Advertisement
E-Paper

চাইলেও আর ফিরে আসবে না ছোটবেলার পুজো, এখন শুধু থিম আর বাণিজ্যের বাড়াবাড়ি: ব্রাত্য

এখন সবই থিম ভিত্তিক, পুজোর মণ্ডপ থেকে খাওয়াদাওয়া— সব কিছুতেই থিম। আসল বিষয় হল বাণিজ্য। হয়তো এই বদলটার সঙ্গে খুব বেশি মানিয়ে নিতে পারি না।

ব্রাত্য বসু

ব্রাত্য বসু

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৫৯
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

পুজোর স্মৃতি বললেই আমার মনে পড়ে থিয়েটারের কথা। পুজোর আগে থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে নাটকের মহড়া দিতাম। নানা বয়সের বন্ধু। কেউ পড়ত আইআইটি খড়্গপুরে, কেউ মেডিক্যাল কলেজে, কেউ প্রেসিডেন্সিতে। পুজোর ছুটিতে সকলেই মেতে উঠত নাটকে। আর ছিল রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া।

এখন সবই থিম ভিত্তিক, পুজোর মণ্ডপ থেকে খাওয়াদাওয়া— সব কিছুতেই থিম। আসল বিষয় হল বাণিজ্য। হয়তো এই বদলটার সঙ্গে খুব বেশি মানিয়ে নিতে পারি না। থিমের পুজো হয়, উদ্বোধন করি, আমার পাড়ার একটি পুজোর থিমের পরিকল্পনাও করেছি আমি। কিন্তু সে সবই পেশাগত বা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।মনের মতো পুজো ছিল ছোটবেলায়। তখন বেশির ভাগ সময়টাই কাটত মামার বাড়ি, দক্ষিণেশ্বরে আর পৈতৃকবাড়ি বাড়ি, আড়িয়াদহে। গোটা পুজোয় দাপিয়ে বেড়াতাম ক্যাপ-বন্দুক নিয়ে।

১২-১৪ বছর বয়সে আমরা চলে আসি কালিন্দীতে। সে সময়ে আমার বাবা এবং পাড়ার অন্যদের উদ্যোগে শুরু হয় পুজো। লেকটাউন তখনও উত্তর ২৪ পরগনা। তাই পুজোর আনন্দ বলতে ছিল, বিশেষ ছাড়পত্র— বন্ধুদের সঙ্গে বিরিয়ানি, মোঘলাই খেতে যাওয়া। কলকাতার হোটেলে। এখন তো খেতে যাওয়া মানেই কোন‌ও বড় থিম ভিত্তিক রেস্তোরাঁ। স্প্যানিশ, ল্যাতিন আমেরিকান, ইউরোপিয়ান খাবারদাবার। আমাদের সময় সাবির, রয়্যাল বা আমিনিয়াই ছিল শ্রেষ্ঠ। পুজোয় এক দিন বন্ধুরা চাঁদা তুলে খেতাম।

কলকাতার কোনও পুজোতেই তখন এমন জাঁকজমক ছিল না। পাড়ায় পুজোয় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে নাচ-গান, নাটক করানো হত। এ সব করেই কেটে যেত পাঁচটা দিন। সেই সব সাবেকি, বাঙালিয়ানা ভরপুর পুজো ধীরে ধীরে বদলে গেল থিম পুজোয়। এখন‌ও হয়তো কোথাও কোথাও সংস্কৃতি অনুষ্ঠান হয়। ছোটদের নাটক মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু আগের মতো হুড়োহুড়িটা নেই।সেই সময়ে ছোট থেকে বড় সকলে অপেক্ষা করে থাকত, এ বার পুজোয় কোন‌ নাটক হবে! যারা যোগ দিত তারা সকলেই ১৫ থেকে ২২।

ছ’সাত বছর এটা খুব ভাল ভাবে করেছি। আশপাশের বহু মানুষ আমাদের এই পাড়ায় পুজোর নাটক দেখতে আসতেন। কিন্তু এরই মধ্যে দেখলাম বাঙালি-অবাঙালি গোষ্ঠীর আবির্ভাব। পরবর্তীকালে এই থিয়েটার গোষ্ঠীর ভাগাভাগি দেখেছি আমরা। এখানে বাঙালি কমে আসছিল। বাণিজ্যিক থিয়েটারের কদর বাড়ছিল। তবে একদল ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ও ছিলেন। তাঁরা শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ‘চাপা পড়া মানুষ’, ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ ও ‘সাগিনা মাহাতো’র মতো নাটক করতে।তবে সময় যত গড়িয়েছে, তত সাবিকেয়ানা পিছিয়ে পড়েছে। নতুন প্রজন্ম আর আগ্রহ দেখায়নি পাড়ার নাটকে।

তাই এক সময়ে পুজোর থিয়েটার চর্চা বন্ধই হয়ে গেল। প্রাধান্য পেলে ঊষা উত্থুপের বা ব্যান্ডের গান।আসলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে আনন্দের উপকরণ অনেক বেশি। আমাদের সময় আনন্দ বলতে ছিল, পাঁচ দিনের স্বাধীনতা। যে মেয়েটিকে কোনও দিন দেখা যায় না রাস্তায়। তাঁকে হঠাৎ দেখতে পাওয়া।বয়স বেড়েছে তত পুজো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। জীবনে এসেছে গ্রুপ থিয়েটার। আর পুজোর সময়ে বেড়াতে চলে যাওয়া। এই কলকাতার ভিড় থেকে দূরে থাকা— কখন‌ও হাজারিবাগ, কখন‌ও ঘাটশিলা।আমি চাইলেই পুরনো সব দিন ফিরে আসবে না। কলকাতার সিংহীবাড়ি বা বাগবাজারে ধুতি পাঞ্জাবি পরে অষ্টমীর সকালে অঞ্জলি দেওয়া আর ফিরবে না।

Bratya Basu Durga Puja Pandel theme
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy