Advertisement
E-Paper

খুব বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো?

কাশ্মীরে সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে জঙ্গির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু কাশ্মীরে সাধারণ মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনাও লাফিয়ে বেড়েছে। বেড়েছে পাথর ছোড়ার উৎসাহও।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২৯

নতুন প্রজন্মের উজ্জ্বল বা প্রতি‌শ্রুতিমানরা রাজনীতি থেকে কিয়ৎ বিমুখ— এমন একটা আক্ষেপ আমাদের গোটা দেশেই রয়েছে। তাই স্বক্ষেত্রে অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং তুঙ্গস্পর্শী সাফল্যের অধিকারী কোনও নাগরিক যদি রাজনীতিতে পা রাখার সিদ্ধান্ত নেন,তা হলে আমাদের খুশি হওয়ার কথা, আক্ষেপ সামান্য হলেও মেটার কথা। কিন্তু কোনও এক আক্ষেপ বুকে নিয়েই যখন রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোনও এক সুনাগরিককে, তখন রাষ্ট্রের উচিত আয়নার সামনে দাঁড়ানো। কোথাও খুব বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো? রাষ্ট্রের উচিত নিজেকে প্রশ্ন করা।

ভুল যে হচ্ছে, কাশ্মীর উপত্যকায় যে পথ ধরে হাঁটছে দেশের সরকার, সে পথটা যে ঠিক পথ নয়— এমন সতর্কবার্তা তো দেশের নানা প্রান্ত থেকে, নানা শিবির থেকে, নানা মহল থেকে বার বার আসছে। উপত্যকার সঙ্কট কোনও নতুন সঙ্কট নয়। দশকের পর দশক ধরে এই পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে ভারতকে। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্রে পৌঁছনোর পন্থাতেই আস্থা রেখেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব সে পথে বিশ্বাসী নন সম্ভবত। ফলাফল আমাদের সবার চোখের সামনেই।

কাশ্মীরে সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে জঙ্গির মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু কাশ্মীরে সাধারণ মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনাও লাফিয়ে বেড়েছে। বেড়েছে পাথর ছোড়ার উৎসাহও।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

উপত্যকার এই পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ ব্যক্ত করলেন শাহ ফয়জল। সেই কাশ্মীরি শাহ ফয়জল, যিনি আইএএস হওয়ার পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়ে নজর কেড়েছিলেন গোটা ভারতের। প্রতিশ্রুতিমান, উজ্জ্বল সেই আমলা এ বার নিজের হতাশা ব্যক্ত করলেন। ভারতের বর্তমান সরকারের কাশ্মীর নীতির সঙ্গে যে তিনি একেবারেই সহমত নন, তা এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে খুব স্পষ্ট করে জানালেন। ঘোষণা করে দিলেন, সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফার কথা। দেশ জুড়ে কট্টরবাদের রমরমা,পরমতে অসহিষ্ণুতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, দেশেরই এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে ক্রমশ পর করে দেওয়ার প্রবণতা— এ সব নিয়েই যে তাঁর আক্ষেপ, সে কথাও দ্বিধাহীন ভাবে জানিয়ে দিলেন।

আরও পড়ুন: ‘হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান, ভারতীয় মুসলিমদের দুরবস্থার প্রতিবাদেই পদত্যাগ’

এই কথাগুলোই তো বার বার শোনা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। এই কথাগুলোই তো বার বার উঠে আসছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। কখনও অমর্ত্য সেন, কখনও অরুন্ধতী রায়, কখনও আমির খান, কখনও রোমিলা থাপার, কখনও নাসিরুদ্দিন শাহ। এ বার শাহ ফয়জল। আক্ষেপ ব্যক্ত করে সরকারি চাকরি ছাড়লেন তিনি। কাশ্মীরি সংবাদমাধ্যম জানাল, শাহ ফয়জল এ বার সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখতে চলেছেন। কাশ্মীরের রাজনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ওমর আবদুল্লা তাঁকে স্বাগতও জানালেন। শাহ ফয়জলের মতো কোনও নাগরিক যদি রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান, তা হলে তাঁকে স্বাগত জানানোই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর আক্ষেপটা বলে দিচ্ছে, অনিন্দ্যসুন্দর কোনও সকালে এই সিদ্ধান্ত নিলেন না তিনি। বরং অন্ধকার কোনও সময় থেকে মুক্তির খোঁজেই এই পথে হাঁটতে বাধ্য হলেন।

ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি এখনও থমকে দাঁড়াবে না? শাহ ফয়জলের ইস্তফায় সরকার নড়ে গেল বা শাহ ফয়জল রাজনীতিতে পা রাখার কথা ঘোষণা করতেই দেশের অন্য সব রাজনৈতিক শক্তি বিপদের আভাস পেতে শুরু করল— বিষয়টা এমন নয়। কিন্তু শাহ ফয়জলের এই সিদ্ধান্ত একটা সূচক। এই কাশ্মীরি যুবক যে দিন আইএএস হওয়ার পরীক্ষায় গোটা দেশকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন, সে দিন তো আমরা অনেকেই এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছিলাম ঘটনাটাকে, একটা ইতিবাচক সূচক হিসেবে দেখেছিলাম ঘটনাটাকে। কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, কাশ্মীরের নাগরিকের সঙ্গে যে তামিলনাড়ুর বা অরুণাচলের বা গুজরাতের বা পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকের কোনও ফারাক নেই, কোথাও যে কোনও বৈষম্য বা অসমরূপতা নেই, সে কথা জোর দিয়ে বলার অবকাশ তৈরি হয়েছিল আমাদের অনেকের সামনেই। তা হলে আজ যখন সেই শাহ ফয়জলই ছেড়ে দিলেন ভারত সরকারের দেওয়া উচ্চপদ, তখন ঘটনাটার বিশেষ কোনও তাৎপর্য আমরা উপলব্ধি করব না কেন, এই ঘটনাটাকে একটা নেতিবাচক সূচক হিসেবে দেখব না কেন?

কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার অবকাশ নেই। কিন্তু কাশ্মীর তো শুধু একটা ভূখণ্ড নয়, কাশ্মীরের ধারণায় কাশ্মীরিরাও তো অবিচ্ছেদ্য। ভূখণ্ডটা যতটা আমাদের, বাসিন্দারাও তো ততটাই আমাদের। উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র আর নিরন্তর রক্তপাতের মাঝে কি তাঁদের আপন করে রাখতে পারবে রাষ্ট্র? বলপ্রয়োগ কি একমাত্র রাস্তা হতে পারে? হতে যে পারে না, শাহ ফয়জলের সিদ্ধান্ত তা আরও এক বার স্পষ্ট করে দিল।

এর পরেও কি থমকে দাঁড়াবেন না রাজনৈতিক নেতৃত্ব?

Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Jammu And Kashmir Shah Faesal Politics National Conference Omar Abdulla Newsletter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy