Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসা-বৈষম্য

মেয়েদের জন্ম তাহার বাপ-মায়ের নিকট অভিপ্রেত নহে যে দেশে, সে দেশে পরিবার তাহাদের সুস্থতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ব্যস্ত হইবে, প্রত্যাশা করিতে পারে কে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:২০
Share: Save:

যে পরিষেবা বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে লভ্য, তাহাও মেয়েদের অধরা থাকিয়া যায়। কারণ পরিষেবা পাইবার জন্য যে ব্যয় ও পরিশ্রম, তাহা করিতে নারাজ পরিবার। সম্প্রতি দিল্লির শীর্ষ স্তরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ‘এমস’ একটি সমীক্ষা করিয়া মেয়েদের চিকিৎসা-বঞ্চনার চিত্রটি ফের স্পষ্ট করিল। অস্থি, চক্ষু, চর্মের রোগ হইতে শল্যচিকিৎসা, হৃদ্‌রোগ, সকল বিষয়ে বহির্বিভাগে আগত রোগীদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় দেড়-দুইগুণ বেশি। হাসপাতাল হইতে রোগীর গৃহের দূরত্ব যত অধিক, মেয়েদের সংখ্যা ততই কম। বিহার হইতে আগত রোগীদের মধ্যে পুরুষ দ্বিগুণেরও বেশি, দিল্লিবাসীদের মধ্যে পুরুষ ১.৩ গুণ। ইহাতে স্পষ্ট, মহিলাদের চিকিৎসার খরচ যত অধিক হইবে, মেয়েদের চিকিৎসা পাইবার সম্ভাবনা ততই কমিবে। এই চিত্র যে কেবল ভারতে, এমন নহে। পাশ্চাত্যের দেশগুলিতেও মহিলাদের মধ্যে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি কিংবা বাইপাস অস্ত্রোপচার কম, এমনকি ঔষধের নিয়মিত ব্যবহারও কম। ফলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হইবার এক-দুই বৎসরের মধ্যে মেয়েদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক বেশি। ভারতেও পরিবারের বর্ষীয়সী মহিলার অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিবার পর পরিবার চলিয়া যায়, আর ফিরিয়া আসে না। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দেখাইয়াছে, ভারতে মেয়েদের চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু ব্যয় কত কম।

বিস্ময়কর কিছু নাই। মেয়েদের জন্ম তাহার বাপ-মায়ের নিকট অভিপ্রেত নহে যে দেশে, সে দেশে পরিবার তাহাদের সুস্থতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ব্যস্ত হইবে, প্রত্যাশা করিতে পারে কে? শিক্ষা-স্বাস্থ্য হইতে মজুরি কিংবা ব্যাঙ্কের ঋণ, যে কোনও সম্পদই মেয়েদের জন্য কিছু কম বরাদ্দ। প্রশ্ন হইল, সরকারি নীতি কী করিতেছে? স্বাস্থ্য কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রতি ন্যায় করিবার কী নীতি গ্রহণ করিয়াছে সরকার? তাহার বিবরণ মনে আশার সঞ্চার করিতে পারে না। ‘মেয়েদের স্বাস্থ্য’ বলিতে নীতিপ্রণেতারা বরাবর বুঝিয়াছেন, ‘স্ত্রীঅঙ্গগুলির স্বাস্থ্য’। প্রসূতির চিকিৎসা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের আলোচনা মেয়েদের স্বাস্থ্যপ্রসঙ্গের প্রায় নব্বই শতাংশ জুড়িয়া থাকে। মেয়েদের স্বাস্থ্যে সাফল্য বলিলে কেবল জননীর মৃত্যুহার কমাইবার সরকারি আস্ফালন কানে আসে। সম্প্রতি স্তন, জরায়ু কিংবা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার লইয়া কিছু প্রচার ও উদ্যোগ গৃহীত হইয়াছে। কিন্তু যক্ষ্মা, মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসনালীর সংক্রমণ প্রভৃতি অসুখগুলির কতটুকু চিকিৎসা মেয়েরা পাইতেছে, স্বল্পচিকিৎসা কিংবা অচিকিৎসায় মেয়েরা বিশেষ ভাবে বিপন্ন কি না, তাহার আলোচনা অদ্যাবধি সরকারি স্বাস্থ্য দফতরের আলোচনায় আসে নাই।

এমস-এর সমীক্ষকরা বলিয়াছেন, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গৃহের সন্নিকটে করিতে না পারিলে মেয়েদের চিকিৎসা-বঞ্চনা ঘুচিবে না। এই পরামর্শ যথাযথ, তাহাকে গুরুত্ব দিয়া গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে ও জেলা হাসপাতালগুলিকে পুনরায় উজ্জীবিত করা প্রয়োজন। তৎসহ কিশোরী ও তরুণীদের শরীরচর্চার বিষয়টিকেও আনিতে হইবে সরকারি নীতিতে। পরিবার মেয়েদের ঘরবন্দি করিয়া অস্বাস্থ্যকে আহ্বান করিতেছে। দৈনিক ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য এবং নিকটে সুচিকিৎসা স্বাস্থ্যনীতির লক্ষ্য হইলে তবেই মেয়েদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health AIMS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE