সরকারি চাকরিতে কি আগ্রহ হারাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ? স্কুল সার্ভিস কমিশন আয়োজিত গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি শিক্ষাকর্মী নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদনের হার সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। ২০১৬-র তুলনায় এই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদনের হার অর্ধেকেরও কম।
হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে নিয়োগে গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি মিলিয়ে স্কুলে স্কুলে নিয়োগের জন্য প্রায় ১৮ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছিল। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অভিযোগে সে বারের গোটা প্যানেলই বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পর আদালতের নির্দেশেই এ বছর ফের পরীক্ষার আয়োজন করেছে এসএসসি। গত ৩ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চলবে। অর্থাৎ, হাতে রয়েছে মাত্র দিন পাঁচেক। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৮ লক্ষের কিছু বেশি আবেদন জমা পড়েছে, যা আগের বারের ৫০ শতাংশেরও কম।
আরও পড়ুন:
এ বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ স্কুল সার্ভিস কমিশন। কর্তৃপক্ষ এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। তবে, আবেদনের হার যে কম, তা মানছেন তাঁরাও। একই সঙ্গে শেষের কয়েকটি দিনে বেশ কিছু আবেদন জমা পড়তে পারে বলে মনে করছেন কর্তাদের একাংশ।
কিন্তু যতই আবেদন জমা পড়ুক না কেন, তা কোনও ভাবেই ২০১৬ নিয়োগ পরীক্ষার আবেদনের সমান হবে না, তা এক প্রকার ধরে নেওয়াই যায়। দীর্ঘ ৯ বছর পর শিক্ষাকর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এসএসসি। এত দিনে নতুন চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। রয়েছেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ প্রার্থীরাও। অথচ, আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে।
কমিশন সূত্রে খবর, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত যত আবেদন জমা পড়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই গ্রুপ-ডি কর্মী হিসাবে। এ দিকে গ্রুপ-সি বিভাগে এসএসসি ২৯৮৯টি শূন্যপদ রয়েছে বলে জানিয়েছে, গ্রুপ-ডি বিভাগে ৫৪৮৮ টি। মাধ্যমিক পাশ করলেই গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা।
কেন আবেদনের হার কমছে, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর জল্পনা। নতুন প্রজন্মের চাকরিপ্রার্থীরা রাজ্য সরকারি চাকরি প্রসঙ্গে খানিক দ্বিধায় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্নাতক ছাত্র সরকারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষায় তিনি বসতে রাজি নন। ওই ছাত্রের দাবি, “আরও ভাল করে পড়াশোনা করে তবে পরীক্ষায় বসতে চাই। কেন্দ্রীয় সরকারি পরীক্ষা রয়েছে। অন্য পরীক্ষাও রয়েছে। সময় নিয়ে চেষ্টা করব। অযথা জটিলতায় জড়াতে চাই না।”
আবার ২০১৬ প্যানেলের ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের একাংশ মনে করছেন, শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে গত এক বছরে যে জটিল তা তৈরি হয়েছে, তাতে নতুন প্রার্থীরা আবেদন করতে ভয় পাচ্ছেন। তাঁরা নিজেরাও আগ্রহ হারাচ্ছেন। গ্রুপ-সি ‘যোগ্য’ চাকরিহারা বিভাস ধর বলেন, “আমি নিজে আবেদন করেছি। তবে অনেকেই আস্থা হারিয়েছেন। গত এপ্রিল মাস থেকে বেতনহীন শিক্ষাকর্মীরা জীবনধারণের জন্য অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা অনেকেই আর আগ্রহী নন।”
এই পরীক্ষায় চিহ্নিত ‘অযোগ্য’রা কোনও ভাবেই আর পরীক্ষায় যোগ দিতে পারবেন না বলে ন নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই ‘অযোগ্য’দের তালিকা আগেই প্রকাশ করেছে এসএসসি। সেই অনুযায়ী মোট ৩,৫১২ জনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গ্রুপ-সি ১১৬৩ জন ও গ্রুপ-ডি ২৩৪৯ ‘অযোগ্য’ রয়েছেন।