Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

বয়স ও প্রেম

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:২৪

বয়স ও প্রেম

‘আগে ত্বক, পরে হক’ (২৩-২) শীর্ষক লেখাটি পড়ে মনে হল বৃদ্ধদের প্রেমের আকঙ্ক্ষাকে সম্মান ও সমর্থন করতে গিয়ে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য তাদের পিন্ডি চটকেছেন। ‘একটা কোনায় সোফার ওপর বেঁকেতেড়ে’ যে বুড়ো পড়ে থাকে কিংবা ‘মৃত্যুর ওয়েটিং রুমে বসে’ যে বুড়ো ঢোলে, তার শারীরিক বা মানসিক অবস্থা আর যাই হোক, প্রেম করার উপযোগী নয়। অবশ্য সরকারি ভাবে যাদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ বলা হয়, তাদের সম্পর্কে অন্তত এটুকু বলা যায় যে, তাদের অনেকের মনেই প্রেমের ধারা ‘হয়নি হারা’। অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সি নারীদের সঙ্গে তাদের প্রেম আকছার দেখা না-গেলেও একেবারেই যে ঘটে না বা ঘটতে দেওয়া হয় না, তা হয়তো ঠিক নয়। না-হলে টলস্টয় ‘আ হ্যাপি ম্যারেড লাইফ’-এর মতো গল্প লিখতে পারতেন না।

‘প্রেমের মধ্যে আত্মা শরীরকে ঘিরে থাকে’, স্তাঁদালের এই সংজ্ঞা নিটশের মনে হয়েছে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও যথাযথ। তাই দেহকে বাদ দিয়ে যে প্রেমের অস্তিত্ব নেই, এই কথাটা বয়স্কদের মতো ছোকরা প্রেমিকরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততই ভাল। অবশ্য এ কথা সত্যি যে বেশি বয়সে প্রেমে পড়া বিপজ্জনক শারীরিক ভাবে, মানসিক ভাবে, আর্থিক ভাবেও। শারীরিক ভাবে বলছি এই কারণে যে, সেই বয়সে দৈহিক সম্পর্ক নতুন করে সৃষ্টি হলে শরীর নানা রকম সংকটে পড়তে পারে। এমনকী মৃত্যুও হতে পারে। আলবের্তো মোরাভিয়ার ‘বিটার হানিমুন’ গল্পসংগ্রহে সেই বয়স্ক মানুষটিকে ভোলা যায় না, যে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে অল্পবয়সি প্রেমিকার সঙ্গে যৌন মিলনের উত্তেজনা সহ্য করতে না-পেরে মারা যায়। মানসিক ভাবেও এ সময় বৃদ্ধদের উপর নানা রকম চাপ আসে। বিবাহিত হলে স্ত্রী ছেলে মেয়ে ইত্যাদি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অবিবাহিত বা বিপত্নীক হলেও ছেলে/মেয়ে বা আত্মীয়স্বজনের চোখরাঙানির একটা ব্যাপার থেকে যায়। অনেকে তা উপেক্ষা করতে পারেন, অনেকে পারেন না। এ ছাড়া সত্যিই যদি কোনও বৃদ্ধ ব্যক্তি স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনও কমবয়সি নারীর সঙ্গে এতটাই সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন যে, বিয়ে বা একসঙ্গে থাকার সম্ভাবনা প্রকট হয়ে ওঠে, তা হলে পরিবারের আর্থিক কাঠামো তছনছ হয়ে যেতে পারে। মানুষটিকে হয়তো অন্য আশ্রয় খুঁজে নিতে হবে। টাকাপয়সার অনেকটাই পরিবারের লোক কেড়ে নিতে পারে। নতুন জীবন আর্থিক ভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

প্রেমে পড়লে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সে সম্ভাবনা আরও বেশি। অবশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বৃদ্ধ ও অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সি নারীর প্রেম স্থায়ী হয় না। কিছু দিন পরে মেয়েটিই সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে। কেননা, সেই সম্পর্কের মধ্যে সে নিজের ভবিষ্যৎ খুঁজে পায় না। কোনও কোনও বৃদ্ধের পক্ষে সেই বিচ্ছেদ সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। জীবনের অভিজ্ঞতা অবশ্য অনেক বৃদ্ধকে এই সময় শান্ত হতে শেখায়। রবীন্দ্রনাথের মতো সে-ও বিশ্বাস করার চেষ্টা করে, ‘জীবনে কতো বিচ্ছেদ, কতো মৃত্যু আছে’।

মনোজ ঘোষ। কলকাতা-৬১

ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব

‘ভ্যালেনটাইনে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ভ্রম হয়’ (১৬-২) চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধটিতে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ কথাটি তিন বার ব্যবহৃত হয়েছে প্রতি বারই ‘দানব’ অর্থে।

ফ্রাঙ্কেনস্টাইন কিন্তু কোনও দানবের নাম নয়। এটি ইংরেজ উপন্যাসকার মেরি শেলির (বিখ্যাত ইংরেজ কবি পি বি শেলির পত্নী) ১৮১৬-’১৮ সালে রচিত একই নামের রোমান্টিক উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। গল্পে আছে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন একটি হৃদয়হীন মানববেশী দানব সৃষ্টি করেছিল, যেটা পরে তার সৃষ্টিকর্তাকেই হত্যা করার উদ্দেশ্যে ক্রমাগত তাড়া করেছিল। তাই কথাটা হওয়া উচিত ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব’।

রোমান্টিক উপন্যাসের প্রধান রোমান্টিক নায়ককে দানব আখ্যা দিলে বেচারার প্রতি অবিচার করা হয়। যেমনটি প্রায়শই হয়ে থাকে পথে-ঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্তকারীদের ‘রোড রোমিয়ো’ আখ্যা দিয়ে। শেক্সপিয়রের অনবদ্য প্রেমের নাটক ‘রোমিয়ো ও জুলিয়েট’-এর নায়ক রোমিয়ো একনিষ্ঠ প্রেমের প্রতীক: সে জুলিয়েট ছাড়া অন কোনও মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এমন দৃষ্টান্ত ওই নাটকে নেই।

সঞ্জিত ঘটক। নরেন্দ্রপুর, কলকাতা-১০৩

editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy