Advertisement
E-Paper

অচলাবস্থার মধ্যেই পাশে দাঁড়াল প্রাক্তনী, যাদবপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অর্থ সাহায্য

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মূল পরিকাঠামো অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভাল। তাই তা মাথায় রেখে দেশের মধ্যে যাদবপুরকে আরও সামনের সারিতে এগিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে তাঁর।

সুচেতনা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২০
Jadavpur University

সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত, সনৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অধ্যাপক দীপঙ্কর সান্যাল। সংগৃহীত ছবি।

এতদিন তবু অস্থায়ী উপাচার্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ সামাল দেওয়া যাচ্ছিল যাদবপুরে। এখন সেই পদও খালি। অন্য দিকে, মাঝেমধ্যেই অভিযোগ শোনা যায়, গবেষণার কাজে কেন্দ্রের আর্থিক অনুদানও মিলছে না। এই অচলাবস্থার মধ্যেই খানিক স্বস্তির বাতাস। বরাবরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এক প্রাক্তনী। তার অর্থানুকূল্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার বা ল্যাব সংস্কার করা হয়েছে। শুক্রবার ছিল সেই নবনির্মিত ল্যাবেরই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

কলকাতাতেই বড় হওয়া। ১৯৮১ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সনৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিজের বিভাগ ঘুরে দেখতে গিয়ে হঠাৎই নজরে আসে বিভাগের সর্ববৃহৎ ইউনিট অপারেশন ল্যাবের জরাজীর্ণ অবস্থা। কোথাও দেওয়ালের চলতে খসে পড়েছে। আবার কোথাও জং ধরেছে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিতে। ছাত্রাবস্থায় যে ল্যাবে কেটেছে বহু সময়, সেখানকার এই দুরবস্থা দেখে মনটা খানিক খারাপই হয় মার্ক অ্যান্ড কোম্পানি ইঙ্ক ইউএসএ (অন্য দেশে এমএসডি নামে পরিচিত) ম্যানুফ্যাকচারিং প্রেসিডেন্টের। বর্তমান বাসস্থান আমেরিকায় ফিরে গিয়ে তাই নিজের কোম্পানির সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি) ফান্ডকে কাজে লাগানো ভাবনা মাথায় আসে তাঁর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, “গত বছরই সনৎ চট্টোপাধ্যায়ের সংস্থার সিএসআর প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি টাকা অর্থ সাহায্য পায় বিশ্ববিদ্যালয়। সেই অর্থকে কাজে লাগিয়েই মূলত গবেষণাগারের নির্মাণ, বৈদ্যুতিন এবং পরিকাঠামোর সার্বিক সংস্কার করা হয়। এ ছাড়া কিছু দামি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও কেনা হয়।”

নতুন রূপে ল্যাবকে দেখে উদ্বোধনী দিনে স্বভাবতই খুশি এই প্রাক্তনী। তাঁর কথায়, “আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ল্যাবসংস্কার শুধু প্রথম ধাপই বলা চলে। যে হেতু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ক্ষেত্রে যন্ত্রের উপর বেশ খানিকটা নির্ভর করতে হয়। তাই সেগুলির ‘আপগ্রেডেশন’ জরুরি। যাতে পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সেই সুযোগ পায়, তাঁর জন্য বিনিয়োগ করার ভাবনা রয়েছে।”

Sanat Chattopadhyay

সনৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা শুধু এখানেই থেমে থাকছে না। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মূল পরিকাঠামো অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভাল। তা মাথায় রেখে দেশের মধ্যে যাদবপুরকে আরও সামনের সারিতে এগিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে তাঁর। তবে এ বার শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নিয়ে কাজ করতে চাননা। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুস্থায়ী পরিবেশ গড়ে তোলা নিয়ে গবেষণাকেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। সনতের কথায়, “বর্তমানে পরিবেশের বিপন্নতা দূর করতে একটি গবেষণাকেন্দ্র গড়ার ইচ্ছে রয়েছে ভবিষ্যতে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে নানা ধরনের গবেষণার কাজ করবে। এর জন্য শুধু আমার সংস্থার সিএসআর অনুদান নয়, নিজের থেকে অর্থ সাহায্যের ইচ্ছেও রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, এখন বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকেও সিএসআর প্রকল্পের জন্য পরিবেশ নিয়ে কাজ করার উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন দেশের সরকার। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ পরিবেশ এবং সুস্থায়ী উন্নয়ন নিয়ে একযোগে কাজ করে, তা হলে নানা ধরনের উদ্ভাবনী কাজ হবে। তাঁর ইচ্ছে, শুধু গবেষণাতেই এই সেন্টারের কাজ আটকে না রেখে বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাধিক পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরাল বা অ্যাকাডেমিক-ইন্ডাস্ট্রি পার্টনারশিপের স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালুরও।

এ প্রসঙ্গে সহ উপাচার্য জানান, ‘সনত চট্টোপাধ্যায় রিসার্চ সেন্টার ফর সাস্টেনেবেল ডেভেলপমেন্ট’ আগামী এক বছরেই গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সেন্টারটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই হবে।

উল্লেখ্য, গবেষণাগার সংস্কার প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য ছাড়াও মেকানিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক দীপঙ্কর সান্যাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভাগীয় প্রধান চঞ্চল মণ্ডল অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সাত দিন অতিক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য পদে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে খানিক সমস্যাই হচ্ছে বলে জানান সহ উপাচার্য। পাশাপাশি বলেন, “এত অসুবিধার মধ্যেও আমরা গত অগস্টে কেন্দ্রের আরও একটি সংস্থা হায়ার এডুকেশন ফিন্যান্সিং এজেন্সি (এজেন্সি)-র অর্থসাহায্য পেয়েছি, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গবেষণার কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে আমাদের।”

Jadavpur University Sanat Chattopadhyay Research Centre for Sustainable Development Laboratory Renovation JU Alumni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy