রাজ্যের স্কুলগুলির গ্রন্থাগারে এ বার মুখ্যমন্ত্রীর বই। ২৩টি জেলাকে পাঁচটি সেট-এ ভাগ করে তালিকা পাঠানো হল জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছে । তালিকা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন লেখক লেখিকার সঙ্গে নাম রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। কেন লেখিকা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর বই গ্রন্থাগারে—প্রশ্ন শিক্ষক মহলে।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘রাজ্যের স্কুলগুলির গ্রন্থাগারের জন্য অর্থ অনুদানের পাশাপাশি ৫১৫টি বই গ্রন্থাগারে রাখার শর্ত দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে প্রায় ৯০টির কাছাকাছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা বই! আমরা নজিরবিহীন এই নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই শর্ত তুলে নিতে হবে।’’
যদিও এর ভিন্ন মত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি বিজন সরকার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখা নিয়ে অসুবিধা কোথায়! রাজনীতির পাশাপাশি কেউ সাহিত্যচর্চা করতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর বই অনেক বেশি বিক্রি হয়। অর্থাৎ পাঠকের চাহিদাও রয়েছে। পাঠক ঠিক করবে কার বই রাখা হবে কার রাখা হবে না। তাঁর বই রাখা নিয়ে অসুবিধা হওয়া কাম্য নয়’’।
রাজ্যের ২০২৬টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে মোট ২০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা গ্রান্ট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের জন্যে বরাদ্দ হয়েছে এক লক্ষ টাকা। এই অনুদান মূলত স্কুলে গ্রন্থাগার উন্নতির স্বার্থে শিক্ষা দফতরের তরফে দেওয়া হয়ে থাকে।
এ বার সেই গ্রন্থাগারে কী কী বই রাখা হবে তার একটি খসড়া পাঁচটি সেট-এ ভাগ করে পাঠানো হয়েছে ২৫টি স্কুল জেলাপরিদর্শকের কাছে। প্রতিটি সেট-এ ৫০০-র বেশি বইয়ের নাম রয়েছে। পাঁচটি সেটের মধ্যে আনন্দবাজার ডট কমের কাছে এসেছে দু’টি সেট। সেই দু’টি সেট-এ ‘মা’, ‘কথা’-সহ আরও একাধিক বইয়ের নাম রয়েছে। যেগুলি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর লেখা।
আরও পড়ুন:
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকাকালীন আমাদের রাজ্যের কোনও মুখমন্ত্রী তো দূরের কথা, ভারতের কোনও রাজ্যে এই দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এ ভাবে স্কুলগুলোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার।’’
সেট এক-এ উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা-সহ মোট আটটি জেলাকে তালিকা পাঠানো হয়ছে। সেট ২-এ রয়েছে পশ্চিম অঞ্চলের চারটি জেলা। সেট ৩-এ দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ আরও তিনটি জেলা। সেট ৪-এ কলকাতা-সহ আরও পাঁচটি জেলা এবং সেট ৫-এ রাখা হয়েছে রাজ্যের তিনটি জেলাকে। ওই সব ক’টি জেলাতেই পাঠানো তালিকা অনুযায়ী বই কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে। নারায়ণ দাস বাঙ্গুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘আমাদের গ্রন্থাগারে যে তালিকা পাঠানো হবে সেই বই-ই রাখতে হবে। তাতে যদি মুখ্যমন্ত্রীর বই থাকে, আমরা স্বাগত জানাই তাঁর বইকে’’।