Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্কের দায়িত্ব

দিশা যথাযথ, গতি সংযত। এক কথায় বলিলে, ইহাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নূতন আর্থিক নীতির চরিত্র। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ফেব্রুয়ারির শেষে যখন নূতন অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করেন, সংশয় ছিল, রাজকোষ ঘাটতি ও জিডিপির অনুপাত তিনি ৩.৫ শতাংশের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় ধরিয়া রাখিতে পারিবেন কি না।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:১৬

দিশা যথাযথ, গতি সংযত। এক কথায় বলিলে, ইহাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নূতন আর্থিক নীতির চরিত্র। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ফেব্রুয়ারির শেষে যখন নূতন অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করেন, সংশয় ছিল, রাজকোষ ঘাটতি ও জিডিপির অনুপাত তিনি ৩.৫ শতাংশের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় ধরিয়া রাখিতে পারিবেন কি না। সেই কাজে তিনি সফল। তাহার অর্থ, সরকারি ঋণ নিয়ন্ত্রিত, অন্তত আপাতত। অন্য দিকে, মূল্যবৃদ্ধির গতিও অতীতের তুলনায় অনেকটা সীমিত। পাশাপাশি, শিল্প-বিনিয়োগে স্ফীতির কোনও লক্ষণ নাই, শিল্প-উৎপাদনে ভাটার টান কিছুটা ক্ষীণ বটে, কিন্তু জোয়ার এখনও দূর অস্ত্। সুতরাং অর্থমন্ত্রী হইতে শিল্পপতিবৃন্দ, সকলেই রঘুরাম রাজনের দিকে তাকাইয়া ছিলেন— তিনি যদি সুদের হার কমাইয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেন। সরকারি ব্যয় এবং মূল্যবৃদ্ধি যেহেতু নিয়ন্ত্রণে, সুতরাং সুদের হার কমিবার ফলে বিনিয়োগ ও ভোগব্যয়ের আকর্ষণে চাহিদা-বৃদ্ধি ঘটিলে বিপদ নাই, বরং লাভ— ইহাই সহজ যুক্তি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই যুক্তি নাকচ করে নাই, শিরোধার্যও করে নাই। গভর্নর রাজন রেপো রেট ঈষৎ (০.২৫ শতাংশ-বিন্দু) কমাইয়াছেন। ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিকট ঋণ লইলে রেপো রেট অনুযায়ী সুদ দিতে হয়। রাজনের নীতি ব্যাঙ্কগুলিকে সুদের হার কমাইবার সুযোগ দিবে। আবার, ব্যাঙ্কের হাতে ঋণদানের মতো নগদ অর্থের জোগান বাড়াইবার বন্দোবস্তও করিয়াছেন রাজন। এক কথায়, তাঁহার আর্থিক নীতি চাহিদায় উৎসাহ দিবার পক্ষেই সক্রিয়।

কিন্তু অর্থমন্ত্রী হইতে শিল্পবাণিজ্য মহল, কেহই এই নীতিতে যথেষ্ট সন্তুষ্ট বলিয়া মনে হয় না। সাধারণ ভাবে প্রত্যাশা ছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও অনেকটা কমাইবে, যাহাতে বাজারের চাহিদা আরও অনেকটা উৎসাহ পায়। রঘুরাম রাজন সেই আশা পূরণ করেন নাই। তিনি বলিয়াছেন, ভবিষ্যতে তিনি এই অভিমুখে আরও অগ্রসর হইতে প্রস্তুত, কিন্তু এখনই ইহার বেশি নহে। তাহার প্রথম ও প্রধান কারণ: মূল্যবৃদ্ধি। আপাতত বাজারদর প্রশমিত, কিন্তু যদি বর্ষা ভাল না হয় এবং পেট্রোল-সহ বিভিন্ন আমদানি-পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে দর বাড়িতে শুরু করে, তবে ভারতে তাহার প্রভাব পড়িবে, সুদের হার এবং ঋণের জোগানে রাশ ছাড়িয়া দিলে সেই প্রভাব সামাল দেওয়া কঠিন হইতে পারে। দুনিয়া জুড়িয়া কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এক নম্বর মাথাব্যথা মূল্যবৃদ্ধি, ভারতে তাহা আরও বেশি, কারণ এ দেশে মূল্যবৃদ্ধিকে অত্যন্ত ভয়ের চোখে দেখা হয়, তাহার সংগত কারণও আছে।

দ্বিতীয় একটি কারণও গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক কালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার যতটা কমাইয়াছে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি তাহাদের সুদের হার সেই অনুপাতে কমায় নাই, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাহাদের যে সুবিধা করিয়া দিয়াছে, সেই সুবিধা তাহারা ঋণদাতাদের কাছে ষোলো আনা পৌঁছাইয়া দেয় নাই, নিজেরা কিছুটা হস্তগত করিয়াছে। রঘুরাম রাজন আগেও ব্যাঙ্কের কর্তা-কর্ত্রীদের এই বিষয়ে তৎপর হইতে বলিয়াছেন, এ বারে তাঁহার অনুজ্ঞা আরও স্পষ্ট, আরও দৃঢ়। তাঁহার বক্তব্য সহজ: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কত শতাংশ সুদ কমাইল তাহা বড় কথা নহে, বড় কথা হইল ব্যাঙ্কের কাছে ঋণ লইলে সুদের হার কতটা কম করা হইতেছে। অর্থাৎ, আর্থিক নীতি কতটা বিনিয়োগ-বান্ধব, তাহার জবাব এখন ব্যাঙ্কের হাতে। এ বারের আর্থিক নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ইহাই।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy