নোয়া পোথোভেন। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
হল্যান্ডে এক ১৭ বৎসরের কিশোরীকে নিষ্কৃতিমৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হইল। তাহাকে অতি কম বয়সেই ধর্ষণ করা হইয়াছিল, একাধিক বার। তাহা প্রথম ঘটে তাহার ১১ বৎসর বয়সে। পরের বৎসর, পুনরায়। মেয়েটি আত্মজীবনী উইনিং অর লার্নিং-এ লিখিয়াছে, তাহার ১৪ বৎসর বয়সে দুই জন তাহাকে ধর্ষণ করে। ইহার পর হইতে সে ঘটনাগুলির অভিঘাতে তীব্র মানসিক চাপ ও তজ্জনিত অবিন্যস্ত মানসিক অবস্থার শিকার হইয়া পড়ে। মানসিক অবসাদ ও অ্যানোরেক্সিয়াতেও ভুগিতে শুরু করে। এই বেদনা আর সহ্য না করিতে পারিয়াই জীবনাবসানের সিদ্ধান্ত। ইহার পূর্বে সে তিন বার চিকিৎসালয়ে ভর্তি হইয়াছিল, প্রায় এক বৎসর তাহাকে নলের সাহায্যে খাদ্য গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। সম্প্রতি সে ফেসবুকে লেখে, ‘‘আমি বেশ কিছু দিন ধরিয়াই ইহার কথা ভাবিয়াছি, ইহা আচম্বিতে ও তাৎক্ষণিক আবেগের বশবর্তী হইয়া গৃহীত সিদ্ধান্ত নহে।... আমি টিকিয়া আছি, কিন্তু তাহাও নাই। শ্বাস লইতেছি, কিন্তু বাঁচিতেছি না।’’ অভিভাবকদের জ্ঞাতসারে সে নিষ্কৃতিমৃত্যুর আবেদন করে ও নিজ গৃহেই জুন মাসের প্রথমে তাহাকে মৃত্যুসাহায্য করা হইয়াছে।
হল্যান্ডে ১২ বৎসর বয়সের কিশোর-কিশোরীও নিষ্কৃতিমৃত্যুর আবেদন জানাইতে পারে। অবশ্যই ডাক্তারের মতামত প্রয়োজন, রোগীর যন্ত্রণা অসহ এবং উপশমের অতীত। ২০১৭ সালে ওই দেশে ৬৫৮৫ জন মানুষ নিষ্কৃতিমৃত্যুর শরণ লইয়াছেন। বহু দেশেই এই প্রকারের মৃত্যুবরণ নিষিদ্ধ, কিন্তু কিছু দেশ মনে করে, এক জন মানুষের জীবনের অধিকার যদি তাঁহার হয়, মৃত্যুর অধিকার কেনই বা তাঁহার নহে। কিন্তু এমন যুক্তিও রহিয়াছে, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তি যখন নিজ মৃত্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন তাঁহার মানসিক ভারসাম্য রহিয়াছে কি না তাহাই তো নিশ্চিত নহে।
এই প্রশ্নও উঠিবে, এক বালিকাকে বারংবার ধর্ষণ করা হইল, তাহার কৈশোরেও সেই ধারা অব্যাহত রহিল, তবে সেই অমানবিক অপরাধের দায় লইয়া রাষ্ট্র তাহাকে সুস্থ করিয়া তুলিবার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করিল না কেন। সে মৃত্যু চাহিতেই পারে, কিন্তু কিশোরীকেও স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার-প্রদায়ী উদার রাষ্ট্রের কেন সেই দায়বদ্ধতা থাকিবে না, যাহার বশে সে মেয়েটিকে জীবনের দিকে ফিরাইয়া আনিবে। বিমর্ষতায় আক্রান্ত মানুষ নেতিবাচক সিদ্ধান্ত লইবে ইহাই স্বাভাবিক, কিন্তু তাহার সম্মুখে জীবন যে বহুবিস্তৃত ও বিচিত্র সম্ভাবনাময়, ইহা প্রতিষ্ঠা করিবার কর্তব্য কাহার। যে সমাজ তাহাকে নিরাপত্তা দিতে পারে নাই, যে দেশ তাহাকে রক্ষা করিতে পারে নাই, তাহার তো প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে মেয়েটির হৃদয়ে এই বিশ্বাসের জন্ম দিয়া যে, একটি অমূল্য জীবন অন্য মানুষের অপরাধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইতে দেওয়া অপরাধ। রাষ্ট্রেরই কাজ, কিশোরীর বিষাদ কাটাইয়া তাহাকে এই প্রত্যয়ে প্রণোদিত করা: তাহার পরিচয় ‘ধর্ষিতা’ নহে। হ্যাঁ, সে অন্য মানুষের কুৎসিত মনোবৃত্তির শিকার হইয়াছে, কিন্তু সেই বেদনা অতিক্রম করিয়া সম্মুখে যাত্রার ক্ষমতাও তাহার রহিয়াছে। সেই ক্ষমতায় তাহাকে বলীয়ান করা কি দেশের কর্তব্য নহে? তাহাকে মৃত্যুর অনুমতি দিয়া পরবর্তী কার্যে ব্যাপৃত হইয়া পড়িবার মধ্যে কি দুঃখিত মুখে দায় ঝাড়িয়া ফেলিবার মনোবৃত্তি প্রচ্ছন্ন নাই? এমন নহে তো, সমাজই এই অভিযোগকারিণীর তীব্র দৃষ্টি হইতে নিষ্কৃতি পাইল?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy