Advertisement
E-Paper

রাজ্য জয়েন্টের ফল প্রকাশে বিলম্ব! পঠনপাঠনে পিছিয়ে যেতে পারেন পড়ুয়ারা, আশঙ্কা শিক্ষামহলের

ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, আর্কিটেকচার এবং ফার্মাসি শাখায় স্নাতকে ভর্তির প্রক্রিয়া থমকে থাকায় একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ১৯:০৩
Experts fear that students will have trouble getting good jobs.

ভাল চাকরি পেতে সমস্যায় পড়বেন পড়ুয়ারা, আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতীকী চিত্র।

রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে থমকে রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, আর্কিটেকচার এবং ফার্মাসি শাখায় স্নাতকে ভর্তির প্রক্রিয়া। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, এর ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে রাজ্য সরকারকে। পাশাপাশি সমস্যায় পড়বে পড়ুয়ারাও।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, “বেশির ভাগ পড়ুয়াই ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। তাই মেধার অভাব তো বটেই, আর্থিক ভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে রাজ্যকে। পরিস্থিতি যা তৈরি হচ্ছে, তাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বরাদ্দ আসনগুলি শূন্য থেকে যাবে।” ছাত্র পিছু এই সমস্ত আসন সংরক্ষণেই লক্ষাধিক অর্থ ব্যয় করে রাজ্য। শূন্য আসনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে না পারলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার একাধিক বিষয়ে ছাত্র ভর্তি না হওয়ায় কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল। দুর্গাপুজোর আগেও ভর্তি প্রক্রিয়া জারি ছিল। এ বার এখনও ফল প্রকাশ হয়নি। শিক্ষামহলের একাংশের আশঙ্কা, তা হলে এ বার কাউন্সেলিং কি ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়াবে? ক্লাস-ই বা কবে শুরু হবে?

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় স্তরের বেশির ভাগ প্রবেশিকার ফল ঘোষণা হয়ে যাওয়ায়, ভিন্‌রাজ্যে কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেকেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন। যে সব পড়ুয়া রাজ্য ছাড়ছেন, তাঁদের অনেকেই সর্বভারতীয় স্তরে নজরকাড়া ফল করেছেন। অর্থাৎ, নম্বরের নিরিখে মেধা তালিকার উপরেই তাঁরা। সেই পড়ুয়ারা ভর্তি না হতে পারলে, আখেরে মেধা উৎকর্ষতায় পিছিয়ে পড়বে রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলি।

চাকরির বাজারেও পড়বে প্রভাব:

চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের মতে, নম্বরের নিরিখে মেধা তালিকার শীর্ষে থাকা পড়ুয়ারা রাজ্যের বাইরে। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে র‌্যাঙ্ক লিস্টের নীচের সারিতে থাকা পড়ুয়ারা দেরিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। ফলে পড়াশোনা শেষ করতে যেমন সময় লাগবে, তেমনই কাজের বাজারে ভাল সুযোগও হাতছাড়া হতে পারে। পার্থপ্রতিম বিশ্বাস জানিয়েছেন, বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা থেকে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ স্নাতক চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মেধার নিরিখে বড় বেতনের চাকরি পাওয়ার সুযোগও কমার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চাকরির বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রমরমা:

বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের অভিযোগ, ‘প্রভিশনাল অ্যাডমিশন’-এর আড়ালে বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, আর্কিটেকচার এবং ফার্মাসি শাখায় স্নাতকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে ফেলেছে। কিন্তু ক্লাস শুরু হয়নি কোনও প্রতিষ্ঠানেই।

অন্য দিকে অনেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে জয়েন্টের রেজ়াল্টের নিরিখে ভর্তি হওয়ার অপেক্ষা করলেও একই সঙ্গে তাঁরা ডিগ্রি কলেজগুলিতেও ভর্তির আবেদন জানান। যাতে জয়েন্টের ফল আশানুরূপ না হলে, ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করার সুযোগ থাকে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন পড়ুয়ারা শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হন। এর জেরে স্নাতক স্তরে ডিগ্রি কলেজগুলিতে ফের শূন্য আসন তৈরি হয়, যার ফলে শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কলেজগুলিকে।

শিক্ষামহলের একাংশ রাজ্যের পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও বিষয়টিকে ইতিবাচক নজরেই দেখছেন জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক পার্থ কর্মকার। তিনি বলেন, “ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার জন্য মেধার উৎকর্ষ বাড়বে বই কমবে না। সরকারি কলেজে খরচ কম, তাই রাজ্যের বাইরের কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে গেলেও মেধাবীরা রাজ্যেই ফিরে আসবেই। রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলিতে যদি সত্যি সত্যি আসন ফাঁকা থাকত, তা হলে পুরুলিয়া এবং কোচবিহারে নতুন করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চালু করা হত না। তাই এই নিয়ে অযথা চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই, যথাসময়েই সব শুরু হবে।”

কবে জয়েন্টের ফল প্রকাশিত হবে, তা নিয়ে শিক্ষামহলের মধ্যে দ্বন্দ তৈরি হলেও চিন্তা কমছে না পরীক্ষার্থীদের। দিন ঘোষণার অপেক্ষায় রাজ্যের কয়েক লক্ষ পড়ুয়া।

WBJEE 2025 OBC Reservation in Admission 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy