দিকে দিকে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা নিট-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ সাফল্যের। একবার রাজস্থানের কোটা-র মতো কোনও সেন্টার থেকে সফল পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়লেই ভিড় বাড়তে থাকছে সেখানে। তাই এ বার টিউশনকেন্দ্রিক প্রস্তুতির গুরুত্ব কমাতে তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার।
সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর খবর, জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজ়ামিনেশন (জেইই) এবং ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট)-এর মতো ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যালের প্রবেশিকাগুলি কতটা কঠিন, তা খতিয়ে দেখবে কেন্দ্র। সর্বভারতীয় এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল বোর্ডের দ্বাদশের পাঠ্যক্রমের সামঞ্জস্য রয়েছে কিনা, তা যাচাই করে দেখবে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি।
জানা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়াদের অভিভাবক এবং বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, জাতীয় স্তরের এই প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে দ্বাদশের পাঠ্যক্রমের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন পরীক্ষায় পাশ করার জন্য টিউশন বা কোচিং সেন্টার-ই তাদের কাছে ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। তাই এ বার সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখতেই উদ্যোগী কেন্দ্র।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে ইতিমধ্যেই নয় সদস্যের প্যানেল গঠন করা হয়েছে। তারা দেশে একাধিক কোচিং সেন্টারের রমরমা, ‘ডামি স্কুল’ গড়ে ওঠা এবং প্রবেশিকা পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং গুরুত্বের দিকগুলি খতিয়ে দেখছে। প্যানেলে মুখ্য পদে রয়েছেন কেন্দ্রের উচ্চশিক্ষা সচিব বিনিত জোশি। এ ছাড়াও রয়েছেন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-র চেয়ারম্যান, আইআইটি মাদ্রাজ, এনআইটি ত্রিচি, আইআইটি কানপুর, এনসিইআরটি-র প্রতিনিধিরা এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, নবোদয় বিদ্যালয় এবং বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষেরা।
কমিটির তরফে কোচিং সেন্টারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার জন্য বর্তমান স্কুল শিক্ষাব্যবস্থায় কোথায় ফাঁক রয়ে যাচ্ছে, তা বিবেচনা করা দেখা হচ্ছে। পড়ুয়াদের মধ্যে বই মুখস্থ করার প্রবণতার বদলে কী ভাবে বিশ্লেষণাত্মক, যৌক্তিক, সমালোচনামূলক এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটানো যায়, তা-ও খতিয়ে দেখবে এই কমিটি।
অনেকেই ভাবেন ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যালে উচ্চশিক্ষা না করলে, তাঁদের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। অথবা তথাকথিত নামী কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা না করতে পারলেও তাদের জীবনে আধার নেমে আসবে। এ সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা দূর করতেও উদ্যোগী এই কমিটি। স্কুল পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য বিভিন্ন পেশা বা কেরিয়ারের খুটিনাটি নিয়ে কেরিয়ার কাউন্সেলিং এবং কেরিয়ার গাইডেন্স ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলারও চেষ্টা করবে এই কমিটি।
উল্লেখ্য, দেশের কিছু নামী কোচিং সেন্টার গত কয়েক বছরে বেশ কিছু বিতর্কের কারণে খবরের শিরোনামে এসেছে। কখনও পড়ুয়াদের আত্মহত্যা, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব, আবার কখনও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা, সেন্টারে শিক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। এর পর কেন্দ্রের এই নয়া পদক্ষেপকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন শিক্ষকমহলের অনেকে।