ইতিহাসের পাঠ, কেমন হবে, কী লিখবে— গত কয়েক বছরে উস্কে উঠেছে নানা প্রশ্ন। তৈরি হয়েছে বিতর্ক। পাঠ্যতালিকা থেকে একের পর এক অধ্যায় বাদ পড়া নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। এ বার রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করে যেন সেই বিতর্কেই ঘৃতাহুতি দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। জানা গিয়েছে, আগামী ৩০ অগস্ট রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষকদের জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে পর্ষদ। এ জন্য ইচ্ছুক শিক্ষকদের আলাদা করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
পর্ষদের এই উদ্যোগে সংশয় প্রকাশ করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ইতিহাস-ভূগোলের মতো বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাঁরা শিক্ষকতা করছেন, তাঁদের জন্য আলাদা করে কর্মশালার কী প্রয়োজন? আসানসোলের হীরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য বলেন, “সাম্প্রতিক কালে এনসিইআরটি-র (রাষ্ট্রীয় শিক্ষা অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ পরিষদ)-র তরফে পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস যে ভাবে নতুন করে লেখা হয়েছে, তাতেই যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। এখন রাজ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাধ্যমে খানিকটা গা বাঁচিয়েই পাঠদানের চেষ্টা করছে। তাই এই প্রশিক্ষণ।”
আরও পড়ুন:
তবে পর্ষদ সচিব সুব্রত ঘোষ জানিয়েছেন, এই কর্মশালার আয়োজন নতুন বিষয় নয়। নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান সংক্রান্ত কর্মশালার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য। এ বারের এক দিনের কর্মশালাটি বঙ্গীয় ইতিহাস সমিতির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে। ভারতীয় ইতিহাস নিয়ে পাঠদান সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মশালাটি হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এনসিইআরটি-র নির্দেশিকা মেনেই ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশের পাঠ্যক্রমে মোগল যুগ, ডারউইনের বিবর্তনবাদ, নারী আন্দোলনের ইতিহাস, ভারতের সামাজিক বৈষম্যের মতো বিষয় বাদ পড়েছে। এ নিয়ে শিক্ষামহলে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যদিও কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, পড়ুয়াদের উপর অকারণ চাপ কমাতেই এই রদবদল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতিহাসের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, আপাতদৃষ্টিতে এই পদক্ষেপে আপত্তিজনক কিছু নেই বললেই চলে। কিন্তু নিরীহ এই কর্মশালা আদতে ততটাও নিরীহ নয় বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “ইতিহাস কোনও নতুন বিষয় নয়, তা হলে পাঠদানের পদ্ধতিতে নতুন করে শেখার কী থাকতে পারে? সংশয় হয়, দেশের প্রকৃত ইতিহাস যাতে পড়ুয়ারা জানতে না পারে, তারই প্রচেষ্টা হিসাবে এই কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে না তো?”
পর্ষদ অবশ্য সাফ জানিয়েছে, এর মধ্যে কোনও বিতর্ক নেই। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতি বছর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে কর্মশালা করানো হয়। এটাও তেমনই একটি প্রশিক্ষণের বিষয়।