Advertisement
E-Paper

কুল-এর বাবা হট

যাব্বাবা, খারাপ ব্যবহার করব না? তাইলে মাচো হলাম কীসে? আমার যত্নে ট্রিম করা দাড়ি আমার হ্যান্ডসাম মুখে লেগে থাকে যে-রকম, সে-রকমই, বিদিশি ডিও-র ফুরফুর গন্ধের মতো, সেঁটে থাকে একটা ঔদ্ধত্য। ওইটেই আসল। বেশি ফটরফটর করলেই কানের গোড়ায় ঠাটিয়ে চড়িয়ে দেব— এই ভাবটাই আমার সেক্স অ্যাপিলের অঙ্গ! ওই জন্যেই আমাকে এই যুবসমাজের এমন হিস্টিরিক পছন্দ।

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৫ ০০:০৩

যাব্বাবা, খারাপ ব্যবহার করব না? তাইলে মাচো হলাম কীসে? আমার যত্নে ট্রিম করা দাড়ি আমার হ্যান্ডসাম মুখে লেগে থাকে যে-রকম, সে-রকমই, বিদিশি ডিও-র ফুরফুর গন্ধের মতো, সেঁটে থাকে একটা ঔদ্ধত্য। ওইটেই আসল। বেশি ফটরফটর করলেই কানের গোড়ায় ঠাটিয়ে চড়িয়ে দেব— এই ভাবটাই আমার সেক্স অ্যাপিলের অঙ্গ! ওই জন্যেই আমাকে এই যুবসমাজের এমন হিস্টিরিক পছন্দ। আগে গাওস্কর-দাদু ছিল, ঠুকে ঠুকে সেঞ্চুরি করত। মিনমিনে পাবলিক। তার পর তেন্ডুলকর-কাকু এল, বহুত ভাল খেলত, কিন্তু বস, অ্যাটিটুড নেই। আরে, পৃথিবীর সেরা প্লেয়ার হয়েছিস, কথায় কথায় খিস্তি কর, আম্পায়ারের দিকে তেড়ে যা। তা না, পুতুপুতু। কিন্তু আমি যেই দিগন্তে উদিত হলাম, লোকে বুঝে গেল, একটা স্টারের মতো স্টার উঠেছে। রেকর্ড তো করবই, এমন স্ট্রোক নেব যে কপিবুকের স্ট্রোক হয়ে যাবে, কিন্তু শুধু আশ্চর্য প্রতিভা দিয়ে আজকের যুবাযুবিকে হিপনোটাইজ করা যায় না বস। এরা যে জিনিসটায় মজে দই হয়ে যায়, তা হল অভদ্রতা।

ওঃ, অসভ্যতা না থাকলে, তেড়ে অপমান করার প্রতিভা না থাকলে, তুমি শালা মানুষই নয়। ভ্যাদভেদে মাল। নেট প্র্যাকটিস সেরে ফেরার পথে সব্বার সামনে ওই রিপোর্টারটাকে যা দিয়েছি না, ওর চোদ্দো পুরুষ নেতিয়ে নব্বই, হেদিয়ে হান্ড্রেড সেভেন। করব না কেন, ও যখন অনুষ্কা আর আমাকে নিয়ে রসালো স্টোরি ছাপছিল, তখন মনে ছিল না? সব হিসেব আমি সুদে-আসলে চুকিয়ে ছাড়ব। প্রতিটি ওয়ান-টু-ওয়ান মোকাবিলায় আমি অপমান করব, অন্যে অপমান সইবে। জেন-ওয়াই’কে জিজ্ঞেস করে দ্যাখো, এটাকেই স্মার্টনেস বলে। আমাকে ভদ্রতার জ্ঞান দিতে এসো না। ভদ্র মানে হচ্ছে ক্যালানে। যার মাস্লে জোর নেই, হেভি আমাশা, সে-ই ভদ্র হয়। যার রিয়েল দম আছে, সে উদুম গালাগাল দেবে, ঘিপিক ঘিপিক বিলো দ্য বেল্ট ঝাড়বে। আরে, একটা ক্যাচ ধরেও এমন অঙ্গভঙ্গি করতে হয়, যেন রক্ত খেয়ে উঠলি। বডি ট্যাটু-অলংকৃত, ব্রেন আর জিভ অশিক্ষিত— এই কম্বো নইলে ইয়ুথ আইকন হয়?

হ্যাঁ, ঠিকই, রিপোর্টারটার মুখ আমি গুলিয়ে ফেলেছিলাম, ও আদৌ স্টোরিটা লেখেনি, কিন্তু তাতে কী? অত জানতে-বুঝতে গেলে আমি ভাল ফেসওয়াশ মেখে স্টার হব কখন? ইনফর্মেশন জোগাড় করা আমার কাজ? আমি কি ফেলুদা? আরে, রিপোর্টারটা কিছু না কিছু তো জিন্দেগিতে নিশ্চয়ই লিখেছে, যা খারাপ? যার একটা পানিশমেন্ট দরকার? আর, ও না লিখলেও, যে আমাদের স্টোরিটা লিখেছে তার কাছে তো নির্ঘাত মেসেজটা পৌঁছে গেল! যে, এর পেছনে লাগতে এলে, ভরপুর ঝ্যাং! ব্যস। তা ছাড়া, আমি কী মহৎ, ক্ষমা ভি চেয়ে নিয়েছি! ভাবা যায়, হেয়ারস্টাইল বদলাচ্ছি, অ্যাড শুট করছি, স্পা-তে পা ঘষছি, সেই বিজি শিডিউলের মধ্যেও ক্ষমা চাইতে ভুলিনি! এ ট্যালেন্টের শেষ কোথায়?

হ্যাঁ, এটাও ঠিক, আমি নিজে সেই লোকটাকে গিয়ে সরি বলিনি, অন্য একটা রিপোর্টারকে দিয়ে বলে পাঠিয়েছি। তাতে কী? আমি কানে ধরে ক্ষমা চাইব? একটা স্টেটাস নেই আমার? দরকার হলে করেসপন্ডেন্স কোর্সে ক্ষমা চাইব রে! আর, ভায়া মিডিয়া সরি চাইলে ঝামেলা কীসের? যে বুড়োগুলো আমায় গাল পাড়ছে, তারা কলেজ লাইফে সব কে সব ভায়া মিডিয়া প্রেপোজ করেনি? একে-তাকে দূত করে চিরকুট লিখে পাঠায়নি, মাসতুতো ভাইকে গিয়ে বলেনি, প্লিজ তোর বোনকে বলিস ওকে আমি লভ করি? এ সব কিস্সা তো নিজেরাই কপচায়, শুড্ডাগুলোর মুখ দিয়ে তখন নস্টালজিয়ার শুদ্ধ লাল পড়ে!

দ্যাখো ভাই, আমি গৌতম গম্ভীরের দিকেও তেড়ে গেছি, ফোটোগ্রাফারদের সঙ্গে কুৎসিত গলাবাজি করেছি, সিডনির গ্যালারির দিকে অসভ্য আঙুল তুলে দেখিয়েছি। বেশ করেছি। আমি স্টার, আমি মানুষকে জানোয়ারের মতো ট্রিট করব। আমি বড়লোক, আমি সেক্সি, আমি ভগবানের মতো রাজ করব। যে আমার বিরুদ্ধে থাকবে— না, তা কেন— বিরুদ্ধে থাক আর না থাক, যার বদন দেখে আমার অপছন্দ হবে, যাকে দেখে মনে হবে এর পাছায় লাথি ঝাড়লে বহুত মজা হবে, তাকেই অপদস্থ করব। আমার যখন ব্যাড মুড, তোমার পার্ক করে রাখা গাড়িতে গুটখার পিক ফেলব। সেটাই স্মার্টনেস। এই কথাটা অনেক বার বললাম, না? বেশ করলাম। কিছু করতে পারবি? কী বললি? কেন এগুলো স্মার্টনেস? কেন মানুষকে ইনসাল্ট করার মধ্যে গৌরব আছে? আমার পোজিশন নিয়ে যদি আমার এত গর্ব, তা হলে আমি তার ডিগনিটি বজায় রাখতে জানি না কেন? আমি সেঞ্চুরি করে প্রেমিকাকে ফ্লাইং কিস ছুড়ব আর আমাকে নিয়ে গসিপ-স্টোরি হবে না কেন? আব্বে, তোর ঘিলুতে গোবর নাদা? আমি কোনও ‘কেন’-র পরোয়া করি না, অন্যকে নিচু করে উঁচু হই, সরল অংক বুইছিস না?

শোন ভাই, মানুষ স্পেশাল হয় কীসে? অ্যাটিটুড! বচ্চন এত নাম করেছিল কেন? উদ্ভট হাইট, দেখতেও কিস্যু ভাল না, তবু মেগা হল কী করে? রাগ! লাল লাল চোখ করে এমন তাকাবে, মনে হবে গোটা চরাচরের ওপর 24x7 খার খেয়ে আছে! এই খারের মতো অ্যাটিটুড আর নেই। ওতে বিপ্লবী ইমেজ জন্মায়। যে রেগে থাকে, লোকে তার টোস্টে এক্সট্রা মাখুম দেয়। ধোনির নাম কী? ক্যাপ্টেন কুল। আমাকে তো এক কাঠি ওপরে যেতে হবে। তাই আমি হচ্ছি ক্যাপ্টেন হট। কলার-এ এক্সট্রা মাড় দিয়ে তুলে রাখব। মুখটা এমন খিঁচিয়ে থাকব যেন খারাপ জায়গায় ফোঁড়া। টস থেকেই স্লেজিং করব। ছক্কা না মারতে পারলে ফ্রাস্ট্রেশনে উইকেটকিপারকে ব্যাট দিয়ে পেটাব। ও, ওর তো হেলমেট থাকে। তাইলে স্লিপের ফিল্ডারকে মার্ডার করব। পরে ওর রিলেটিভের কাছে সরি চেয়ে নেব। মানে, নিজে চাইব না, তা টুয়েলফ্থ ম্যান আছে কী করতে?

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়

post editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy