরা কাজ করিয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছেন। কাজ হয় নাই। অনবরত মামলা পিছাইবার অভ্যাসটিও সমানে চলিতেছে।

পশ্চিমবঙ্গে আদালতগুলিতে কম্পিউটার আসিয়াছে নব্বইয়ের দশকে। মামলার নথিপত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথিবদ্ধ করিবার জন্য প্রশিক্ষণও হইয়াছে। তৎসত্ত্বেও মামলার নথির অতি সামান্যই ডিজিটাল সংস্করণে মিলিবে। অনভ্যাসের কারণে আজ হাইকোর্ট অনলাইন শুনানি শুরু করিয়াও বার বার নিয়ম বদলাইতেছে। ইহা দুর্ভাগ্যজনক। সর্বস্তরের আদালতকে তাহার প্রয়োজন অনুসারে প্রযুক্তি নির্মাণ ও ব্যবহার করিতে হইবে। মানসিক জাড্য কাটাইয়া বিচারব্যবস্থাকে জঙ্গম করিতে হইবে। দেশের বিচারবিভাগের উপর নাগরিকের অসীম নির্ভরতা, তাই বিচারে বিলম্ব মানুষের কল্যাণের পরিপন্থী।

Coronavirus Lockdown Court West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy